ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন : কেন চোখ সজল হয়ে আসছে বারবার? কেন আমি কেঁদেই চলেছি? মঈনউদ্দিন তো আমার কেউ না। ঢাকা মেডিক্যালে ছয় বছরের জুনিয়র ছিল এ আর এমন কী! গত অক্টোবরে সিলেট মেডিক্যালে আমি লেকচার দিতে গেলে এক ফাঁকে এসে দেখা করে গেছে, যেন কতকালের পরিচিত ছোট ভাইটা আমার।
সিলেট মেডিক্যালের মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক, অনেক নাম করা চিকিৎসক। নভেল করোনা ভাইরাসে সং'ক্র'মিত হলে সবাই বলেছে, বাসায় থাকো, ভাল হয়ে যাবে। ওর ভাল লাগে না। নিজে চিকিৎসক হয়ে টের পায় কোথাও একটা সম'স্যা হচ্ছে। সিলেটের কোভিড চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড শামুসুদ্দিন হাসপাতালে ওকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়। আমি সিলেটে অনেকের সাথে কথা বলি। সাধারণ রোগীদের ক্ষ'তি হবে বলে ওকে সিলেট মেডিক্যালের আইসিইউতে নেওয়া হয় না।
মঈন ছোট্ট করে একটা মেসেজ পাঠায় এফডিএসআরের মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। ও চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতে চায়। পদমর্যাদার ঘাটতিতে ওকে আমরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আনতে পারি না। তা মেনেও নেই, তখনো সে অতটা খারাপ হয়নি। শুধু নাক থেকে অক্সিজেনের নল সরলেই অসুস্থ বোধ করে। ওকে ঢাকায় আনার জন্য অ্যাম্বুলেন্স খুঁজতে গিয়ে আমরা টের পাই, দেশের সামনে না জানি কী অপেক্ষা করছে। কোন অ্যাম্বুলেন্স ওকে আনতে রাজি হয় না।
বহু কষ্টে একটা অ্যাম্বুলেন্স যোগাড় করে ওকে ঢাকায় এনে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিএমএর মহাসচিব দুলাল ভাই আগে থেকেও ওর ভর্তির ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। গত দুদিন ধরে অবস্থার অবন'তি হলে ওকে ভেন্টিলেটরে নেওয়া হয়। আজ সকাল ৭.৫০ টার দিকে মঈনউদ্দিন আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন।
জীবন দিয়ে তাই সে প্রমান করে গেলো, কত অনিরাপদ বাংলাদেশের চিকিৎসকসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীরা! আল্লাহ ডা. মঈনউদ্দিনকে বেহেশত নসীব করুন এবং করোনার এই দুর্যো'গের কালে লু'টপা'ট সিন্ডিকেটের সবাইকে আরো বেশী বেশী লু'টপা'টের তওফিক দান করুন। আমিন! লেখক: চেয়ারম্যান, ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি অ্যান্ড রাইটস (এফডিএসআর)। লেখাটি তার ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া।