মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৬, ০১:৩৩:০০

অচল হয়ে পড়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম

অচল হয়ে পড়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক : শিক্ষকদের লাগাতার কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়েছে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে ‘অর্থমন্ত্রী প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ এবং অন্যান্য অসঙ্গতি নিরসনে’ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল একযোগে আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরা।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় এ আন্দোলন কর্মসূচি। এতে সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকে। ফলে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমেও নেমে আসে স্থবিরতা। দফতরগুলোতে ঝুলতে দেখা যায় তালা। শিক্ষকরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

এদিকে অষ্টম বেতন কাঠামোয় বৈষম্য নিরসনের একই দাবিতে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডার ছাড়া অন্য সব ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারাও। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে কালো ব্যাজ ধারণ করে বেলা ২টা পর্যন্ত সব সরকারি অফিসে প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসকসহ ২৬টি ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের কর্মকর্তারা এ কর্মবিরতি পালন করেন। ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা এ কর্মসূচি পালন করবেন।

গত বছরের মাঝামাঝিতে অষ্টম বেতন কাঠামো প্রস্তাবের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা নানা কর্মসূচিতে নিজেদের ‘মর্যাদাহানি ও সুবিধা কমে যাওয়ায়’ আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। গত মাসে বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশের পর শিক্ষকদের বিরোধিতার মুখে সরকার একটি কমিটি গঠন করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। এরই জের ধরে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২ জানুয়ারি লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতিকালে কলাভবনের সামনে বটতলায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব এস এস এম মাকসুদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়লে অর্থমন্ত্রী দায়ী থাকবেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আমরা গত আট মাসে কোনো আন্দোলনে যাইনি; বরং আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চেয়েছিলাম।’

মাকসুদ কামাল আরও বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী আমাদের একবার আশ্বাস দেন, আবার সেই আশ্বাস সম্পর্কে আর কোনো অগ্রগতির কথা জানান না। এখন অর্থমন্ত্রী বলছেন, শিক্ষকদের বেতন কাঠামো নিয়ে তিনি কিছু জানেন না। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের পূর্ণ কর্মবিরতি চলবে।’

গতকাল সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করে জানা গেছে, প্রায় শতভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষার পাশাপাশি সান্ধ্যকালীন কোর্স ও অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখেন। এতে শিক্ষার্থীরা সেশনজটের আশঙ্কার কথা বলছেন। শিক্ষার্থীদেরও দাবি, প্রধানমন্ত্রী যেন শিক্ষকদের কথা মেনে নিয়ে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হন।

সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষকদের কর্মবিরতি সংক্রান্ত খবর পাঠিয়েছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, জেলা প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিরা—

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : সকাল থেকে অধিকাংশ বিভাগেই কোনো ক্লাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। শিক্ষকদের এমন কর্মসূচিতে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। সেশনজটের আশঙ্কায় অনেক শিক্ষার্থীই এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. খবির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এমন কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মবিরতি চলবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : রাবিতে ১ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শীতকালীন ছুটি চলছে। এ সময় সব বিভাগে ক্লাস বন্ধ রয়েছে।

তবে ৯ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসগুলো খোলা থাকায় কয়েকটি বিভাগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাবিতে শুরু হওয়া লাগাতার কর্মবিরতির কারণে কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন বিভাগে চালু থাকা সান্ধ্যকালীন কোর্সের কার্যক্রম।

তবে প্রশাসনিক জরুরি কার্যক্রম এবং ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া কর্মবিরতির আওতামুক্ত আছে। রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা বলেন, কর্মবিরতি চলাকালে আমরা ক্লাস-পরীক্ষা দুটোই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

রুয়েট : কর্মবিরতির কারণে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (রুয়েট) কোনো ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। রুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. তারিফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চার দফা দাবির ভিত্তিতে ডাকা লাগাতার কর্মবিরতিতে বন্ধ ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক নতুন ভবন, কলাভবন ও বিজ্ঞান ভবনে কিছু কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষা-ক্লাস করতে ক্যাম্পাসে এলেও শিক্ষকদের কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে বিভিন্ন বিভাগের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলেছে অন্যান্য দিনের মতোই।

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, সরকারই আমাদের লাগাতার আন্দোলনে যেতে বাধ্য করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : গতকাল সকাল থেকে চবির শাটল ট্রেন যথারীতি চলাচল করলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম।

চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী খসরুল আলম কুদ্দুসী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রেখে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলাম। চুয়েট : চুয়েটেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা নেননি। শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে একাডেমিক কার্যক্রম না হওয়ায় ক্যাম্পাস প্রায় ফাঁকাই ছিল। এ ছাড়া ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করায় আবাসিক হলের অনেক শিক্ষার্থীই বাড়ি চলে গেছেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : লাগাতার কর্মবিরতিতে গতকাল অচল হয়ে পড়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বন্ধ ছিল সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় : অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির প্রথম দিনেই অচল হয়ে পড়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম। গতকাল সকাল থেকেই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করায় বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় : বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদের ১৮টি বিভাগে গতকাল কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। তবে শিক্ষক সমিতির কর্মবিরতির পূর্ব ঘোষণা থাকার পরও গতকাল অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে এসেছিল।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় : পূর্ব ঘোষিত কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার শরীফুল ইসলাম বলেন, বেতন-ভাতা নিয়ে আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই। অষ্টম বেতন কাঠামোতে আমাদের অসম্মান করা হয়েছে। আট মাসেও এর সুরাহা না হওয়ায় আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছি।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : সকাল ৯টা থেকে এ কর্মবিরতিতে যান হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় : শীতকালীন ছুটি হলেও ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও কর্মসূচি পালন করছেন।

জামালপুর : সব ক্যাডারের পদোন্নতির সমান সুযোগ ও ক্যাডার-নন ক্যাডার বৈষম্য দূরীকরণসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছেন জামালপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের শিক্ষকরা।

দুই ঘণ্টার কর্মবিরতিতে সরকারি কর্মকর্তারাও : অষ্টম বেতন কাঠামোয় বৈষম্য নিরসনের দাবিতে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডার ছাড়া অন্য সব ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা। বিডি প্রতিদিন

১২ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে