শনিবার, ০২ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৬:২০:৫৬

তছনছ বিএনপির দুর্গ, তলানিতে জাতীয় পার্টি

তছনছ বিএনপির দুর্গ, তলানিতে জাতীয় পার্টি

মুহাম্মদ আলম : পৌর নির্বাচনে বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাংগঠনিক দীনতা চরমভাবে ফুটে উঠেছে। নির্বাচনে বিদ্রোহীদের আগুনে পুড়েছে আওয়ামী লীগ। তছনছ হয়ে গেছে বিএনপির সবচেয়ে বড় দুই দুর্গ। অপরদিকে তৃতীয় বৃহত্তর রাজনৈতিক জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। নির্বাচনের আগে এ দলটির চেয়ারম্যান এরশাদ ও মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলু দেশত্যাগ করে ব্যাংকক অবস্থান করায় তাদের রাজনীতি করার আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নকে চ্যালেঞ্জ করে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থী নির্বাচনে সরাসরি দলকে চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। দলের ভেতর থেকেই তৃণমূল কর্মীরা বলছেন সরকার হিসেবে আওয়ামী লীগ খুব ভালো করলেও রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা ‘ঐক্যবদ্ধতার ঐতিহ্য’ হারিয়েছে। বেশ কিছুটা ঢিলেঢালা হয়ে গেছে দলীয় নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার বন্ধন। এবারের পৌর নির্বাচনে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে বিএনপি নির্বাচনী মাঠে দাঁড়াতেই পারেনি। অথচ এ বিভাগ দুটি ছিল বিএনপির সাংগঠনিক দুর্গ। চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৭টি পৌরসভার মধ্যে মাত্র একটিতে ধানের শীষ জয় পেয়েছে। রাজশাহীতে এ দলটির একই অবস্থা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে এসব এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থীরা নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন। কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামে বিএনপির পরাজয়কে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অতি আত্মবিশ্বাস আর মনোনয়ন বাণিজ্যের নেতিবাচক প্রভাব হিসেবেই দেখছেন তৃণমূল কর্মীরা। তারা বলেন, দলের সাবেক এমপিরা পৌর নির্বাচনে কোনো তদারকিই করেননি। নিজের লোককে মনোনয়ন দিয়েই তারা দায়িত্ব পালন করেছেন। কর্মীরা কিভাবে মাঠে নির্বাচন করেছেন তার কোনো খবর তারা রাখেননি। যে কোনো বিএনপির এ দুর্গে তাদের পরাজয় হয়েছে। তারা নির্বাচনী অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ গড়তেও ব্যর্থ হয়েছেন। নির্বাচনের দিন কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশিরভাগ নেতাই এলাকায় ছিলেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির লক্ষ্মীপুরের এক নেতা মানবকণ্ঠকে জানান। রংপুর বিভাগ ছিল জাতীয় পার্টির দুর্গ। সেখানে তাদেরও চরম পতন হয়েছে। এখানে উত্থান হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুর রহমান মিয়া কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে মেয়র পদে এ বিভাগে কেবল মাত্র জয়ী হয়েছেন। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগেও একই অবস্থা। তছনছ হয়ে গেছে বিএনপির ঘর। সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কর্মীরা স্লোগান দিত- গর্ব মোদের আলাদা ফেনীর মেয়ে খালেদা। সেই গর্বেও চিড় ধরেছে। ফেনীতে বিএনপির কোনো মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি। একই অবস্থা গোপালগঞ্জে। শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই ছিল এ জেলার মানুষের কাছে চূড়ান্ত। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম হয়ে গেছে। সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাজা মিয়া বাটুর ভাতিজা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মুশফিকুর রহমান লিটন খোদ আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে গোপালগঞ্জ সদরের পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি নির্বাচিত হতে না পারলেও চার হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন। ভোটের অঙ্কে তার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা দলের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবার নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন। এদের বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। এসব প্রার্থীর মধ্যে ১৮ জন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। যাদের সবাই দল থেকে বহিষ্কৃত। নির্বাচিত হওয়ায় তারা আবার দলে ফেরার চেষ্টা করছেন। তবে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে না। তারা আর আওয়ামী লীগে আসার সুযোগও পাবে না। আগামী কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ তাদের গঠনতন্ত্রে এমন একটি সংশোধনী আনারও সক্রিয়ভাবে চিন্তা করছে। উল্লেখ্য, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচিত নৌকা প্রতীক জিতেছে ১৭৭টিতে, বিএনপির প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয় পেয়েছেন ২২টিতে। স্থানীয় সরকারের এই ভোটে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ বিএনপি করলেও নির্বাচন কমিশন বলছে, ‘বিচ্ছিন্ন’ কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ। আওয়ামী লীগও ভোট নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর এবারই প্রথম বাংলাদেশে দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচন হলো, যাতে সংসদ নির্বাচনের মতোই মেয়র প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় সাত বছর পর নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের লড়াই নিয়ে দেশবাসীর মধ্যেও আগ্রহ ছিল এই পৌর নির্বাচন ঘিরে। বাংলাদেশের মোট ভোটারের মাত্র ৭ শতাংশের অংশগ্রহণ এই নির্বাচনে থাকলেও সব জেলায় ভোট হওয়ায় তা মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছিল প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের তৎপরতায়। বিএনপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনকারী আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনকে দেখেছিল সরকারের কাজের প্রতি জনগণের সমর্থন প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে। অন্যদিকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপির কাছে এই নির্বাচন ছিল ‘আন্দোলনের অংশ’। অর্থাৎ এই ভোটে জয়ী হলে তারা বলতে পারত, তাদের দাবির প্রতি রয়েছে জনগণের সমর্থন। তবে ভোট শেষের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেন, ২০০টি পৌরসভায় কেন্দ্র দখল করে ক্ষমতাসীনরা নির্বিচারে সিল মেরেছে ব্যালটে। সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। আমরা যে আশঙ্কা করেছিলাম, তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্ট আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকার জন্য। বলেছেন, বিএনপি এই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকবে কিনা এ নিয়ে জনমনে শঙ্কা বিরাজ করছিল। নির্বাচনে অংশগ্রহণ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও শেষ পর্যন্ত থাকার জন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানাই। সব পৌরসভায় একজন করে মেয়র, সংরক্ষিত ৭৩১টি ও সাধারণ কাউন্সিলরে ২ হাজার ১৯৩টি পদের এই নির্বাচনে অংশ নেন ১২ হাজার প্রার্থী। এর মধ্যে ২২২টিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা মুখোমুখি লড়াইয়ে ছিলেন। - মানবকণ্ঠ ২ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে