শুক্রবার, ০১ জানুয়ারী, ২০১৬, ০২:৩৬:৪৪

মন্ত্রী-এমপি সমর্থিতদের শোচনীয় পরাজয়

মন্ত্রী-এমপি সমর্থিতদের শোচনীয় পরাজয়

রফিকুল ইসলাম রনি : পৌর নির্বাচনের ডামাডোল শুরুর পর থেকেই দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করতে তোড়জোড় শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ জন্য প্রথমে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে তৃণমূলের অভিমত অনুসারে কেন্দ্র থেকে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। সেসময় দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে দুই শতাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরপর এই বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই বিদ্রোহী প্রার্থীরা অভিযোগ তোলেন, তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী ঠিক করা হয়নি। প্রথমে সেই বিদ্রোহীদের কেন্দ্রে ডেকে এনে সমাঝোতার চেষ্টা, পরবর্তীতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম। এরপরও ৭১টি পৌরসভায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থেকে যান। তাই, তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ঘোষণা করা হয়, নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তারা কেউ জয়লাভ করতে পারবেন না। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে ফলাফল শেষে দেখা যায়, বিদ্রোহীরা ১৮টি পৌরসভায় নৌকা ডুবিয়ে বিজয়ের বরমাল্য পরেছেন। দলের প্রার্থী শুধু বিদ্রোহীদের কাছে হারেইনি, কোথাও কোথাও দ্বিতীয়ও হতে পারেননি। বিদ্রোহীদের কারও কারও জয়ের পেছনে কিছু স্থানীয় এমপি ও প্রভাবশালী নেতার হাত ছিল বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। আবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে নিজস্ব ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মাঠে রেখে ধরাশায়ী হয়েছেন বেশ কয়েকজন এমপি। কেন্দ্র থেকে এই এমপিদের বারবার সতর্ক করা হলেও তারা পাত্তা দেননি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলে শাহনেওয়াজ শাহেনশা। এতে নাখোশ হন জামালপুর-১ আসনের এমপি এবং সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। তিনি মেয়র প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন তার ভাতিজা নুরুন্নবী অপুকে। নিজস্ব নেতা-কর্মীদের মাঠে নামান ভাতিজার পক্ষে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তাকে লালকার্ড দেখিয়ে দলীয় প্রার্থীকেই জয়ী করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। নীলফামারীর জলঢাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আবদুল ওয়াহেদ বাহাদুর। কিন্তু স্থানীয় এমপি গোলাম মোস্তফার গোপন প্রার্থী ছিলেন বর্তমান মেয়র ইলিয়াস হোসেন বাবলু। এখানে আওয়ামী লীগের এবং এমপির পৃথক প্রার্থী থাকায় বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান মেয়র আবদুল্লাহ আল মামুন। তার সঙ্গে স্থানীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিরোধ থাকায় লিটন এক বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করান। তার পক্ষে কাজ করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশনাও দেন তিনি। দুজন প্রার্থী থাকায় এখানে বিএনপির প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। চট্টগ্রামের রাউজানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেবাশীষ পালিতের বিরুদ্ধে মাঠে বিদ্রোহী মীর মুনসুর আলমকে সমর্থন দেন স্থানীয় এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। কিন্তু দলের পক্ষেই রায় দেয় জনগণ এবং বিজয়ী হন দেবাশীষ। বিদ্রোহীদের জয়জয়কার : সিলেটের গোলাপগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল জব্বার চৌধুরী মোবাইল ফোন প্রতীকে ৪ হাজার ৫৮২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আমিনুর রহমান লিপন নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে ২ হাজার ৯৮৯ ভোট পেয়েছেন। কানাইঘাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী মো. নিজাম উদ্দিন আল মিজান নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে ৩ হাজার ৩৭৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র মো. লুত্ফুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে ২ হাজার ৮৯৭ ভোট পেয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভায় ১০ হাজার ৩১০ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কারিবুল হক রাজিন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলী পেয়েছেন ৬ হাজার ১৫৭ ভোট। বগুড়ার ধুনট পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৪ হাজার ভোট পেয়ে এ জি এম বাদশাহ (জগ) বেসরকারিভাবে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত আলিমুদ্দিন হারুন মণ্ডল (ধানের শীষ) পেয়েছেন ২ হাজার ৪৬৪ ভোট। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শফিউল আলম ইউনুস ৪ হাজার ৩৩১ ভোট পেয়ে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কামাল আহমদ জুনেদ পেয়েছেন ৪ হাজার ১৭৪ ভোট। পাবনার চাটমোহর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মির্জা রেজাউল করিম দুলাল ৩ হাজার ৫৩৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী প্রফেসর আবদুল মান্নান পান ২ হাজার ৯০৩ ভোট। দিনাজপুরের বিরামপুর পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৯ হাজার ৭৬৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আক্কাস আলী পেয়েছেন ৯ হাজার ২৩ ভোট। মেহেরপুরের গাংনী পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম ভেন্ডার ৭ হাজার ১৭৭ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী আহমেদ আলী পেয়েছেন ৫ হাজার ৩৮৮ ভোট। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুস সাত্তার ৭ হাজার ২১১ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব পেয়েছেন ৬ হাজার ৬৩৬ ভোট। ত্রিশালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এ বি এম আনিসুজ্জামান ৭ হাজার ২৪৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপির আমিনুল ইসলাম আমিন (ধানের শীষ) ৫ হাজার ৭৫৯ ভোট। -বিডি প্রতিদিন ১ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে