মঙ্গলবার, ০১ জুন, ২০২১, ১২:৩৩:৩৩

ভয়ংকর এলএসডি মাদকসেবিদের হাসিতে এবার হতবাক আইনজীবীরা

ভয়ংকর এলএসডি মাদকসেবিদের হাসিতে এবার হতবাক আইনজীবীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম খান বলেছেন, ভয়ংকর মাদক এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড) সেবনের প্রভাবে তারা আদালতে হাস্যজ্জ্বল আচরণ করেছে। যা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত।

তাই তরুণ সমাজ বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মাদকের হাত থেকে বাঁচাতে পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রকে সচেতনতার সঙ্গে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন এ সমাজবিজ্ঞানী।

এদিকে ভয়ংকর মাদক এলএসডি সেবন ও বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রকে পাঁচদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। এ সময় সোমবার (৩১ মে) দুপুরে আদালতে হাজির মাদক মামলায় গ্রেপ্তার তরুণদের হাস্যজ্জ্বল থাকায় হতবাক করেছে সবাইকে। আদালতে হাজির করার পরও তাদের আচরণে এতটুকুও বদলায়নি।

সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম খান বলেন, মাদকের প্রভাব এতটাই পড়েছে যে, হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছেন তারা।

রিমান্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামি হলেন-সাইফুল ইসলাম সাইফ (২০), এস এম মনওয়ার আকিব (২০), নাজমুস সাকিব (২০), নাজমুল ইসলাম (২৪) ও বি এম সিরাজুস সালেকীন (২৪)।

ভয়াবহ মাদক এলএসডিসহ হাতেনাতে গ্রেফতার ৫ তরুণকে রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্টন থানায় যখন নেয়া হয় তখনও সবার মুখেই ছিল হাসি।

এমনকি সোমবার (৩১ মে) দুপুরে যখন আদালতে তোলা হয় তখনও বদলায়নি তাদের আচরণ। অপরাধবোধ তো দূরের কথা তাদের মধ্যে যেন কোনো অনুশোচনাও নেই। এমনকি রিমান্ড মঞ্জুরের পরও তাদের চেহারায় নেই উদ্বেগের কোনো ছাপ।

এ ঘটনায় আইনজীবীরাও হতবাক হয়েছেন। তারা বলছেন- বহু আসামি দেখেছেন। কিন্তু এরকম বিকারগ্রস্ত আসামি কোনোদিন তারা দেখেননি।

সিএমএম আদালতের অতিরিক্ত প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন বলেন, এ তরুণদের বাবারা অনেক টাকাওয়ালা, তাই তারা মনে করেছেন তাদের কিছুই হবে না। অচিরেই তারা খালাস পাবে বা মুক্তি পাবে। পরিণতি সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। সে কারণে তারা হাসিখুশি ও ভাবলেস অবস্থায় আছে। আমরা সেটাই লক্ষ্য করেছি।

রোববার মতিঝিল বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আ. আহাদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাজধানীর শাহজাহানপুর, রামপুরা, বাড্ডা ও ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা এক বছর ধরে এলএসডি সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন। দুই হাজার মাইক্রোগ্রাম এলএসডি, আইস ও গাজা জব্দ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এক বছর ধরে অনলাইনে এলএসডি বেচাকেনা করছে তারা। কুরিয়ার ও লাগেজের মাধ্যমে বিদেশ থেকে এলএসডি দেশে নিয়ে আসা হয়। অনলাইনে গ্রাহক সংগ্রহ করে এলএসডি ব্যবসায়ীরা। সেবনকারীদের বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

এর আগে রাজধানী থেকে ভয়ংকর মাদক এলএসডি উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

ওই তিন শিক্ষার্থী হলেন- সাদমান সাকিব ওরফে রুপল (২৫), অসহাব ওয়াদুদ ওরফে তূর্য (২২) ও আদিব আশরাফ (২৩)। তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসনে (বিবিএ) পড়েন।

প্রসঙ্গত, ১৫ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুরকে কার্জন হল এলাকায় তার তিন বন্ধু এলএসডি সেবন করান। এর প্রতিক্রিয়া শুরু হলে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যান। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এক ডাব বিক্রেতার ভ্যানে রাখা দা নিয়ে তিনি নিজের গলায় আঘাত করেন।

তিনি পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আটদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে তার মরদেহ অজ্ঞাতনামা হিসেবে পড়ে ছিল। পরে তার ভাই এসে মরদেহ শনাক্ত করেন। এরপর থেকেই এলএসডির বিষয়টি আলোচনায় আসে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে