শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০, ০৪:৩১:২৩

'আগে মানুষের জীবন বাঁচান, মানুষই অর্থনীতি ও দেশ বাঁচাবে'

'আগে মানুষের জীবন বাঁচান, মানুষই অর্থনীতি ও দেশ বাঁচাবে'

ড. রেজা কিবরিয়া : কভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামা'রির কারণে আমরা যেই সংকটের সম্মুখীন, তাতে খুবই ভিন্ন দু'টি চ্যালে'ঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হলো ভাইরাসের বি'স্তার রোধ করা ও মানুষের প্রাণহা'নি যতটা সম্ভব কমানো। এটি মূলত জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত ইস্যু। এতে সফল হলেই কেবল আমরা দ্বিতীয় অর্থাৎ অর্থনৈতিক চ্যালে'ঞ্জ কার্যকরভাবে মো'কাবিলা করতে পারবো। 

অনেক দেশই জনস্বাস্থ্য কার্যক্রম চালাতে গিয়ে স্বল্প-মেয়াদে অর্থনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহ'ত রেখেছিল। এর ফলে শুধু ভাইরাস অনেক বেশি সং'ক্র'মিত ও অতিরিক্ত বহু মানুষের মৃ'ত্যুই হয়নি, বরং লকডাউনের মেয়াদও বেড়েছে, যার ফলে শেষ অবদি অর্থনীতি আরও ক্ষ'তির শি'কার হবে। জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যই এই খাতের বিশেষজ্ঞদের কথা শুনতে হবে। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই একমত যে, বাংলাদেশে শনা'ক্তকরণ পরীক্ষার সংখ্যা শো'চনীয়ভাবে কম।

এই নিবন্ধে এই মহামা'রির দরুন সৃষ্ট অর্থনৈতিক সম'স্যার বিপরীতে কী কী নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া যায়, শুধুমাত্র তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই সং'কটের সরকারি ব্যবস্থাপনা জাতির আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। করোনা ভাইরাস ও মহামা'রী পরবর্তী পরি'স্থিতি মো'কাবিলা করতে হলে সপ্তাহের পর সপ্তাহ, এমনকি হয়তো মাসের পর মাস আমাদের নাগরিকদের সম্মিতলিতভাবে আত্মত্যা'গ করতে হবে। মানুষকে সামনের ক'ঠিন সময় সম্পর্কে সত'র্ক করা প্রয়োজন। 

সরকার ও সরকারের দেওয়া যেকোনো তথ্যের ওপর (বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের বিস্তার নিয়ে) আ'স্থাহী'নতা বিরাজ করলে, এই সং'ক'ট উৎরে আসতে যেই জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন, তা গড়া ক'ঠিন হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী ৫ই মার্চ জাতির উদ্দেশে যেই ভাষণ দিয়েছেন, তাতে করোনা ভাইরাস প্রতিরো'ধে নেওয়া পদক্ষেপের ওপর আরও তথ্য দেওয়া যেত। 'সাধারণ ছুটি' ঘোষণা করা হয়েছে অনেক দেরিতে। অল্প কয়েকদিনের জন্য এই ছুটি একবার করে বাড়ানো হয়।

এ থেকে গু'রুতর পরিক'ল্পনাহী'নতার বিষয়টি প্র'কট হয়ে উঠে। 'সাধারণ ছুটি'র সময় কোন কোন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে ও তাদের সহায়তায় কী করা হবে, তা বলা হলে ভালো হতো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দ'রি'দ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগো'ষ্ঠীর মানুষজন এই 'লকডাউনে' যেন অনাহা'রে না ভো'গেন, সেজন্য সরকারের পরিক'ল্পনা কী, তার বিস্তারিত জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও রশদের বিষয়ে খোলামেলা কথা বলা প্রয়োজন। 

সামরিক বাহিনী ও সুনামধন্য এনজিও কি খাদ্য বিতরণের কাজ দেখভাল করবে? নাকি এই দায়িত্ব দেওয়া হবে শা'সক দলের অঙ্গসংগঠনগুলোকে? ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব আওয়ামী লীগকে দেওয়া হলে কী হয়, তা আমরা সবাই জানি। খাদ্যের মজুত ও সরবরাহের মাত্রা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে সরকার। অধ্যাপক অমর্ত্য সেন ও অন্যান্যরা যেমনটি দেখিয়েছেন, মূল বিষয় হলো যে, গরিব মানুষের খাদ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাদের যদি কোনো আয় না থাকে, তাহলে যতই খাদ্যেরই মজুত থাকুক না কেন, তারা খাদ্য কিনতে পারবে না। 

যেই ই'ঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম আগের পর্যায়ে আসতে আসতে, অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত লাখ লাখ পরিবারকে খাদ্য সরবরাহের পরিকল্পনা অবশ্যই করতে হবে সরকারকে। ভূমিহী'ন শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা চালক, হকার ও এ ধরণের শ্রমজীবী মানুষ যারা দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে চলেন, তাদের আয় পড়ে গেছে। সঞ্চয় ও সম্পত্তি না থাকায় অনাহার কিংবা তার চেয়েও খারাপ কিছু হওয়ার ঝুঁ'কি তাদের বেলায় বেশি। 

তাদের খাদ্য ও সরাসরি নগদ অর্থ দিতে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ আলাদা করে রাখতে হবে। বিশেষ করে, গরিব পরিবারের শিশুদের মধ্যে পুষ্টিহী'নতার ঝুঁ'কি রয়েছে প্রবল। এ থেকে যেন স্থায়ী ক্ষ'তি না হয়, তা নি'শ্চিত করা যাবে ও অবশ্যই করতে হবে। এ ধরণের সহায়তা কত পরিবারকে কত দিন ধরে দিতে হবে ও সেজন্য কী পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা হতে পারে, সেই ব্যাপারে সরকার ই'ঙ্গিত দিলে জাতি ভরসা পাবে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে