নিউজ ডেস্ক : হেলেনা জাহাঙ্গীরের শুরুটা একটু ভিন্ন ভাবে। ২০১৫ সালের আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে পোস্টারিং করে ছেয়ে ফেলেন ঢাকা শহর। তখন সবাই তার পোস্টার দেখলেও তার সম্পর্কে কেউ কিছুই জানতো না। কোন দল করে না করে এ বিষয়ে কোন স্পষ্ট কথা বলেন নি হেলেনা। প্রচার প্রচারণার জন্য ধূর্ত হেলেনা কাজে লাগিয়েছেন 'আসল বিএনপির' মূখপাত্র কামরুল হাসান নাসিমকে।
কামরুল হাসান নাসিমের তথ্য ও পরামর্শে পোস্টারিং, প্রচার প্রচারণা করে আলোচনায় আসেন হেলেনা। যদিও পরবর্তীতে নাসিমের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয় হেলেনার। ডিএনসিসির নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চান, পরবর্তী উপ-নির্বাচন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচন, ২০২০ সালের ডিএনসিসি নির্বাচন, সম্প্রতি কুমিল্লা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চান হেলেনা।
নানা ভাবে আলোচনায় থাকতে চাইতেন হেলেনা। সেজন্য গড়ে তোলেন হেলেনা ফাউন্ডেশন, হেলেনা শিশু কল্যাণ সংঘ, হেলেনা সেবা সংঘ, হেলেনা আলোর দিশারী ফুটবল ক্লাব, হেলেনা সারগাম একাডেমি, হেলেনা চক্ষু হাসপাতাল ও জয়যাত্রা অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ আরও একাধিক প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ভাঙিয়ে তিনি সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে বিভিন্ন কাজের তদবির করে আর্থিক সুবিধা নিতেন।
নিজের উদ্দেশ্য হাসিলে যেকোনো পন্থা ব্যবহার করতেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। কখনো সখ্য তৈরি করে ব্ল্যাকমেইল করে আবার কখনো ব্যক্তিগত সাইবার টিম ব্যবহার করে আবার কখনোবা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে ছবি তুলে তিনি নিজের টার্গেট পুরো করতেন। উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলতে প্রথমে টার্গেট করতেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। এরপর তার সাথে কৌশলে সখ্য গড়ে তুলতেন। সেই সখ্যের সুযোগ নিয়ে করতেন ব্ল্যাকমেইল।
সূত্র জানায়, হেলেনার সচিবালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তরে যাতায়াত ছিল অবাধে। সচিবালয়ে যাতায়াত করতে পাস পাওয়ার ব্যাপারে কোনো অসুবিধা হতো না। বিশেষ করে গণপূর্ত অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। হেলেনা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রেখে নিজের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেন। তিনি ১২টি ক্লাবের সদস্যপদে রয়েছেন। রাত হলেই ঢাকার একাধিক ক্লাবে যাতায়াত করতেন। গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাব, বিজিএমইএ অ্যাপারেল ক্লাব, বোট ক্লাব, গুলশান লেডিস ক্লাব, উত্তরা লেডিস ক্লাব, গুলশান ক্লাব ও বারিধারা ক্লাবে যাতায়াত ছিল তার।
হেলেনা নিজেকে সিস্টার হেলেনা পরিচিত করার জন্য ঢাকা এবং কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং করেছে। এজন্য তার লোকজন তাকে সিস্টার বলে ডাকতেন। কেউ তাকে ম্যাডাম বা স্যার বললে তিনি তাদের সিস্টার বলে ডাকার আদেশ দিতেন বলে র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন। সূত্র জানান, বাংলার মাদার তেরেসা উপাধি পাওয়ার জন্য হেলেনা নিজের উদ্যোগে গড়ে তুলেছিলেন হেলেনা ফাউন্ডেশন। তবে সেটি প্যাড সর্বস্ব। সেটির কোনো কার্যালয় ছিল না। কুমিল্লার একাধিক এলাকায় ৪ বার গরিব লোকদের আর্থিক সহযোগিতার ফটোসেশন করে তিনি এলাকার বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং করেছেন।
হেলেনা জাহাঙ্গীরের জন্ম কুমিল্লা জেলায়। জানা যায়, বাবা মরহুম আবদুল হক শরীফ ছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। সেই সুবাদে তিনি বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামের হালিশহরের মাদারবাড়ী সদরঘাট এলাকায়। লেখাপড়া করেছেন স্থানীয় কৃষ্ণচূড়া স্কুলে। চাকরিসূত্রে তার বাবা রাশিয়ায় চলে গেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামে ফিরে যান হেলেনা। ১৯৯০ সালে বিয়ে করেন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে। তারপর থেকে তার নামের পাশে যুক্ত হয় জাহাঙ্গীর। বর্তমানে তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীর নামেই পরিচিত।