বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৬, ০১:২১:০৬

মুক্তিযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর সেই ‘হিরো’ আর নেই

মুক্তিযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর সেই ‘হিরো’ আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক : মারা গেছেন মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধের অন্যতম ‘হিরো’ ভারতীয় সেনা-বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব প্রয়াত। ১৯৭১ সালে মিত্র-বাহিনীর হাতে পাকিস্তানী বাহিনীর শোচনীয় পরাজয়ের পর যে প্রক্রিয়ায় আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল, সেই প্রক্রিয়ার রূপকার ছিলেন জ্যাকব। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

এদিকে ভারতের জেএফআর জ্যাকবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এক শোক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক অকুতোভয় সেনানীকে হারালাম। মুক্তিযুদ্ধে জেনারেল জ্যাকবের অবদান এই জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। এসময় প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।

১৯ বছর বয়সে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন জ্যাকব। কর্মজীবনে তিনটি খুব বড় যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়েছেন, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে লড়েছেন, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়ে ভারত যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরোক্ষ যুদ্ধ ঘোষণা করলো, তখন জে এফ আর জ্যাকব মেজর জেনারেল পদে। তিনি তখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের চিফ অব স্টাফ।

তার সুযোগ্য নেতৃত্বে পূর্ব সীমান্তে মিত্র বাহিনীর হাতে নাস্তানাবুদ হয়ে যায় পাকিস্তানের সেনা। পশ্চিম সীমান্তেও হারের মুখ দেখতে হয়েছিল পাকিস্তানকে। স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। ঢাকা থেকে ইসলামাবাদের দিকে উড়ে যাওয়ার সুযোগ আর পায়নি ‘খান সেনা’ (পাকিস্তানের সেনাকে তখন এই নামেই ডাকা হত)।

মেজর জেনারেল জেএফ আর জ্যাকব পাকিস্তানের বিশাল বাহিনীকে বাংলাদেশের মাটিতে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার পিছনে ছিলেন অন্যতম কারিগর। মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশের উপর নিজেদের অধিকার বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়েছিল সেদিন পাকিস্তান।

১৯৭১-এর যুদ্ধ চলাকালীন এবং তার পরেও বহু দিন ধরে দুই বাংলায় জ্যাকবের নাম মুখে মুখে ফিরত। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে জ্যাকব প্রবল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৭৮ সালে জ্যাকব যখন অবসর নেন, তখন তিনি  ভারতীয় সেনার লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে।

একাত্তরের অবদানের জন্য ২০১২ সালের ২৭ মার্চ জেনারেল জেএফআর জ্যাকবের হাতে সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী নিয়ে ‘সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা’ নামের একটি বইও লিখেছেন তিনি।

জ্যাকব ১৯২৩ সালে অবিভক্ত ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।

জাতিসংঘ এবং চীনের প্রবল চাপের মুখে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে অংশগ্রহণে আপত্তি জানাচ্ছিলেন। কিন্তু জ্যাকব সব ধরনের চাপের উর্দ্ধে গিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে সচেষ্ট হন।

প্রথমেই তিনি ঢাকাকে দখলমুক্ত করার পরিকল্পনা করেন। এর জন্য তিনি সুচারুভাবে এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে অগ্রসর হন।

বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নেওয়া এবং নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকায় অবসরের পরেও ভারত সরকার নানা সময়ে জ্যাকবের পরামর্শ নিয়েছে। পরে তিনি ভারতের পাঞ্জাবের রাজ্যপাল পদেও কাজ করেছেন।

বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি অসুস্থ ছিলেন বেশ কিছু দিন ধরেই। বুধবার সকালে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল হসপিটালে মৃত্যুবরণ করেন জ্যাকব। তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
১৪ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে