প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ নয়, দুই পরিবার
মাহমুদ আজহার : ‘দেশে কোনো রাজনীতি নেই, আছে শুধু ক্ষমতার কাড়াকাড়ি। কেউ টিকে থাকার জন্য রাজনীতি করছে, কেউ বা করছে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। কোনো রাজনৈতিক দলে নেই আদর্শের রাজনীতি। গণতন্ত্রও নেই, এখন চর্চাও করা হয় না।
দুই পরিবারের কাছে এখন সব ক্ষমতা। রাষ্ট্র পরিচালনা হয় মূলত ওই দুই পরিবার থেকেই। সংবিধানে থাকলেও প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ নয়, দুই পরিবার। জনগণকে জাগতে হবে। নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।’
আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বললেন বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব একসময়ের প্রভাবশালী রাজনীতিক আশরাফ হোসেন।
‘সংস্কারপন্থি’ অভিযোগে বিএনপি থেকে ছিটকে পড়েছেন চারবার নির্বাচিত সাবেক এই সংসদ সদস্য। খুলনা-৩ আসন তার নির্বাচনী এলাকা। থাকেন ঢাকায়। মাঝেমধ্যে যান নির্বাচনী এলাকায়। আবার মাঝেমধ্যে ঘুরে আসেন পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায়।
একসময়ের তুখোড় এ রাজনীতিবিদের এখন বেশির ভাগ সময় কাটে বই বা পত্রিকা পড়ে। ৭৫ বছর বয়সী আশরাফ হোসেন রাজধানীর নিকুঞ্জে সপরিবারে বসবাস করছেন। ১০ ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। মুক্তিযুদ্ধে এক ভাই শাহাদাতবরণ করেন, আরেকজন মুক্তিযুদ্ধে পঙ্গু হয়ে পরে মারা যান। আশরাফ হোসেন নিজেও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন।
জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ আশরাফ জানান, ‘আমাদের সংবিধানে বলা আছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। প্রজাতন্ত্র একটা কনসেপ্ট। বাস্তবে কি তাই? মনে হয় না। বাংলাদেশকে এখন গণপ্রজাতন্ত্রী বলা যাচ্ছে না। কারণ দুই পরিবারের কাছে জনগণ এখন জিন্মি। সাংবিধানিক চার মূলনীতির কোনোটারই বাস্তবতা নেই বাংলাদেশে। দেশে না আছে গণতন্ত্র না সমাজতন্ত্র। সব কিছু শুধুই কাগজে কলমে। দুই পরিবারের মধ্যেই ক্ষমতার হাতবদল হচ্ছে। বলা চলে দেশের মালিক এ দুই পরিবার।’
আশরাফ হোসেন বলেন, ‘রাষ্ট্রের পরিচালনায় জনগণের কোনো অংশীদারিত্ব নেই। তাদের মতামতেরও তোয়াক্কা করা হয় না। এখন জনগণ ভোটাধিকার থেকেও বঞ্চিত। যে পরিবার ক্ষমতায় থাকে, তারাই নির্ধারণ করে দেয় রাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হবে। জনগণ শুধু উপলক্ষ মাত্র। কাজেই কোনোভাবেই বাংলাদেশকে গণপ্রজাতন্ত্রী বলা যাবে না। গণতন্ত্রের নামে দেশে এখন পরিবারতন্ত্র কায়েম হয়েছে।’
তার মতে, ‘আম জনতাকে তাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কারণ সাংবিধানিকভাবে তারাই রাষ্ট্রের মালিক। দেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসনসহ সাংবিধানিকভাবে দেশ পরিচালনায় জনগণকেই জেগে উঠতে হবে। দেশকে রক্ষা করতে হবে। টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কারণ যারাই ক্ষমতায় থাকে, তারা শুধু ব্যক্তিতন্ত্র বা মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীতন্ত্রের কথাই ভাবে। আম জনতার কথা ভাবে না।’ দেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে হতাশ এই প্রবীণ রাজনীতিক।
তার ভাষায়, ‘এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। রাজনীতিতে নেই পরমতসহিষ্ণুতা। প্রতিহিংসার রাজনীতি দেশকে বিভাজন করে ফেলছে। এখন আর আদর্শের রাজনীতি চলে না। ক্ষমতার জন্যই সব রাজনীতি। এটা আগে কখনো দেখা যায়নি। তাই জনগণকেই সজাগ হতে হবে। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
নতুন কোনো রাজনৈতিক দল করার চিন্তাভাবনা আছে কিনা— জানতে চাইলে আশরাফ হোসেন বলেন, ‘আপাতত কিছু ভাবছি না। যদি কখনো নতুন কিছু করি, সবাইকে জানিয়েই করব। সবার সহযোগিতা চাইব।’ আশরাফ হোসেন তার সুস্বাস্থ্যের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। -বিডি প্রতিদিন
৯ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি
�