বুধবার, ০৬ জানুয়ারী, ২০২১, ১১:৫২:৩৮

ভালোবেসে ভারতীয় হিন্দু মেয়েকে বাংলাদেশে এনে বিএনপি নেতার ছেলের বিয়ে!

ভালোবেসে ভারতীয় হিন্দু মেয়েকে বাংলাদেশে এনে বিএনপি নেতার ছেলের বিয়ে!

নিউজ ডেস্ক : বিএনপি নেতা ও নরসিংদীর সাবেক সংসদ সদস্য সর্দার শাখাওয়াত হোসেন বকুলের ছেলে লন্ডনে পড়াশোনা করতে গিয়ে এক ভারতীয় হিন্দু মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। সেই ঘটনায় মেয়েটির শিল্পপতি বাবা চেন্নাই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলে তদন্তের ভার পায় ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। 

কিন্তু প্রায় দীর্ঘ ছয় মাসের তদন্ত শেষে ওই সংস্থাটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে এটি 'লাভ জিহাদ' বা জোর করে ধর্মান্তরের কোনও ঘটনা নয়। ওই সংস্থার পক্ষ থেকে ঢাকায় বিএনপি নেতার পুত্রবধূর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। হোয়াটসঅ্যাপে তিনি এনআইএকে জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে ওই বিয়ে করেছেন এবং স্বামীর সঙ্গে সংসারে তিনি খুশি, তার কোনও অভিযোগও নেই।

এই কথোপকথনের ভিত্তিতে এনআইএ এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছেছে যে বাংলাদেশের এক মুসলিম রাজনীতিবিদের ছেলে ও চেন্নাইয়ের এক হিন্দু শিল্পপতির মেয়ের এই বিয়েটি 'আন্তর্জাতিক লাভ জিহাদে'র কোনও ঘটনা নয়। দিন কয়েকের মধ্যেই এনআইএ এই ব্যাপারে আদালতে তাদের তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করবে বলেও পত্রিকাটি জানাচ্ছে, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ওই সংস্থার কর্মকর্তারা এখনও বিষয়টিকে 'তদন্তাধীন' বলেই বর্ণনা করছেন।

প্রসঙ্গত, ভারতে যখন কোনও মুসলিম যুবক ভালোবেসে হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করেন, হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলো সেই ঘটনাকে লাভ জিহাদ বলেই বর্ণনা  করে থাকে। যদিও ভারতের আদালতে বা পুলিশের ডায়েরিতে এটা স্বীকৃত কোনও শব্দ নয়। তবে ভারতে উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যে ইতোমধ্যে এই তথাকথিত লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে আইন হয়েছে, আরও বেশ কয়েকটি রাজ্যে আইন প্রণয়নের প্রস্তুতি চলছে।

চেন্নাইয়ের মেয়ে ও ঢাকার ছেলের লন্ডনের মাটিতে প্রেম-ভালোবাসা ও পরিণয়কে ঘিরে এই বিতর্কের শুরু গত বছরের মে মাসে, যখন মেয়েটির বাবা ভারতীয় পুলিশের কাছে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। ওই ব্যক্তি আদতে উত্তর ভারতের হলেও চেন্নাইয়ের রোয়াপুরম এলাকায় তিনি এখন একটি বিশাল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিক।

লন্ডনে তার মেয়ের 'ব্রেনওয়াশ' করার সময় বিতর্কিত ধর্মীয় প্রচারক জাকির নায়েকের বিভিন্ন ভিডিও ব্যবহার করা হয়েছিল বলেও দাবি করেন মেয়েটির বাবা। চেন্নাই পুলিশ অবশ্য নিজেরা এই ঘটনার তদন্ত করেনি। চেন্নাইয়ের পুলিশ কমিশনার মহেশ কুমার আগরওয়াল জানিয়েছেন, যেহেতু এই অভিযোগের ঘটনায় 'আন্তর্জাতিক ও ধর্মীয় মাত্রা রয়েছে' তাই তারা এর তদন্তের ভার ছেড়ে দেন ভারতের সর্বোচ্চ সন্ত্রাস-বিরোধী তদন্ত সংস্থা এনআইএ'র হাতে।

এনআইএ এই অভিযোগের তদন্ত শুরু করে গত বছরের আগস্ট মাসে। প্রায় ছয় মাসের তদন্ত শেষে তারা এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছেছে যে চেন্নাইয়ের মেয়েটি নিজের ইচ্ছাতেই মুসলিম হয়ে এই বিয়ে করেছে এবং এখন বাংলাদেশে সুখেই সংসার করছে। ফলে এটা আর যা-ই হোক, 'লাভ জিহাদে'র কোনও দৃষ্টান্ত নয়।

এর আগে ভারতের কেরালায় শাফিন জেহান নামে এক মুসলিম যুবকের সঙ্গে হাদিয়া নামে ইসলামে ধর্মান্তরিত একটি মেয়ের বিয়ের ঘটনা লাভ জিহাদ কি না, সে ঘটনারও তদন্ত করেছিল এনআইএ। গোটা ভারতে তুমুল আলোড়ন ফেলা সেই ঘটনাতেও এনআইএ রায় দিয়েছিল সেখানে জোর করার কোনও ঘটনা ঘটেনি, আর এখন তাদের তদন্তে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেতে চলেছে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক পরিবার।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে