শীতের তীব্রতা আরো বাড়তে পারে
নিউজ ডেস্ক : পৌষের শুরুতে দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। এর তীব্রতা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে মাঝারি ধরনের এবং জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বড় ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, দিনপঞ্জির হিসাবে দুই মাস শীত মৌসুম থাকলেও এবার ঠা-া থাকতে পারে এক মাস। ঢাকার বাইরে কিছুদিন ধরে শীত পড়লেও রাজধানীতে শীত পড়েছে দুই-তিন দিন ধরে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস মতে, আগামী কয়েকদিন শীতের এই তীব্রতা আরো বাড়তে থাকবে। পৌষ যতই মাঘের দিকে এগিয়ে যেতে থাকবে, শীতের তীব্রতা ততই বাড়তে থাকবে। আগামী এক সপ্তাহ শীত বাড়তে থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া কর্মকর্তারা। তারা জানান, রাতে তাপমাত্রা কমে ভোরের দিকে রাজধানীতে কুয়াশা পড়ছে।
অন্যদিকে, প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে শীত এলেও এই ঋতু যেন নগরীর ভাসমান মানুষের জন্য অবর্ণনীয় কষ্ট সঙ্গে নিয়ে আসে। শীতের আমেজ উপভোগের সুযোগ নেই তাদের জীবনে। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে বাড়ে শীতের তীব্রতা। তাই ফুটপাত, রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম এবং ফুটওভারব্রিজে ঘুমিয়ে থাকা ভাসমান মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।
এসব সহায়-সম্বলহীনের অনেকেই মশারি, চটের ব্যাগ এবং ছেড়া কাঁথা দিয়ে কোনোমতে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় রাজপথ এবং অলিগলিতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতেও দেখা যায় ছিন্নমূল মানুষকে।
ঢাকার কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে জানা গেছে, শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি ও নিউমোনিয়ার মতো রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। ঢাকা শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের মধ্যে বেশিরভাগই নিউমোনিয়া ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। বড়দের মধ্যেও সর্দি, কাশি, জ্বর এবং হাঁপানির প্রকোপ বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বিশেষজ্ঞরা জানান, শীতে ধুলাবালির কারণে ঢাকায় শ্বাসকষ্টের রোগীও বাড়ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বছরের অন্যান্য সময়ের (এপ্রিল-অক্টোবর) তুলনায় শীতে (নভেম্বর-মার্চ) বায়ুদূষণের মাত্রা (পিএম-২.৫-এর নিরিখে) বাড়ে প্রায় ৫ গুণ।
এ সময় বাতাসে সবচেয়ে ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা (পার্টিকেল ম্যাটার-২.৫ বা পিএম ২.৫) অস্বাভাবিক মাত্রায় থাকে। অপেক্ষাকৃত স্থূল বস্তুকণা পিএম-১০-এর মাত্রাও অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতে অনেক বেশি থাকে। এসবের কারণে শীতে হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়ে।
অন্যদিকে, শীত জেঁকে বসায় ঢাকায় জমে উঠেছে শীতবস্ত্রের বাজার। ফুটপাতের দোকান থেকে শুরু করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিপণি বিতান_ সর্বত্রই বেড়েছে ক্রেতা সমাগম। ফার্মগেট, গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, নিউ মার্কেট এবং ঢাকা কলেজের সামনে প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের শীতবস্ত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। স্বল্প আয়ের মানুষ, এমনকি মধ্যবিত্তদেরও ভরসাস্থল এসব দোকান।
কয়েকজন দোকানি জানান, গত বছর নভেম্বরেই জমে ওঠে শীতবস্ত্রের বিক্রি। এবার শীত দেরিতে পড়ায় ডিসেম্বরের শেষদিকে বিক্রি বাড়ার আশা তাদের। তবে প্রতিদিনই বিক্রি বাড়ছে। বাজারে আছে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র। গতবারের তুলনায় এবার সব ধরনের কাপড়ের দাম কিছুটা বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পুরুষদের সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ২৫০০ টাকায়, নারীদের সোয়েটার ১৫০ থেকে ২০০০ টাকায়, জ্যাকেট ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায়। মাংকি ক্যাপ, মাফলার এবং গ্লাভস পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকায়।
রুচির সঙ্গে মানানসই শীতবস্ত্রের খোঁজে অনেকেই ঘুরছেন রং বৈচিত্র্যের শালের দোকানে। চায়না, কাশ্মীরি এবং দেশি_ এই তিনের মধ্য থেকে ক্রেতারা বেছে নিচ্ছেন পছন্দেরটি। দোকানিরা জানান, এসব শালের সর্বোচ্চ দাম রাখা হচ্ছে ১৫০০ টাকা।
ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে অনেক দোকানি মেলে ধরছেন কিংস্টার, সোলারন, ডলফিন, গোল্ডেন বিয়ার_ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কম্বল। যে কোনো ব্র্যান্ডের সিঙ্গল সাইজের একটি কম্বল বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায়। মাঝারি সাইজের ২০০০ থেকে ৩০০০ এবং ফ্যামিলি সাইজ কম্বলের দাম পড়ছে ২৫০০ থেকে ৮০০০ টাকা। বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে বেশিরভাগ ক্রেতাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকার।
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত কয়েকদিন ধরেই তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় চা-বাগান এলাকাসহ জেলার গ্রামাঞ্চল এবং শহরের মানুষ তীব্র শীতে কষ্ট পাচ্ছে। বৃদ্ধ ও শিশুরা ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার হারুনুর রশীদ জানান, উত্তরের বাতাস ভারত থেকে এই অঞ্চলে আসায় শৈত্যপ্রবাহ চলছে। পুরো সপ্তাহজুড়ে এই শৈত্যপ্রবাহ চলবে। জানুয়ারি পর্যন্ত তাপমাত্রা ওঠানামা করবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. বিনেন্দু ভৌমিক জানান, তীব্র শীতের কারণে বৃদ্ধ ও শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। শিশুরা ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বৃদ্ধরা কোমরব্যথাসহ বিভিন্ন উপসর্গে কষ্ট পাচ্ছে।
এদিকে, হাওরাঞ্চলে খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। গরিব-দুস্থরা শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে। লোকালয়ে মানুষের আনাগোনা সীমিত হয়ে গেছে। মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। - যায়যায়দিন
২১ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস