নিউজ ডেস্ক : আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদ্যঃসাবেক সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আর্থিক দুর্নীতির খোঁজ নিতে শুরু করেছেন সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দার সদস্যরা। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে পাওয়া কিছু দুর্নীতির মৌখিক তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে জানিয়ে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের চলাফেরার ওপরও নজরদারি চলছে। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া নানা সময়ে দেওয়া তার বক্তব্য খোঁজা হচ্ছে। সরকারবিরোধী কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে কি না, বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরসহ দেশের বাইরের কোনো সংগঠনের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার তথ্য জানার চেষ্টা চলছে।
যেভাবে আলোচনায় : একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হেলেনা জাহাঙ্গীর সম্প্রতি 'বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ' নামে একটি সংগঠন গঠনের ঘোষণা দেন। তিনি নিজেকে সংগঠনটির সভাপতি ও মাহবুব মনিরকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। দুই দিন ধরে এই সংগঠনে জেলা-উপজেলা ও বিদেশ শাখায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টার প্রকাশ করা হয়। এ ঘটনার পর ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছাড়াও অনেক আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তির সঙ্গে তোলা ছবি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অনেকেই তার রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট, দুর্নীতির নানা ধরনের মৌখিক তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি চাকরিজীবী লীগে দলীয় পোস্ট দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই চলছে। প্রয়োজনে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য পদ থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে অব্যাহতি দিয়ে গতকাল রবিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। উপকমিটির সদস্যসচিব ও আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সংঘটনের নীতিবহির্ভূত হওয়ায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে হেলানা জাহাঙ্গীর বলেন, ''আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি চিঠিও পাইনি বা কেউ আমাকে ফোন করেও জানায়নি।'' কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টার পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে হেলেনাকে। বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য ও কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে বহিষ্কারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাজীব জানান, গত ১৬ জুন হেলেনাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তাদের স্বাক্ষরিত চিঠির কপি তাকেও পাঠানো হয়েছে। সূত্র : কালেরকণ্ঠ