টাকার গরমে নতুন বউ
কুদ্দুস বিশ্বাস, রৌমারী (কুড়িগ্রাম): ‘মা’র নামের ৫ কাঠা সম্পত্তি বেইচা গেদির বাপেক বিদেশ যাবার দেড় লাখ ট্যাহা দিছি। হেই ট্যাহায় বিদেশ যাইয়া ট্যাহা কামাই কইরা ৮বছর পর বাড়িত আইছে। আইসা আমার ও পোলাপানের হাতে (সঙ্গে) ভালা কইরা কতা কয় না। আমাক মাইরা বাড়িত থিকা বাইর কইরা দিছে। বাড়িত আমাক, আমার পোলাপানকে ঢুকবার দেয় না। বাড়ির গেটে, ঘরে তালা দিয়া রাখে। আমাকে না জানাইয়া নতুন এডা বিয়া কইরা বাড়িত আনছে। তহন থিকা আমার দুই বাচ্চা নিয়া বাড়ির গেটে আছি।’ কথাগুলো বলছিলেন রহিমা বেগম (২৮)। রৌমারী উপজেলার দুর্গম মিয়ারচরে রহিমার স্বামীর বাড়ির গেটে কথা হয় তার সঙ্গে। আজ রবিবার দুপুরের দিকে কথা বলার পর জানা গেল, গত ৬ দিন (মঙ্গলবার) রহিমা বেগম তার দুই সন্তান নিয়ে অধিকারের দাবিতে স্বামীর বাড়ির গেটে অবস্থান করছে।
উপজেলার মিয়ারচর গ্রামের ময়চান আলীর পুত্র নুর মোহাম্মদের সঙ্গে রহিমা বেগমের বিয়ে হয় প্রায় ১৫ বছর আগে। তাদের ঘরে দুই সন্তান অন্তরা আক্তার এ বছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে আর জাকির হোসেন পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। বিয়ের কয়েক বছর পর ৮ বছর আগে নুর মোহাম্মদ মালদ্বীপ পাড়ি দেয় আয় রোজগারের জন্য। বিদেশ যাওয়ার খরচ বহন করা হয় রহিমা বেগমের মায়ের সম্পত্তি বিক্রি করে। এই আট বছর নুর মোহাম্মদ একবারও দেশে আসেনি। তবে মাঝে মাঝে স্ত্রী সন্তানের খোঁজখবর নিয়েছে বলে জানা গেছে।
স্বামীর বাড়ির সামনে অবস্থানরত রহিমা বেগম বলেন, ‘এহন আমার দুই সন্তান নিয়া কটাই যামু। যেটুকু সম্পদ ছিল তাও বেইচা দিছি। এহন আমার যাহনের কোনো জায়গা নাই। তাছাড়া দুইডা বাচ্চা আছে তাগরে খাবার দিমু কই থেকে। হেই জন্য বাচ্চা দুইটা নিয়া বাড়ির গেটে আছি। এহানেই আইত কাটাই। যদি স্বামী আমাকে আমার সন্তানকে ঘরে না তোলে তাহলে ছেলেমেয়েসহ আমি বিষ খাইরা মইরা থাকমু। ৫দিন ধইরা খাইয়া না খাইয়া পইরা আছি। গেরামের মাইনসে খাবার দেয়। আর কয়দিন দেখমু। কোনো সুরাহা না হইলে বিষ খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই আমার।’
গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, বিদেশে অবস্থান করে অনেক টাকা রোজগার করেছেন নুর মোহাম্মদ। আট বছর একটানা বিদেশ খাটবার পর গত চার মাসে আগে দেশে ফেরেন তিনি। এখন আগের চেয়ে বহুগুন আপডেট হয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তার চলাফেরা ও জীবন যাপনেও পরিবর্তন আসে। আধুনিকতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলে সে। নিজে শিক্ষিত না হলেও এখন আর তার অশিক্ষিত স্ত্রীকে ভালো লাগে না। তাছাড়া এখন তার টাকার গরমও রয়েছে। আর টাকার এই গরমের কারণেই তিনি এখন আগের বৌয়ের বদলে নতুন একটা বিয়ে করেছেন।
ওই এলাকার কলেজ শিক্ষক হুমায়ুন কবীর, ইউপি মেম্বার নুর হোসেন, আব্দুল হামিদ ও মোত্তালিব হোসেন জানান, নুর মোহাম্মদ বিদেশ থেকে এসে টাকার গরমে নিজের স্ত্রী সন্তানদের কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে একই উপজেলার দাঁতভাঙ্গা এলাকার ৭ম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে বিয়ে করেন। গত মঙ্গলবার নতুন বউকে বাড়িতে তোলেন। এখবর পেয়ে রহিমা বেগম তার দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ির গেটে অবস্থান নেয়। আমরা বিষয়টা নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেও কোনো সমাধান আনতে পারিনি। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি ওই বউকে তালাক দিয়া দিছি। ও এখন আমার কেউ না। ও’কে আর আমি নিব না। এতে কত টাকা খরচ হয় হবো আমার।’ দুই শিশু সন্তান এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুই ছেলেমেয়ের ভরনপোষণের খরচ আমি দিব তা আদালতের মাধ্যমে দিব। এমনিতে এক টাকাও দিব না।’ বিদেশ যাওয়ার খরচ হিসেবে শ্বশুর বাড়ির নেওয়া দেড় লাখ টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই টাকা শোধ কইরা দিছি।’
রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্র্জ (ওসি, তদন্ত) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এধরনের কোনো ঘটনা আমাদের জানা নেই। কেউ অভিযোগও করেনি। থানার কোনও এসআই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কিনা আমার জানা নেই।’-কালের কণ্ঠ
২০ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের রাসেল