বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১, ১২:১৯:৩২

বহিষ্কৃত মেজর ও ভয়ংকর সেই জঙ্গি জিয়া এখন কোথায়?

বহিষ্কৃত মেজর ও ভয়ংকর সেই জঙ্গি জিয়া এখন কোথায়?

নিউজ ডেস্ক : নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) ও আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে চিহ্নিত ভয়ংকর জঙ্গি মেজর (বহিষ্কৃত) সৈয়দ মো. জিয়াউল হক জিয়ার হদিস মেলেনি গত সাত বছরেও। দেশে ব্লগার হত্যাসহ জঙ্গিদের বড় বড় তৎপরতার প্রায় প্রতিটিতেই তার সম্পৃক্ত থাকার তথ্য পুলিশ জানালেও তিনি কোথায় আছেন, তা কেউ জানাতে পারেনি।

২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব হায়দার খুনের পরই জিয়ার জঙ্গি অপতৎপরতার তথ্য পায় তদন্তকারীরা। পরে একে একে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়, প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন, ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নাজিমুদ্দিন সামাদ, নিলাদ্রী নিলয়, মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে হত্যা এবং প্রকাশক আহমেদুর রশিদ টুটুলসহ তিনজনকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জিয়া সম্পৃক্ত বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। 

তার নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় ছোট স্লিপার সেলে বিভক্ত হয়ে হত্যার মিশনে নেমেছে, এমন অন্তত ৩০ জনের নাম পেয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তাদের অনেকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হলেও এখনো 'রহস্যমানব' হয়েই রয়ে গেলেন জিয়া। গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশক দীপন হত্যা মামলায় জিয়াসহ আট জঙ্গিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।

আর যে লেখকের বই প্রকাশ করেছিলেন দীপন, সেই বিজ্ঞান বিশ্লেষক লেখক অভিজিৎ হত্যা মামলায় গতকাল মঙ্গলবার দেওয়া রায়ে জিয়াসহ পাঁচজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। অভিজিৎ হত্যা মামলায় জিয়াকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় ২০১৯ সালের ৫ মে তার সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত। গত ১২ জানুয়ারি ব্লগার নিলাদ্রী নিলয় হত্যা মামলায়ও পলাতক জিয়ার সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সিটিটিসি ইউনিটের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, জিয়া এখনো পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। সিটিটিসির উপকমিশনার (কাউন্টার টেররিজম) সাইফুল ইসলাম বলেন, 'একাধিক মামলায় সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়ায় আমরা তাকে খুঁজছি।' ২০১৬ সালে গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলার পর জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করে সরকার। তবে গত কয়েক বছরে এই জঙ্গি নেতার অবস্থান জানাতে পারেনি পুলিশের জঙ্গি দমন ও তদন্তে নিয়োজিত ইউনিটগুলো। 

সর্বশেষ তথ্য মতে, ঢাকা ও ঢাকার উপকণ্ঠ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, টেকনাফ-কক্সবাজার এলাকায় অবস্থান করে স্লিপার সেলের সমন্বয় করেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি নিষ্ক্রিয় বলে দাবি করেছে একটি সূত্র। তদন্তকারী সূত্র জানায়, জিয়া সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কর্মরত ছিলেন। ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনে সরকার উতখাতে ধর্মান্ধ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা নস্যাৎ করার খবর দেয়। সেই দলে থাকা জিয়া ঘটনার পরেই পালিয়ে যান। 

পরবর্তী সময়ে একের পর এক ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক-প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হত্যার প্রেক্ষাপটে আবারও তার নাম আলোচনায় আসে। একসময় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) তাত্ত্বিক নেতা মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানির ঘনিষ্ঠ ছিলেন জিয়া। ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব হায়দার খুনের পর এবিটিতে জিয়ার কার্যক্রম প্রকাশ পায়। জসিমউদ্দিন রাহমানি গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে জেলে রয়েছেন।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, জিয়ার বাবার নাম সৈয়দ মোহাম্মদ জিল্লুল হক। তাদের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের মোস্তফাপুরে। পালানোর পর জিয়াকে ধরতে পটুয়াখালী শহরের সবুজবাগ এলাকায় তার শ্বশুর মোখলেছুর রহমানের বাসায় দফায় দফায় অভিযান চালায় পুলিশ। তার শাশুড়ি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা হামিদা বেগম সেই সময় গণমাধ্যমকে জানান, জিয়া পটুয়াখালীর বাসায় কখনো আসেননি। মৌলভীবাজারের গ্রামের বাড়িতে তার যাতায়াতের তথ্যও নেই প্রশাসনের কাছে। সূত্র : কালেরকণ্ঠ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে