শুক্রবার, ০৮ জানুয়ারী, ২০১৬, ১১:০৯:০৮

ভিক্ষা নয়, প্যাডেলে পা রেখেই জীবন চলে ৮৫ বয়সী ইয়াসিনের

ভিক্ষা নয়, প্যাডেলে পা রেখেই জীবন চলে ৮৫ বয়সী ইয়াসিনের

কমল জোহা খান : শীতের হিমেল ভোরে রাজধানী যখন সরব হয়ে উঠতে শুরু করেছে, তখনই মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনে যাত্রী খুঁজে বেড়াচ্ছেন একজন রিকশাচালক। অন্য দশজন রিকশাচালক থেকে সহজেই আলাদা করা যায় এই অশীতিপরকে। এই বয়সে তাঁর যখন বিশ্রামে থাকার কথা, শুয়েবসে ধর্মকর্ম করে দিন কাটানোর কথা, সেখানে তিনি ৮৫ বছরের দেহটাকে সঁপে দিয়েছেন রিকশার কায়িক আসনে। তাঁর দায় ঠেকা জীবন বয়ে বেড়াচ্ছে জীবিকার বোঝা। কিছু দিন আগেও এই রিকশাচালক ইয়াসিন মিয়ার ছিল সাজানো-গোছানো সংসার। ভোলার মির্জাখালিপুর এলাকায় ফসলি জমি, ভিটেবাড়ি নিয়ে সচ্ছল জীবন ছিল ইয়াসিন মিয়ার। দেড় বছর আগে রোগেভুগে মারা গেছেন তাঁর ৫০ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে আবুল কালাম। একই বছর নদীর ভাঙনে তাঁর ফসলি জমি, ভিটেবাড়ি সবই গেছে। গ্রামে কাজ নেই। তাই বাধ্য হয়ে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছেন তিনি। লক্ষ্য একটাই—কাজের বিনিময়ে দুবেলার অন্ন জোগাবেন। মিরপুর ১৩ নম্বর বাইশটেকি বস্তিতে একটি ছোট ঘর ভাড়া নিয়েছেন দুই হাজার ৪০০ টাকায়। কিন্তু বয়স হয়েছে বলে সহজে কেউ তাঁকে কাজ দিতে চায় না। বাধ্য হয়ে পরিচিত এক ব্যক্তির গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে চালাতে শুরু করেছেন। ঢাকার বড় বড় সড়কে রিকশা চালানোর সাহস বা শক্তি কোনোটাই তাঁর নেই। আবার ভাঙা সড়কে রিকশার প্যাডেল চাপতেও কষ্ট হয়। এমনই উভয় সংকট তাঁর। এর পরও কারও কাছে হাত পাততে নারাজ ইয়াসিন মিয়া। প্রথম আলোকে ইয়াসিন মিয়া বলেন, ‘জীবনে কখনো ভিক্ষা করি নাই। ছেলে মারা যাওয়ায় শোক কাটতে না কাটতে জমি হারাইছি। হাত পাততে পারি না। আবার কাম করারও শক্তি নাই।’ ইয়াসিন মিয়া জানান, দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ওদের কাছেও সাহায্য চাইতে মন সায় দেয় না। দুটি মেয়ে রেখে তাঁর ছেলে মারা যান। গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে দুই নাতনি। বৃদ্ধ বয়সে দুই নাতনির দেখভালেরও দায়িত্ব নিতে হচ্ছে তাঁকে। তিনি বলেন, প্রতিদিন ৭০ টাকায় রিকশা ভাড়া নেন। রিকশা চালিয়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা ওঠে। এ দিয়ে কোনোরকমে চলছেন তাঁরা।-প্রথম আলো ৮ জানুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে