আ.লীগের সম্মেলন ফেব্রুয়ারিতে, কে হবেন সাধারণ সম্পাদক?
আনোয়ার হোসেন: পৌর নির্বাচন না যেতেই আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মূল আলোচনা এখন দলের জাতীয় সম্মেলন নিয়ে। আগামী মাসেই ত্রিবার্ষিক এই সম্মেলন এবং নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। আগামীকাল শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সম্মেলনের দিনক্ষণ ঠিক হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। নেতাদের মতে, দলের সাধারণ সম্পাদক পরিবর্তন হচ্ছে কি না, এটাই সম্মেলনের মূল আকর্ষণ। কারণ, সভাপতি পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই যে থাকছেন, এ বিষয়ে দ্বিমত নেই কারও মধ্যে। সম্মেলনের আগে কেউ নির্দিষ্ট কোনো পদের প্রার্থী হিসেবে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন না। এবারও সম্মেলন ঘিরে এমন তৎপরতা দেখা যায়নি। তবে হাবভাবে, দলীয় কর্মকাণ্ডের তৎপরতায় এবং নিজ অনুসারীদের মধ্যে একান্ত আলোচনায় কেউ কেউ নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন। এর ফলে তৈরি হয়েছে নানা বলয়ও।
আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, সাধারণ সম্পাদকের বাইরে আরেকটি আগ্রহের জায়গা হচ্ছে—জ্যেষ্ঠ যেসব নেতাকে এক-এগারোর পর সভাপতিমণ্ডলীর পদ থেকে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা পরিষদে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা পুরোনো অবস্থানে ফিরছেন কি না। কারণ, তাঁদের অনেকেই এখন সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এর বাইরে সম্পাদকমণ্ডলীর পদে কারা থাকছেন, বাদ পড়ছেন কে কে—এটাও আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে তিন বছর পরপর জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পাওয়ার অন্যতম শর্তে সব পর্যায়ে নির্বাচিত কমিটি থাকার কথা রয়েছে। দলটির সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। অর্থাৎ বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ডিসেম্বরেই। তবে গঠনতন্ত্রে নতুন কমিটি নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আগের কমিটি বহাল থাকার কথা উল্লেখ আছে। জাতীয় সম্মেলনে সারা দেশ থেকে দলের নেতা পর্যায়ের ছয়-সাত হাজার প্রতিনিধি অংশ নিয়ে থাকেন। মূলত জেলা কমিটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে এই নাম ঠিক করে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলন ডিসেম্বরেই করার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু পৌরসভা নির্বাচনের কারণে পিছিয়ে গেছে। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচন হয়েছে। ফলে দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততা ছিল নির্বাচনকেন্দ্রিক। এখন ফাঁকা সময় আছে। সম্মেলন হয়ে যাবে।
সর্বশেষ সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে সভাপতি ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রস্তাব করা হলে সারা দেশের প্রতিনিধিরা সর্বসম্মতভাবে একমত পোষণ করেন। সভাপতি শেখ হাসিনা সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের বাছাই করেন। এবারও একই পদ্ধতিতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে বলে দলের নেতারা মনে করছেন।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আগামী জুনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা আছে। এই নির্বাচনও দলীয় প্রতীকে হবে। সব দিক বিবেচনায় ফেব্রুয়ারিকেই কাউন্সিলের উপযুক্ত সময় মনে করছেন দলের নেতারা। দলীয় সভাপতির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক নানা আলোচনায় এমন ইঙ্গিতই পাওয়া গেছে বলে একাধিক নেতা জানান। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের কালকের বৈঠক থেকে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যসংখ্যা ৭৩। এর মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৫ জন। এর বাইরে রয়েছে জাতীয় পরিষদ ও উপদেষ্টা পরিষদ। জাতীয় পরিষদ ২৬৬ ও উপদেষ্টা পরিষদ ৪১ সদস্যের। দলীয় সূত্র জানায়, ২০১২ সালের কাউন্সিলের পর জাতীয় কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি। অথচ ছয় মাস পরপর এই কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা এবং দলের আয়-ব্যয় অনুমোদন দেওয়ার এখতিয়ার এই কমিটির। দলের সভাপতিমণ্ডলী ও উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকও হয়েছে দু-একটি।
আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২০০৮ সাল থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক। এরই মধ্যে দীর্ঘদিনের রীতি ভেঙে তাঁকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই আলোচনা শুরু হয় তাঁকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয় কি না। তবে সবটাই নির্ভর করছে দলীয় সভাপতির ওপর।
গঠনতন্ত্র অনুসারে দলীয় প্রধান ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ১৩ জন হবেন। তবে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন মারা যাওয়ায় এবং আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বহিষ্কৃত হওয়ায় দুটি পদ ফাঁকা হয়েছে। ৭৩ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ২৬ জন। আর বাকিগুলো সম্পাদকীয় পদ। এবারের সম্মেলনে যুগ্ম সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলী ও সদস্যপদে বড় রদবদলই হবে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। কারণ, এই পদগুলোর অধিকাংশ নেতাই প্রায় ছয় বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া ময়মনসিংহ (পরবর্তীকালে কুমিল্লা ও ফরিদপুর) বিভাগের কার্যক্রম শুরু হলে সাংগঠনিক সম্পাদকের সংখ্যা সাত থেকে বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে সদস্যসংখ্যা কমে যাবে।
কমিটি সব হয়নি: জাতীয় সম্মেলনের আগে সারা দেশের সাংগঠনিক জেলাগুলোরও সম্মেলন হওয়ার কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগের ৭২টি সাংগঠনিক জেলার ৯টিতে সম্মেলন হয়নি। এর মধ্যে কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগ হয়ে যাবে, এ জন্য মহানগর ও জেলা কমিটি আলাদা হবে। যে ৬৩টি জেলায় সম্মেলন হয়েছে, ৩০টিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হয়েছে।
২০১২ সালে জাতীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সেখানে আগের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয় দলীয় প্রধানের ওপর। কিন্তু গত তিন বছরে সেই কমিটি হয়নি। পুরোনো কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, দলের নীতিনির্ধারকেরা ঢাকাকে ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করার কারণে কমিটি করতে দেরি হয়েছে। এ বছরের শুরুতে দলের দুই সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক ও ফারুক খানকে দুই কমিটির জন্য সুপারিশ তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁরা উত্তরে এ কে এম রহমত উল্লাহকে সভাপতি ও সাদেক খানকে সাধারণ সম্পাদক প্রস্তাব করে কমিটি জমা দিয়েছেন। আর দক্ষিণে এম এ আজিজকে সভাপতি ও শাহে আলম মুরাদকে সাধারণ সম্পাদক করার প্রস্তাব করা হয়। তবে এই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীসহ একটি পক্ষ তৎপরতা চালালে তা আটকে যায়।-প্রথম আলো
৮ জানুয়ারি ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের/রাসেল
�