স্বর্ণের দাম কমায় রেকর্ড
হামিদ বিশ্বাস : বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমায় রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ও বেশি পরিমাণে কমেছে বিদায়ী বছরে। এ সময় ৯ দফায় স্বর্ণের দাম ওঠানামা করে। এর মধ্যে ৭ দফায় কমেছে। বেড়েছে মাত্র ২ দফায়।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) তথ্য অনুযায়ী, ২২শে জানুয়ারি সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) বিক্রি হয় ৪৬ হাজার ১৪ টাকা। দীর্ঘ ওঠানামার পর সর্বশেষ ৫ই ডিসেম্বর তা নেমে আসে ৪১ হাজার ২৯১ টাকায়। একইভাবে জানুয়ারিতে ২১ ক্যারেটের ভরিপ্রতি স্বর্ণ বিক্রি হয় ৪৩ হাজার ৯১৫ টাকা।
ডিসেম্বরে তা নেমে এসেছে ৩৯ হাজার ১৯১ টাকায়। জানুয়ারিতে ১৮ ক্যারেটের প্রতিভরি স্বর্ণ বিক্রি হয় ৩৭ হাজার ২৬৬ টাকা। ডিসেম্বরে তা নেমে আসে ৩২ হাজার ৫৪৩ টাকায়। আর সনাতন পদ্ধতির ভরিপ্রতি স্বর্ণ বছরের শুরুতে ২৫ হাজার ৫৪৪ টাকায় বিক্রি হলেও বছর শেষে তা নেমে আসে ২১ হাজার ৪৬২ টাকায়।
বাজুস নির্ধারিত নতুন মূল্য তালিকা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম কমে ৪ হাজার ৭২৩ টাকা, ২১ ক্যারেটের ভরিপ্রতি স্বর্ণের দাম কমে ৪ হাজার ৭২৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতিভরি স্বর্ণের দাম কমে ৪ হাজার ৭২৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির ভরিপ্রতি স্বর্ণের দাম কমে ৪ হাজার ৮২ টাকা। সব মিলিয়ে বছরে ৪ ধরনের স্বর্ণের দাম কমেছে ১৮ হাজার ২৫২ টাকা।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে সমন্বয় করেছি। সাধারণত দাম কমলে কিছুটা ক্ষতি হয়। যেহেতু সব কিছুর দাম ঊর্ধ্বগতি। ১ কোটি টাকার জমি বেড়ে হচ্ছে ৫ কোটি টাকা। সে তুলনায় ক্ষতি হচ্ছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ মোটেও বেশি নয়। যা হচ্ছে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন শীর্ষ পর্যায়ের এই স্বর্ণ বিক্রেতা।
জানা গেছে, গেল বছরের বেশির ভাগ সময়ই আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম নিম্নমুখী ছিল। টানা তিন বছর ধরে দাম নিম্নমুখী থাকলেও এই মূল্যবান ধাতুর দাম সবচেয়ে বেশি কমেছে ২০১৫ সালে। এ সময় প্রায় ৯ শতাংশ দাম কমেছে বলে এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়। বিদায়ী বছরের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে আউন্স প্রতি স্বর্ণের দাম ৫ দশমিক ৯০ ডলার বেড়ে ১ হাজার ৭৪ দশমিক ২০ মার্কিন ডলার হয়েছিল। কিন্তু সে দাম বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দাম হারায় এ পণ্যটি।
মার্চের শুরুতে বড় পতন দেখা যায় স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজারে। এতে জানানো হয়েছে, বছরের বেশির ভাগ সময় আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ওঠানামা করলেও মূলত নিম্নমুখী ছিল এই পণ্যের দাম। চলতি মাসের শুরুতে বিশ্বজুড়ে মূল্যবান এই ধাতুর দাম শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ কমার পর গত বৃহস্পতিবার শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ মাসের শুরুতে যে দামে স্বর্ণ পাওয়া গিয়েছিল, শেষের দিকে এসে তার থেকে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কমে পাওয়া যাচ্ছে এই ধাতু। বছরের শুরু থেকে প্রায় প্রতি মাসেই এমন চিত্র দেখা গেছে।
২০১৫ সালের মার্চে বড় পতনের পর আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে আবারও বড় পতন দেখা গেছে স্বর্ণের বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার ফলে দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
বছরজুড়ে বেশ কয়েকবার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে স্বর্ণের দামের সমন্বয় করতে হয়েছে দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের। মার্চ, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে দাম কমিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস)।
এমনকি এক মাসের মধ্যে একাধিকবার দাম কমানোর ঘটনাও ঘটেছে দেশের বাজারে। এদিকে স্বর্ণের পাশাপাশি কমেছে রুপার দামও। আগে ২১ ক্যাডমিয়ামের প্রতি ভরি রুপার দাম ছিল ৯৩৩ টাকা। গত ৫ই ডিসেম্বর থেকে তা বিক্রি হচ্ছে ৮৭৫ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি ভরিতে রুপার দাম কমেছে ৫৮ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে এই পণ্যগুলোর দাম কমার কারণে বেশ কয়েকবার মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে দেশের বাজারেও। -মানবজমিন
৯ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি
�