মনোতোষ হাওলাদার, বামনা থেকে: স্যার গো মোরা গ্রামে যাইতে পারিনা। কোন কাজ কাম নাই। হাটে বাজারে গেলেও সবাই খেদায় (তাড়ায়) দেয়। বাল বাচ্চা লইয়া এহন কি খামু? করুনার (করোনা) ভ'য়ে মোগে সব রুটি রুজি বন্ধ। মোরা এহানের বাসিন্দা না বইল্লা মোরা কি না খাইয়া থাকমু। স্যার মোগে লইগ্যা কিছু ব্যবস্থা কইরা দেন।
করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া বেদে সম্প্রদায়ের নারী সুমাইয়া আক্তার (২৫) সহ ১০-১২ জন বেদে নারী আজ শনিবার বামনা উপজেলা পরিষদে ত্রাণ বিতরণের কথা শুনে হাজির হন সেখানে। এসময় বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা সুলতানার কাছে গিয়ে এ আকুতি জানান তারা।
পরে সাংবাদিকরা সরেজমিনে বামনা সদরের লঞ্চঘাট সংলগ্ন কলাগাছিয়া গ্রামে বেদে আস্তানায় গিয়ে জানাগেছে, প্রায় ১০ দিন আগে তারা ভান্ডারিয়া উপজেলার বানাই এলাকা থেকে বামনায় এসে অস্থায়ী খুপরী ঘরে বসবাস করছে। এখানে প্রায় ২৫টি বেদে পরিবার তাদের পরিবার নিয়ে আস্তানা করে বসবাস করছে।
আজ শনিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে প্রায় শতাধিক বেদে সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ বেকার দিন কাটাচ্ছে। কেউ করছে রান্না, কেউবা করছে সবজি কাটা আবার কেউ একে অন্যের সাথে দুঃখভাগাভাগি করছে। অনেক বেদে পরিবারে শুধু দু মুঠো খালি ভাত রাঁধতে পেরেছে। মাছ বা মাংস খাওয়া হয়নি প্রায় ৫-৬ দিন। এ বেদে বহরের ভারপ্রাপ্ত সর্দার সামাদ হোসেন সকলের থেকে আড়াল হয়ে বসে রয়েছেন। যে আশা নিয়ে তারা এ উপজেলায় এসেছেন মহামারী করোনা ভাইরাস তাদের সব আশায় জল ঠেলে দিয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত বেদে সর্দার সামাদ হোসেন বলেন, আমার এ বহরের কারো চোখেরদিকে তাকাতে পারিনা। বাইরে কোন কাজ নাই আমরা পুরুষরাও কোথাও বের হতে পারিনা। কারো ঘরে খাবার বলতে এখন কিছুই নাই। বন জঙ্গল খুজে যা পাই তাই দিয়ে কোন মতে এখন দিন কাটাচ্ছি। আমরা এখানে না খেয়ে মরে যাচ্ছি। বৃদ্ধ কমলা বাইদ্দা বলেন, বাবা গো মোগো কারো কোন কাম নাই আপনারা এহানের মেম্বার চেয়ারম্যানগো বলেন মোগো জন্য কিছু খয়রাত (ত্রাণ) দিতে নাইলে মোরা মইরা যামু।
এব্যপারে বামনা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুজ্জামান সগির বলেন, বেদে সম্প্রদায় এ ইউনিয়নের অস্থায়ী বাসিন্দা। ১০-১৫ দিন থেকে চলে যাবে। তাই কোন সরকারী সহায়তার আওতায় তারা পরে না। যেহেতু এ মাহামা'রীতে সবাই ক্ষতিগ্রস্থ। তারাও সবাই এখন বেকার। তাই সরকারসহ আমাদের সকলের তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসা দরকার।
বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা সুলতানা বলেন, বেদে সম্প্রদায়ের কয়েকজন নারী আমার কাছে এসেছিলো আমি তাদের জন্য ব্যথিত। যে ত্রান সামগ্রী আসছে তা শুধু এখানকার স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য। তাই তাদেরকে এবারে এই ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি জানাবো।-কালের কণ্ঠ