ফেরদৌস ফয়সাল : পবিত্র হজ পালন করতে মক্কায় আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মিনার উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন আজ সোমবার। মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় নয় কিলোমিটার দূরে মিনা। মিনায় কেউ যাবেন গাড়িতে, কেউবা হেঁটে। হজের অংশ হিসেবে তারা মিনায়, আরাফাতের ময়দান, মুজদালিফায় অবস্থান করবেন।
৮ জিলহজ মিনায় সারা দিন এবং ৯ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে গিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। এরপর আরাফাত থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফায় রাত যাপন ও পাথর সংগ্রহ করবেন তারা। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরবেন তারা। মিনায় বড় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, কোরবানি ও মাথা মুণ্ডন বা চুল ছেঁটে মক্কায় পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ, সাঈ করবেন। তাওয়াফ শেষে মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান ও প্রতিদিন তিনটি শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন।
সৌদি আরবে বিমানবন্দরে নামার পর থেকে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে হাজিদের মক্কা-মদিনায় পৌঁছানো, থাকা; মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতে থাকা-খাওয়া, যাতায়াতসহ সবকিছুর ব্যবস্থা যাঁরা করেন, তাদের বলা হয় মোয়াল্লেম। একমাত্র সৌদি আরবের নাগরিকেরাই মোয়াল্লেম হতে পারেন। প্রত্যেক মোয়াল্লেমের নির্দিষ্ট নম্বর আছে, যেমন ১ থেকে ১১৫ পর্যন্ত।
প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিজ নিজ মোয়াল্লেম কার্যালয় থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, কখন মিনার উদ্দেশে রওনা দেয়া হবে। একই সঙ্গে দেয়া হয় মিনার তাবু নম্বরসংবলিত কার্ড। ওই কার্ড সব সময় গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হয়। একইভাবে মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতে কীভাবে কখন রওনা হবেন, তা-ও জানিয়ে দেয়া হয় আগেভাগে।
আমাদের মোয়াল্লেম রোববার জানিয়েছেন, আজ মাগরিবের নামাজ পড়ে মিনার উদ্দেশে রওনা দেবেন। মক্কায় বাসাতেই অজু-গোসল সেরে সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড় পরে হজের নিয়ত করতে হবে। ইহরামের কাপড় (আড়াই হাত বহরের আড়াই গজ কাপড় আর গায়ের চাদরের জন্য একই বহরের তিন গজ কাপড়) এক সেট পরে নিতে হবে, অতিরিক্ত আরেক সেট থাকবে ব্যাগে।
এ ছাড়া এক সেট সাধারণ পোশাক (শার্ট-প্যান্ট অথবা পাঞ্জাবি-পায়জামা), পেস্ট, ব্রাশ, সাবান, চার্জারসহ মুঠোফোন, মুজদালিফায় রাতে ঘুমানোর জন্য হালকা বিছানাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছোট ব্যাগে নিলে ভালো হয়। কারণ, নিজের ব্যাগ নিজেকেই বহন করতে হবে। মোয়াল্লেম যাতায়াতের জন্য বাস, খাবারের ব্যবস্থা করবেন।
হাজিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য আরাফাত থেকে মিনা পর্যন্ত কয়েক বছর আগে মনোরেল সেবা চালু করা হয়েছে। প্রায় ১৮ কিলোমিটার এ পথে রয়েছে নয়টি স্টেশন (আরাফাতে তিনটি, মুজদালিফায় তিনটি ও মিনায় তিনটি)। এ প্রকল্পের নাম আল-মাশায়ের আল-মোগাদ্দাস মেট্রো লাইন প্রকল্প। মিনায় যাঁদের তাবু রেলস্টেশনের কাছাকাছি পড়েছে, তারা চাইলে রেলের টিকিট কিনতে পারেন। ২৫০ রিয়াল দিয়ে মোয়াল্লেমের অফিস থেকে এ টিকিট নিতে হয়। এ টিকিট দিয়ে এই পাঁচ দিন প্রয়োজনমতো যাওয়া-আসা করা যায়। আমাদের তাবু রেলস্টেশন থেকে দূরে হওয়ায় রেলের টিকিট দেননি মোয়াল্লেম।
মিনায় হাজিদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় শুধু দক্ষিণ এশিয়ার হাজিদের জন্য ১ থেকে ১১৩ নম্বর পর্যন্ত মোয়াল্লেম আছেন। মিনার তাবু বরাদ্দ হয় জামারাত ও রেলস্টেশনকে কেন্দ্র করে। মোয়াল্লেমকে অতিরিক্ত অর্থ দিলে জামারাতের (শয়তানকে পাথর মারার স্থান) কাছে তাবু পাওয়া যায়। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ থেকে আসা ও সৌদি হাজিদের জন্য রয়েছে আলাদা জোন। মিনায় এমন সাতটি জোন রয়েছে।
মদিনাপ্রবাসী মাকসুদ বিন সায়িদ বলেন, যেসব এজেন্সি বাড়তি অর্থ দেয়, তাদের মাধ্যমে আসা হাজিদের তাবু মোয়াল্লেম জামারাতের কাছাকাছি অথবা রেলস্টেশনের কাছাকাছি রাখেন। এ অর্থ এজেন্সি নেয় হাজিদের কাছ থেকে। হজের সময় মিনার সব সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। যাতায়াত করতে হয় হেঁটে।
মোয়াল্লেম দপ্তরের সূত্র বলেছে, জামারাতের কাছে মোয়াল্লেম নম্বর ২২-এর অধীনে থাকবেন বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আসা হাজিরা। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এজেন্সির মাধ্যমে আসা হাজিরা থাকবেন ৪, ৫, ৮, ১১, ১৪, ২২, ৫৩, ৬৩ থেকে ৬৬, ৬৮ থেকে ৭২, ৭৪, ৭৭, ৭৮, ৭৯, ৮১, ৮৬ থেকে ৯০, ৯৩, ৯৪, ৯৫, ৯৮ থেকে ১১৩ মোয়াল্লেম নম্বরের অধীনে।
মিনায় হাজিদের সহায়তার জন্য ৯/৫৬ নম্বর (অর্থাৎ ৫৬ নম্বর রাস্তার ৯ নম্বর তাবু ) তাবুতে পাঁচ দিন বাংলাদেশ হজ কার্যালয়ের কার্যক্রম চলবে।
শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ (মোয়াচ্ছাসা) হাজিদের ভাগ ভাগ করে জামারাতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে।-প্রথমআলো
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে