বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৩:৫৮:০৮

নতুন মোর্চা গঠনে ইসলামী ঐক্যজোট

নতুন মোর্চা গঠনে ইসলামী ঐক্যজোট

মোশতাক আহমদ : বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে সম্প্রতি বেরিয়ে আসা ইসলামী ঐক্যজোট নতুন রাজনৈতিক মোর্চা গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। সমমনা ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে তারা।

কাঙ্ক্ষিত মোর্চার লক্ষ্য হবে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও ইসলামবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে সংগঠিত কার্যক্রম পরিচালনা করা। পরিস্থিতি বিবেচনায় ভবিষ্যতে এই মোর্চা নির্বাচনী জোটেও পরিণত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোমবার রাজধানীর লালবাগে মোর্চা গঠনের বিষয়ে বৈঠক করেন ইসলামী ঐক্যজোটের নেতারা। আগামী সপ্তাহের বৈঠকে সমমনা বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের এ ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।

বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া ইসলামপন্থী বিভিন্ন দলের নেতারা ইসলামী ঐক্যজোটের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, এ উদ্যোগ নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে।

নতুন জোট গঠনের ব্যাপারে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, ইনসাফ কায়েম এবং রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা রক্ষার জন্য আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইসলামী গণবিপ্লব সংঘটিত করতে চাই। দেশের লাখো-কোটি জনতা এই স্বপ্ন দেখে। যেসব দল, সংগঠন ও ব্যক্তি দেশে ইসলাম কায়েমে সংকল্পবদ্ধ আমরা তাদের নিয়ে বৃহৎ ঐক্য গড়ে তুলতে চাই। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং বলছি। শিগগির নতুন জোট আত্মপ্রকাশ করবে।’

নতুন জোটের কর্মপরিধির বিষয়ে তিনি বলেন, এটি হবে রাজনৈতিক জোট। তবে এটি নির্বাচনী জোট হবে কি না তা যথাসময়ে স্পষ্ট করা হবে। মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করবে এ মোর্চা। সরকারের কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট হওয়ার বা তাদের জোটে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে তাদের ভালো কাজকে স্বাগত জানানো হবে এবং মন্দ কাজের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

নতুন জোটে কোন কোন দল থাকছে তা এখনই প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘‘আমরা নিজেদের ব্যানারে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করব। আর অরাজনৈতিক ধর্মীয় বিষয়ের কর্মসূচি ‘ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির’ ব্যানারে পালন করা হবে।’’

প্রসঙ্গত, দেড় যুগেরও বেশি সময়ের সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে গত ৭ জানুয়ারি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় ইসলামী ঐক্যজোট। ওই দিন দলের ত্রিবার্ষিক কনভেনশনের ঘোষণাপত্রে ২০ দল ছাড়া এবং নতুন মিশনের কথা বলা হয়। আরো বলা হয়, ইসলামী ঐক্যজোট এখন থেকে স্বকীয়তা বজায় রেখে সাংগঠনিক তৎপরতায় মনোযোগী হবে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব আসনে প্রার্থী দেবে।

ঘোষণাপত্রে জোট গড়ার বিষয়ে বলা হয়, সব ইসলামী দল, সংগঠন, আলেম ও ইসলামমনস্ক লোকদের সমন্বয়ে ইসলামী মোর্চা গড়ে তোলা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ইসলামী ঐক্যজোট মনে করে, বিরাজমান শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ইস্পাত কঠিন ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে ইসলামী দল, সংগঠন ও ইসলামমনস্ক ব্যক্তিদের এক ছাতার নিচে সমবেত হওয়া জরুরি।

সাংগঠনিক সূত্র জানায়, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তার-নির্যাতন থেকে সংগঠন ও নেতাকর্মীদের রক্ষা, ২০ দলীয় জোটে যথাযথ মর্যাদা না পাওয়া এবং সরকারি মহলের চাপ সামলানো প্রভৃতি কারণে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ছেড়েছে ইসলামী ঐক্যজোট।

দীর্ঘদিনের জোট-সম্পর্ক ছিন্ন করে আকস্মিকভাবে বেরিয়ে এসে সংগঠনটি নতুন জোট গঠনের যে তৎপরতা চালাচ্ছে তা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করতে বসেছে অন্য ইসলামী দলগুলো। সহসা বড় কোনো ইসলামী জোট গঠনের বিষয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহল। এই পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ ২০ দলেই থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

অপরাংশের ব্যাপারে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। অন্য কোনো গ্রুপের এ নামে কার্যক্রম চালানোর সুযোগ নেই। আমাদের দলে কোনো বিভক্তি হবে বলেও মনে করি না।’

নতুন জোট গঠনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, ইসলামী ঐক্যজোট নিজেই একটি জোট। এর শরিক নেজামে ইসলাম পার্টি, ফরায়েজি আন্দোলন, খেলাফতে ইসলামী ও ওলামা কমিটি এবং খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন এ উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট হতে পারে। ২০ দল ছেড়ে খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশও এতে যোগ দিতে পারে। হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা ব্যক্তিগতভাবে নতুন জোটে সংশ্লিষ্ট হতে পারেন।

খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, ‘নতুন জোটের ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে বৃহত্তর ঐক্যের উদ্যোগ নিয়ে কেউ এগিয়ে এলে বিবেচনা করা যেতে পারে।’

দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমন তৎপরতা নেই ইসলামী দলগুলোর। গ্রেপ্তার প্রভৃতি প্রতিকূলতার কারণে নমনীয় নীতিতে চলছেন ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতারা। ধর্মীয় ও জাতীয় ইস্যুতে আপাতত বড় কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা নেই তাদের। তবে অস্তিত্ব রক্ষার্থে আগামীতে ইসলামী ঐক্যজোটের উদ্যোগে বেশকিছু ধর্মভিত্তিক দল সামিল হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন বছরে এই উদ্যোগ হালে কতটা পানি পাবে তা দেখতে আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৯টি ইসলামী রাজনৈতিক দল ছাড়াও বেশ কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন তৎপর রয়েছে। এসবের মধ্যে নিবন্ধিত দল ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম; নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামী ও অনিবন্ধিত ইসলামিক পার্টি ২০ দলীয় জোটের শরিক।

মানবতাবিরোধী অপরাধে শীর্ষ নেতাদের বিচার, নিবন্ধন বাতিল হওয়া ও নিষিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকায় রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা জামায়াতে ইসলামী। ২০ দলের শরিক অন্য ইসলামী দলগুলোর ওপর প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে। সর্বশেষ ইসলামী ঐক্যজোট ২০ দলীয় জোট ছেড়েছে। এ ঘটনা ইসলামী দলগুলোকে তাদের রাজনীতি নিয়ে নতুন করে ভাবার অবকাশ দিয়েছে। কালের কণ্ঠ
১৪ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে