ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত কেন্দ্র পাহারা দেবে বিএনপি
নিউজ ডেস্ক : উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে আজ শুরু হচ্ছে ২৩৪ পৌরসভার নির্বাচন। ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে রাজধানীর তিন জায়গা থেকে নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে দলটির তিনটি মনিটরিং সেল। এছাড়া সাত বিভাগ থেকে সাতটি মনিটরিং সেল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।
ওই সেলকে নির্বাচনের যে কোনো অনিয়মের তথ্য জানানোর জন্য দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দেয়া হয়েছে ফোন ও ফ্যাক্স নম্বর। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ডাকা হয়েছে ২০ দলের শীর্ষ নেতাদের। দুপুরের পর গুলশান কার্যালয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে জোট নেতাদের। সেখান থেকেই নির্বাচন মনিটরিং করবেন তারা। ভোটকেন্দ্রের পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
এই লক্ষ্যে নির্বাচন শেষে গুলশান কার্যালয়ে জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নির্বাচনে কারচুপি হলে ওই বৈঠক শেষে কর্মসূচি দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন জোটের শরিক দলের এক শীর্ষ নেতা। এর আগে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ভোটের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত অবিচল থাকার ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া। ভোটারদের দলে দলে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটি অভিযোগ করেছে, বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের গ্রেপ্তার ও দলের নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো, নতুন করে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। সরকারের সব ষড়যন্ত্রের জাল চিহ্ন করে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়ে হিমালয়ের প্রাচীর তৈরি করে প্রতিরোধ করবে। দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম গুলশান কার্যালয় থেকে নির্বাচন মনিটরিং করবেন। ওই মনিটরিং টিমের সদস্য সচিব ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান, সহ-প্রচার সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-দপ্তর সম্পাদক শামিমুর রহমান শামীমসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। সারা দেশের ভোটকেন্দ্রের সার্বিক চিত্র বিএনপি চেয়ারপারসনকে অবহিত করবেন কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিমের সদস্যরা।
এদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে একটি টিম নির্বাচন কমিশন থেকে নির্বাচন মনিটরিং করবেন। ভোটকেন্দ্রের বিভিন্ন অনিয়ম ও অসঙ্গতি তাৎক্ষণিকভাবে কমিশনকে অবহিত করবেন তারা। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ও যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের নেতৃত্বে প্রচার টিমের সদস্যরা নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নির্বাচন মনিটরিং করবেন। নির্বাচনের প্রতি মুহূর্তের চিত্র গণমাধ্যমকে অবহিত করবেন তারা।
এছাড়া বাকি চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও বরিশাল বিভাগ থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে বিএনপির মনিটরিং সেল। এদিকে পৌর নির্বাচন নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। গতকাল সুপ্রিম কোর্টে এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ভোট কারচুপির চেষ্টা করলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। একই সুরে কথা বলেছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান নির্বাচন কমিশনে সাংবাদিকদের বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, ভোটাররা অবাধে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবে বিএনপি। এদিকে জোটের শরিক দলের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, দুপুরের পর গুলশান কার্যালয়ে আমাদের হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বলা হয়েছে, নির্বাচন শেষে পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, ফলাফল ছিনতাই, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। ওই বৈঠক শেষে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। ওদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিমের সদস্য সচিব মো. শাহজাহান মানবজমিনকে বলেন, ইতিমধ্যেই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
মোটামুটি সব ভোটকেন্দ্রেই এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে কিছু কিছু কেন্দ্রে আমাদের এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যয়নকারী এই নেতা বলেন, আমার নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছি তারা ভোটের দিন কেমন আচরণ করেন। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্র দখল ও ফলাফল পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করলে গণমাধ্যম কর্মীরা তো মাঠে থাকবেন।
তারা সেটি জাতির সামনে তুলে ধরবেন। এছাড়া দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা বৈঠক করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন। তিনি আরও জানান, ভোটের দিন বেশির ভাগ ব্রিফিং করা হবে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে। তবে নির্বাচন শেষে গুলশান কার্যালয় থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্রিফিং করতে পারেন।
বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টদের গ্রেপ্তারের অভিযোগ : এদিকে সকালে রিজভী আহমেদ বলেন, পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার জন্য দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রে না যেতে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার ও বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী আহমেদ বলেন, ভোটের ফলাফলকে নিজেদের অনুকূলে নিতে সরকার এক হীন নীলনকশা নিয়েছে।
বিরোধী দলের প্রার্থীদের পক্ষে নেতাকর্মীসহ ভোটারদের ভয় পাইয়ে দিতে উড়ো খবরের কথা বলে পুলিশ-র্যাব যৌথ অভিযান চালাচ্ছে। ভোটের দিনে যাতে জনগণ ভোট দিতে না যায় সেই কেরামতি দেখানোর জন্য এই অভিযান চালানো হচ্ছে। এই ঘৃণ্য পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিতে সবাইকে অবিচলভাবে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। রিজভী আহমেদ বলেন, যে কোনো চক্রান্ত নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে ভোট দিতে হবে। ভোটের ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করতে হবে।
বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী আহমেদ বলেন, হবিগঞ্জ সদরে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্টসহ তিনজন, ঝালকাঠিতে ২০ জন, ঝিনাইদহে ৫ জন, সাতক্ষীরায় ৪ জন, মৌলভীবাজারে ৩ জন, পটুয়াখালীতে কাউন্সিলর প্রার্থী আলী আক্কাস, রাজশাহীতে ৮ জন, বরিশালের গৌরনদী পৌর বিএনপি সভাপতি মনিরুজ্জামান মনিরসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে নতুন করে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন জায়গায় হামলার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, জামালপুর, জয়পুরহাট, ঝালকাঠি, ঝিনাইদহ, মুন্সীগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী, নাটোর, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, সীতাকুন্ড, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, নওগাঁ সদর, নড়াইলের সদর, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, বরগুনার পাথরঘাটা, হবিগঞ্জ সদর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, রাজশাহীর বাঘাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে সরকার সমর্থকরা। এছাড়া সরকার মন্ত্রী-এমপিরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
ভোটারদের হুমকি দিতে ওসিদের নির্দেশ ডিআইজির : ওদিকে বিকালে নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেন, খুলনার বিভাগের ডিআইজি সরাসরি থানার ওসিকে ধানের শীষের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়িতে হুমকি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
তারা যেন নির্বাচনের দিন পোলিং এজেন্ট না হয় এবং ভোট দিতে না যায়। ডিআইজির এই নির্দেশ খুলনা বিভাগের অনেক এসপিও জানে না বলে আমরা জানতে পেরেছি। এই ঘটনায় পৌর নির্বাচন নিয়ে সরকারের নগ্নরূপ উন্মোচিত হলো।
বিএনপির মনিটরিং সেলের ফোন ও ফ্যাক্স নম্বর: পৌর নির্বাচন সংক্রান্ত খবর বিএনপির মনিটরিং সেলকে জানানোর জন্য দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ফোন ও ফ্যাক্স নাম্বার দিয়েছে দলটি। যে কেউ ওই নাম্বারে যোগাযোগ করে নির্বাচনের যে কোনো অনিয়ম জানাতে পারবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় ফোন: সিলেট বিভাগ, ০২-৮৮৩১৯৯১, বরিশাল বিভাগ ০২-৮৮৩৩২০৩, খুলনা বিভাগ ০২-৫৫০৫১৯৬৮, ঢাকা বিভাগ ০২-৫৫০৫২০০১, রংপুর বিভাগ ০২-৫৫০৫২০০৫, চট্টগ্রাম বিভাগ-০২-৫৫০৫২০০৭ ফ্যাক্স : ০২-৯৮৮৩৪৫২, ০২-৫৫০৫২০০৬। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়: ফ্যাক্স নং-০২৮৩১৮৬৮৭, ফোন নং ০২-৯৩৬১০৬৪, ০২-৯৩৩০৮১৯। -মানবজমিন
৩০ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস