ঝলক দেখাতে মাঠে আ'লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা
নিউজ ডেস্ক : পৌরভোটে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে নেমেছেন। চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন এলাকা। হাতে নিয়েছেন নানা কৌশল।
দলীয় সূত্রমতে, দলীয় প্রতীকে ভোট হওয়ায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৌর নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়ার কথা বলেছেন। এ কারণেই বিভাগভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আটঘাট বেঁধে নেমে পড়েছেন।
জানা গেছে, দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়ার পর এতদিন অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা চললেও কেন্দ্রে প্রচার কমিটি গঠনের পর কেন্দ্রীয় নেতাদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। গ্রুপভিত্তিক বিভক্ত হয়ে সবাই ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। জয় নিশ্চিতে আটঘাট বেঁধে চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনী গণসংযোগ। আর প্রচারণার ফাঁকে ফাঁকে ঘরোয়া বৈঠক করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী নেতাকর্মীদের দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন।
দলের পর্যবেক্ষণ হলো_ কেন্দ্র থেকে বহু চেষ্টা করার পরও ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি করপোরেশনে (রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর) আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয় ঠেকানো যায়নি। মূলত অন্তর্কোন্দলের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশের নিষ্ক্রিয়তা ও গা-ছাড়া ভাবের জন্য ওই সময় ফল বিপর্যয় হয়। তাই অতীত নির্বাচনগুলোর ফল পর্যালোচনা করে এবার আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভুল শুধরে জয়ের জন্য পরিকল্পনা করে কাজ করতে হচ্ছে। এ কারণেই প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে এমপি-মন্ত্রী নন, দলের অভিজ্ঞ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের প্রচারণার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রের নির্দেশে কয়েকদিন ধরেই প্রচারণার মাঠে রয়েছেন সিলেট বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তিনি জানান, প্রচারণার জন্য বেশ কয়েকদিন ধরেই তিনি ভোটের মাঠে রয়েছেন। ঢাকা বিভাগে দায়িত্ব পাওয়ার পর মঙ্গলবার প্রচারণা শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নুহ-উল-আলম লেনিন। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও পৌরসভায় দলের প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে অংশ নেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে কেন্দ্র ও জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিলেন।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ দুদিন ধরে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে খুলনা বিভাগে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া স্থানীয় নেতাকর্মীদের দিয়েছেন নানা দিকনির্দেশনা। চট্টগ্রাম বিভাগে প্রচার টিমের দায়িতপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলীও প্রচারণা শুরু করেছেন। তিনি জানান, নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার পৌরসভাগুলোতে প্রচারণা চালাবেন।
মাঠে রয়েছেন রংপুর বিভাগের আওয়ামী মহিলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদিকা অধ্যাপক অপু উকিল। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের প্রার্থী মো. মোশারফ হোসেন বাবুলের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়ে মঙ্গলবার তার পক্ষে ভোট চাওয়া শুরু করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের কন্যা জনপ্রিয় অভিনেত্রী শমী কায়সারসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোট যেভাবে সহিংসতা-নাশকতা চালিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছে; নির্বাচনী প্রচারণায় তা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের আমলে বিদুৎ-পানি-গ্যাস সমস্যার সমাধানের বিষয়গুলোও ভোটারদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে জনগণের পক্ষ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে।
এর বাইরেও ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, আওয়ামী কৃষক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, আওয়ামী তাঁতি লীগ, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতারা দেশজুড়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এর বাইরেও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াকে আহ্বায়ক করে গঠিত কেন্দ্রীয় ১৪ দলের প্রচারণা টিমও তৃণমূলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জন্য ভোট চাইছেন।
এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্র থেকে গঠিত ৭ প্রচার কমিটির অধিকাংশ নেতা এখন নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। আগামী ৪-৫ দিন তাদের প্রচারণা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারের সাত বছরের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরা হচ্ছে। পাশাপাশি বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের দেশবিরোধী অবস্থানের কথাও গুরুত্ব পাবে।
হানিফ বলেন, দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে সব ধরনের চেষ্টা চলছে। জনমত যাচাইয়ে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের জয় আসবে।
এদিকে প্রচারণার পাশাপাশি স্বতন্ত্র নামধারী বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনের মাঠ থেকে সরাতেও কাজ করছে আওয়ামী লীগ। টোপ হিসেবে ঝুলানো হয়েছে 'বহিষ্কার প্রত্যাহার'। সেইসঙ্গে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার শর্তও জুড়ে দেয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা নড়াইল, পাবনা, মেহেরপুরসহ কয়েকটি জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এসময় তারা বিদ্রোহীদের পৃষ্ঠপোষকতা না করে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে সম্মত হন। যদিও নমনীয় হওয়ার ব্যপারে প্রার্থীর পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পায়নি আওয়ামী লীগ।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে, ভোট শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচার বন্ধ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ২৮ ডিসেম্বর রাত ১২টায় প্রার্থীদের প্রচার শেষ করতে হবে। ইসির ওই নির্দেশনা মাথায় রেখে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা শেষ সময় পর্যন্ত প্রচারণার মাঠে থাকবেন বলে সূত্র জানিয়েছে। - যায়যায়দিন
২৪ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস