মাহবুবুর রহমান, নোয়াখালী: সবুজ পাতায় ছাওয়া ডালাপালা ছড়িয়ে ছাতার মতো দাঁড়িয়ে এক গাছ। তারই নিচে ধূলিময় আঙিনায় বেঞ্চ পেতে চলছে শিশুশিক্ষার্থীদের ক্লাস। পাশেই সটান পড়ে আছে স্কুলটির পাকা ভবন। কিন্তু শ্রেণিকক্ষে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে ২০১৩ সালে।
এই হচ্ছে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার অম্বনগর ইউনিয়নের ওয়াসেকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান চিত্র। মাঝে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভবন মেরামত বা নতুন করে নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। পরিত্যক্ত ভবনেই এত দিন ক্লাস চলেছে। পাঁচ মাস ধরে ভবনের সামনের মাঠে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
গতকাল সোমবার দুপুরে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের দুরবস্থা। গাছতলায় তখন চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস বসেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, স্কুলের ভবন রয়েছে দুটি। একটি নির্মাণ করা হয়েছে ২০০৬ সালে। আরেকটি কবে নির্মিত, কেউ বলতে পারেনি। পুরোনো ওই ভবনের তিনটি শ্রেণিকক্ষই তালাবদ্ধ। ভাঙা জানালায় উঁকি দিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি কক্ষেরই ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। রড বেরিয়ে এসেছে। কক্ষের দেয়াল, কলামগুলোতে ফাটল। কোথাও কোথাও কংক্রিট খসে পড়ার চিহ্ন।
২০০৬ সালে নির্মিত ভবনও বড্ড বেহালে আছে। মেঝেতে ছোট-বড় অনেক ফাটল ধরেছে। দুই কক্ষের ওই ভবনের একটিতে শিক্ষকেরা বসেন। অন্যটিতে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠদান চলে। শিক্ষকেরা জানান, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৮৮ জন। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীকে মাঠে পাঠদান করতে হয়।
প্রথম আলোভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা বেগম বলেন, গত এপ্রিল মাস থেকে তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন। এর পর থেকে প্রতি ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে তাঁরা নতুন ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছেন। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
প্রধান শিক্ষক বলেন, গত আগস্টে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে তাঁকে ডেকে নিয়ে পরিত্যক্ত ভবনে পাঠদান না করানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই থেকে মাঠে চলছে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। মাঠে ব্ল্যাকবোর্ড রাখার ব্যবস্থা নেই। ফলে লেখা ছাড়াই চলছে পাঠদান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আগে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠ দেওয়ায় সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়েও দুশ্চিন্তায় থাকতেন। এখন মাঠে পাঠদান হওয়ায় কিছুটা দুশ্চিন্তামুক্ত। কিন্তু এভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগ থাকছে না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গাজী আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দুইবার ওই বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গেছেন। আপত্কালীন ব্যবস্থা হিসেবে টিন ও কাঠ দিয়ে মাঠের সীমানা প্রাচীরের সঙ্গে অস্থায়ী শ্রেণিকক্ষ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কমিটিতেও আলোচনা হয়েছে।
ব্ল্যাকবোর্ড ছাড়াই চলছে ক্লাস। খাতায় লিখে শিশুদের শেখাচ্ছেন শিক্ষক। ছবি: প্রথম আলোজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন ছিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে বিদ্যালয়ের মাঠে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বিষয়টি তিনি জানেন। এ-সংক্রান্ত একটি সভার কার্যবিবরণী তাঁর দপ্তরে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছিল। এখনো কেউ পাঠায়নি। কার্যবিবরণী পাঠালে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।-প্রথম আলো
১২ জানুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের/রাসেল