মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৬:৩০

বাবা ক্ষুদ্র কৃষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে মুছে দিলেন চোখের পানি

বাবা ক্ষুদ্র কৃষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে মুছে দিলেন চোখের পানি

নিউজ ডেস্ক : দারিদ্রতা যে সফলতাকে কখনো থামিয়ে রাখতে পারে না তা আবারো প্রমাণ করলেন খাদিজা। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজে’লার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক মাদ্রাসা ছা’ত্রী খাদিজা খাতুন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় তার এলাকায় আনন্দের ব’ন্যা বইছে। হত দরিদ্র ঘরের সন্তান হয়েও এত বড় অর্জন করায় খুশি এলাকাবাসী। খাদিজার বাড়ি ফুলবাড়ীয়া উপজে’লা সদর হতে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রায় ৩০কিলোমিটার অদূরে এনায়েতপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের

এনায়েতপুর গ্রামের মহিষেরচালা (মইষের) এ খাদিজা এর বাড়ি। এনায়েতপুর বাজার ভায়া রাজঘাট কাঁচা রাস্তা ঘেঁষে খাদিজার বাড়ী। সাধারণ একটি নিরীহ বাড়ীর মতই এটি। বাড়ীতে টিনসেট ৩টি ঘর। স্বাভাবিক ভাবে অন্য গ্রামের বাড়িগুলোতে যা হয়। খাদিজা খাতুনের বাবা মো: রুহুল আমিন, মাতা হালিমা খাতুন, তাঁর ৪ ছে’লে, ২ মেয়েসহ ৮ জনের সংসার। ভাই-বোনদের মধ্যে খাদিজা দ্বিতীয়। বড় ছে’লে সোহাগ কৃষক, তৃতীয় সন্তান তাসলিমা- ইডেন কলেজের ছা’ত্রী, চতুর্থ সন্তান

আনোয়ার হোসেন মুঞ্জু- এম এম আলী কলেজের অনার্সের ছাত্র, পঞ্চ’ম সন্তান আজহারুল ইস’লাম (শা’রীরিক প্র’তিবন্ধি)- চলতি দাখিল পরীক্ষার্থী, তারিকুল ইস’লাম- পঞ্চ’ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। খাদিজা খাতুনের নানার বাড়ী রাজঘাট এলাকায়। বাড়ীর কাছে এনায়েতপুর ফাজিল (ডিগ্রী) মা’দ্রাসা (রাজঘাট মাদ্রাসা)। ঐ সময় সেই মাদ্রাসায় ৪র্থ শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো খাদিজার মামা মোশাররফ। সেই সুবাধে খাদিজার লেখাপড়া শুরু মাদ্রাসা থেকে। ৮বছর লেখাপড়া শেষে ৮ম শ্রেণীতে উদ্দীপনা পুরস্কার

পেয়ে পরীক্ষায় উপজে’লায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। মেধাবী ছা’ত্রীর অ’ভিভাবক হিসেবে পরিচালনা কমিটিতে স্থান হয় খাদিজার বাবা মো: রুহুল আমিনের। দাখিল পরীক্ষায় গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস অর্জন করেন খাদিজা। ঐ মা’দ্রাসায় আলিমে বিজ্ঞান শাখা না থাকায় তাঁর মেয়েকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইস’লাম কলেজ ময়মনসিংহে ভর্তি করানোর জন্য চেষ্টা করেন। যে দিন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে যান খাদিজা সে দিন পরীক্ষার হলে প্রবেশের পূর্বে বাবা-মায়ের দোয়া (আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে

ফেলেন বাবা। সোনার হরিণ প্রাচ্যের অক্সফোর্ট খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক পদে ২ফেব্রুয়ারি/২০১৭ ফলিত গণিত বিভাগে যোগদান করেন খাদিজা। চোখের পানি মুছতে মুছতে বাবা রুহুল আমিন বলেন আমা’র আশা পূরণ হয়েছে। প্রথমে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে বাবা রুহুল আমিন শিক্ষক, এলাকাবাসীসহ সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। নাম দস্তখত জানা রুহুল আমিন জানিয়েছেন, তিনি নিয়ত করেছিলেন যদি মেয়ের একটু হেল্প পান তাহলে বাকী’ সন্তানদের উচ্চ

শিক্ষায় শিক্ষিত করতে কোন সময় পিছপা হবেন না তিনি। অবশেষে তার আশা পূরণ হওয়ায় তিনি মহাখুশি। মাতা হালিমা খাতুন জানান, বাড়ীতে আত্নীয় স্বজনের আনা-গোনা বেড়ে গেছে। বাড়ীতে অনেকে এসে বলে কে খাদিজার মা? আমি খাদিজার মা হতে পেরে নিজেকে গর্ববোধ মনে করছি। আপনারা আমা’র কলিজার টুকরা খাদিজার জন্য দোয়া করবেন। এনায়েতপুর ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ.কে.এম হাবিবুল্লাহ ফকির জানিয়েছেন, ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল

খাদিজা। নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি ৯ম-১০ম শ্রেণীতে আবাসিক ফ্রি ক্লা’শ করাতেন শিক্ষকরা। শাহাবুদ্দিন ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো: মকবুল হোসেন জানিয়েছেন, খাদিজা আমাদের কলেজে ভর্তি হবার পর থেকে তাঁর লেখাপড়ার আগ্রহে আম’রা মুন্ধ ছিলাম। আমা’র ধারণা ছিল সে একদিন বাংলাদেশের বিশিষ্টজনদের একজন হবে। সেটি সত্যি হয়েছে, আম’রা গর্ববোধ করি। তার কম’র্ময় জীবন আরও সুখময় হউক। খাদিজা খাতুন বলেন, অজোপাড়া গায়ের সন্তান আমি। অবহেলিত ও অশিক্ষিত সেই সমাজের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই এবং মানুষের পার্শ্বে দাঁড়াতে চাই। প্রত্যাশিত আশা পূরণ হয়েছে তবে আমি অনেক দূর অগ্রসর হতে চাই।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে