‘আমি বিএ পাশ ভিক্ষা নয়, চাকরি চাই’
জুবায়ের রাসেল: রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুর গ্রামের মশিউর আজম ছোটবেলা থেকেই প্রতিবন্ধী। তবে অক্ষমতার কাছে হার মানেন নি তিনি। নিয়মিত চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। তিন ভাই বোনের মধ্যে মেজ মশিউর এ বছর পাংশা কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতক (বিএ) পাশ করেছেন।
অত্যন্ত মেধাবী এই যুবক ছোটবেলায় হামাগুড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতেন। ২০০৫ সালে বাবা মারা যাওয়ায় পর শুরু হয় তাঁর সংগ্রামী জীবন। পড়ালেখার খরচ নিয়ে হিমশিম খান। মশিউর তবুও দমে যাননি। টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। তাঁর বড় ভাইয়ের সামান্য উপার্জন দিয়ে কোন রকম সংসার চলছে। মশিউর বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় চাকরির চেষ্টা করছেন। কয়েকটি লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছেন। মশিউরের ভাষ্য, একমাত্র প্রতিবন্ধী ও গরিব হওয়ায় তাঁর চাকরি হচ্ছে না।
মশিউরের মা খাদিজাতুল কোবরা বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) চাকরি থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মাসে ৫০০ টাকা সম্মানী পেলেও বর্তমানে তিনিও বেকার।
খাদিজাতুল কোবরা বলেন, মাত্র আড়াই বছর বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হন মশিউর। এরপর তাঁর দুটি পা চিকন হয়ে যায়। কিন্তু পড়ালেখার প্রতি তাঁর ছিল প্রবাল আগ্রহ। এসএসসি পরীক্ষার সময় মশিউর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবু তিনি হাবাসপুর কেরাজ উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ ২ দশমিক ৪৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ২০১০ সালে ড. কাজী মোতাহার হোসেন কলেজ থেকে ব্যবসায় শাখায় এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ১৫ পান। পরে পাংশা কলেজ থেকে স্নাতক (পাস) পাস করেন দ্বিতীয় বিভাগে।
মশিউর বলেন, সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি চাকরির জন্য আবেদন করেছি। কিছু দিন আগে খাদ্য অধিদপ্তর ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণও হই। কিন্তু টাকা না থাকায় মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়ে যায়।
মশিউরের প্রশ্ন, ‘প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও ভিক্ষা না করে পড়াশোনা করেছি এটা কি আমার অপরাধ? রাষ্ট্রের কাছে আমি তো ভিক্ষা চায় না, আমার যোগ্যতা অনুযায়ি এক চাকরি চায়।’
ড. কাজী মোতাহার হোসেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বিকাশ চন্দ্র বসু বলেন, ‘মশিউর শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তাঁর মানসিক শক্তি অনেক। কম্পিউটার ব্যবহারেও সে পারদর্শী। অত্যন্ত মেধাবী এই ছেলেটার পাশে আমাদের দাঁড়ানো উচিত। মশিউর স্নাতক পাশ করেও যদি চাকরি না পায়, তাহলে অন্য প্রতিবন্ধী যারা পড়ালেখা করে যাচ্ছে তারা স্বপ্ন দেখা ভুল যাবে।’
২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের রাসেল