বুধবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৩:৩৮:১৬

দলীয় প্রতীকে মার্চেই ইউপি নির্বাচন

দলীয় প্রতীকে মার্চেই ইউপি নির্বাচন

কাজী হাফিজ : পৌরসভার মতো ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনের প্রচারণায়ও অংশ নিতে পারবেন না মন্ত্রী-এমপিরা। একইভাবে রাজনৈতিক দলগুলো চেয়ারম্যান পদে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে পারবে না। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী আচরণ ও নির্বাচন বিধিমালা-২০১৬তে এসব বিধান রাখা হয়েছে।

তবে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ভিন্ন বিধান রাখা হয়েছে। পৌরসভার মেয়র পদে এবং সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে নির্বাচনী এলাকার ১০০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও ইউপি নির্বাচনে এ ধরনের ভোটার সমর্থন লাগবে না।

গতকাল মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ-সংক্রান্ত খসড়া বিধিমালার অনুমোদন দেওয়া হয়।

অনুমোদিত বিধিমালায় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে এর আগে ব্যবহূত বিতর্কিত প্রতীকগুলো বাদ দিয়ে নতুন প্রতীক রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শুধু চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর মৃত্যু হলে নির্বাচন বন্ধের বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণের আগে চেয়ারম্যান পদের বৈধভাবে মনোনীত কোনো প্রার্থীর মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন কার্যক্রম রিটার্নিং অফিসার গণবিজ্ঞপ্তি দ্বারা বাতিল করবেন। গৃহীত ব্যবস্থা তাত্ক্ষণিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। কমিশন পরে সংশ্লিষ্ট ইউপিতে নতুন তফসিল ঘোষণা করবে। তবে ভোটগ্রহণের আগে সংরক্ষিত আসনের সদস্য এবং সাধারণ আসনের সদস্য পদে বৈধভাবে মনোনীত কোনো প্রার্থীর মৃত্যু হলে ভোটগ্রহণ অবশিষ্ট প্রার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে পৌরসভা নির্বাচনে ভোটের আগে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচন কার্যক্রম বন্ধ রাখার বিধান রয়েছে।

কমিশন সূত্র জানায়, আচরণ বিধিমালায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে প্রচারণার বাইরে রাখার বিষয়ে দুজন নির্বাচন কমিশনার প্রস্তাব করলেও অন্যরা তাতে আপত্তি জানান। পৌরসভার মতো ইউপিতেও উপজেলার চেয়ারম্যানদের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার পক্ষে বেশি মতামত এসেছে। ফলে সরকারি সুবিধা ছাড়া উপজেলার চেয়ারম্যানরা প্রচারণায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। পৌরসভা নির্বাচনে এমপিরা প্রচারণায় অংশ নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কমিশন তাতে সাড়া দেয়নি।

এদিকে প্রথমবার দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনের জন্য পৌরসভার নির্বাচন বিধিমালার আলোকেই এ নির্বাচনের বিধিমালা করেছে কমিশন। খসড়া বিধিমালার ২২ ধারা অনুযায়ী অতি গুরুপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাঁদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়ররা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।

একইভাবে কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তবে ওই ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে তিনি কেবল তাঁর ভোট প্রদান করার জন্য ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন।

এ ছাড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে একই ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হলে ওই দলের সকল প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাবে। এ বিধান পৌরসভা নির্বাচনের জন্যও রাখা আছে।

চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সমমর্যাদার পদাধিকারী ব্যক্তি বা তাদের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম, পদবি, নমুনা স্বাক্ষরসহ একটি পত্র তফসিল ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে রিটার্নিং অফিসারের কাছে এবং ওই পত্রের একটি অনুলিপি নির্বাচন কমিশনে পাঠাতে হবে।

নারীদের জন্য বিতর্কিত প্রতীক বাদ : ব্যাপক সমালোচনার মুখে এবার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নারীদের জন্য গৃহস্থালি সামগ্রীর প্রতীক বাদ দিয়ে নতুন প্রতীক নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা-১৬ তে সংরক্ষিত নারী প্রার্থীদের জন্য ১০টি নতুন প্রতীক রাখা হয়েছে। প্রতীকগুলো হলো কলম, ক্যামেরা, তালগাছ, জিরাফ, বই, বক, কলস, মাইক, হেলিকপ্টার ও সূর্যমুখী ফুল।

এর আগে গত বছরের ২৮ এপ্রিল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ও গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌরসভার নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের জন্য ঘরোয়া প্রতীক রাখা হয়েছিল। নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য চকোলেট, চুড়ি, পুতুল, ফ্রক, ভ্যানিটিব্যাগ, আঙ্গুর, কাঁচি, গ্যাসের চুলা, মৌমাছি ও হারমোনিয়ামসহ ১০টি প্রতীক রাখা নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়ে কমিশন।

গত ১০ ডিসেম্বর ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম পৌরসভা নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের জন্য ঘরোয়া প্রতীক রাখার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আগামীতে স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের জন্য বিতর্কিত প্রতীক রাখবে না কমিশন। ইতিমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাকে লিখিত নির্দেশনা দিয়েছেন এ বিষয়টি সমাধানের জন্য।’

গতকাল কমিশন সভায় চূড়ান্ত করা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা-১৬ তে নারী প্রার্থীদের জন্য নতুন প্রতীকগুলো রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া ইউপি নির্বাচনে ইসির নিবন্ধনে থাকা ৪০টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীদের জন্য নিজ নিজ দলের প্রতীক, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের জন্য ১০টি, সাধারণ কাউন্সিলরদের জন্য ১২টি ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের জন্য ১০টি প্রতীক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীদের জন্য অটোরিকশা, আনারস, ঘোড়া, টেবিল ফ্যান, ঢোল, টেলিফোন, ক্যালকুলেটর, দুটি পাতা, মোটরসাইকেল ও রজনীগন্ধা প্রতীক রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ সদস্য পদের জন্য আপেল, ক্রিকেট ব্যাট, ঘুড়ি, টিউবওয়েল, পানির পাম্প, ফুটবল, ফুলের টব, ভ্যানগাড়ি, বৈদ্যুতিক পাখা, মোরগ, লাটিম ও তালা প্রতীক রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন প্রথমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার কারণে আগামী মে মাসের দিকে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা চিন্তা-ভাবনা করলেও এর আগেই মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া ৬০০ ইউপির নির্বাচন মার্চেই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এ ছাড়া কমিশন সূত্র জানায়, সম্প্রতি সংশোধিত আইন অনুসারে এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের জন্যই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আইন সংশোধন করে আগের মতোই নির্দলীয়ভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সংকেত এখনো কমিশনের কাছে পৌঁছেনি।

ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, আগামী রবিবারের মধ্যে বিধিমালা দুটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতে পারে। -কালেরকণ্ঠ

১৩ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে