ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হলে ওঠার সময় হল প্রশাসন থেকে দেওয়া এক অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে হয়। সেখানে একটি ধারায় উল্লেখ আছে—‘কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে তাঁর সিট বাতিল করা হবে। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে হলে থেকে অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী হলে থাকতে পারবেন না।’
সম্প্রতি পাঁচ হলের আবাসিক ছাত্রীরা অঙ্গীকারনামার এসব নিয়মকে ‘অদ্ভুত ও আদিকালের’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। এসব নিয়ম বাতিলসহ চার দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছে ছাত্রীদের একটি প্রতিনিধিদল। গতকাল মঙ্গলবার প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
দাবিগুলো হলো—বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকার যে বিধি-নিষেধ এবং তাঁদের জন্য প্রচলিত যে নিয়ম তা বাতিল করতে হবে; শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মর্যাদা রক্ষার্থে সব ছাত্রী হলে ‘লোকাল গার্ডিয়ান বা স্থানীয় অভিভাবক’-এর পরিবর্তে ‘জরুরি যোগাযোগ’ শব্দের প্রবর্তন করতে হবে; আবাসিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাধ্যমে হয়রানি বন্ধে তা করলে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে; শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকা সাপেক্ষে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের অধিকার পুনর্বহাল এবং জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের হলে থাকতে দিতে হবে।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর সিট দেওয়া নিয়ে নতুন করে এই আলোচনা শুরু হয়েছে। হল কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীর সিট দেওয়া নিয়ে গড়িমসি করে। এক পর্যায়ে একই হলে থাকা ওই ছাত্রীর বিবাহিত বড় বোন সিট ছেড়ে দিলেই কেবল তিনি সিটে উঠতে পারবেন—এমন শর্ত দেওয়া হয়। এর পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
এ বিষয়ে শামসুন নাহার হল সংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) ও প্রতিনিধিদলের সদস্য শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে বিবাহিত জানলেই সিট কেটে দেয়। তবে লিখিত নিয়মে আছে, বিশেষ বিবেচনায় থাকতে পারবেন। আর অন্তঃসত্ত্বা কোনো নারী হলে থাকতে পারবেন না। এটি একটি অমানবিক বিষয়। বর্তমান সময়েও এ নিয়ম থাকার কোনো মানে হয় না। আমরা এ নিয়ম বাতিলের দাবিতে উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশা করি, তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।’
দাবির বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরা মূল্যবোধ ও সামাজিক দিক বিবেচনায় নিয়মগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সেখানে অনেক ভালো নিয়মও আছে। তবে বর্তমান সময়ে তা যৌক্তিক কি না, সেটা পর্যালোচনার দাবি রাখে। একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় এ বিষয়ে আলাপ করতে হবে। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ম বলবৎ থাকবে।’-কালের কণ্ঠ