শনিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৩:১৬:৩০

ঘুরেফিরে একই নেতৃত্ব আ’লীগে

ঘুরেফিরে একই নেতৃত্ব আ’লীগে

আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল থেকে : দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে একই নেতৃত্বে ঘুরপাক খাচ্ছে দক্ষিণের ৬ জেলার আওয়ামী লীগ। ঘুরেফিরে এদের দখলেই থাকছে জেলা কমিটিগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ। প্রভাবশালীদের প্রভাব, পরিবারতন্ত্র এবং ক্ষমতার বলয় টিকিয়ে রাখার অপরাজনীতির কারণে গড়ে উঠছে না নতুন নেতৃত্ব। শুধু লাইসেন্স নবায়নের মতো ঘুরেফিরে শীর্ষ পদগুলোতে বারবার আসছেন একই নেতারা।

প্রায় ৩০ বছর ধরে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও জাহাঙ্গীর কবির। মাঝে ২-৩ বার জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলেও নবায়নের মতো এরাই আবার ফেরেন সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্বে। সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে গত বছরের শেষের দিকে। তখন সাধারণ সম্পাদক পদে জাহাঙ্গীর কবিরের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন আরেক আওয়ামী লীগ নেতা।

এ কারণে ওই আওয়ামী লীগ নেতার লোকজনের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাংচুর, বোমাবাজি আর মারধরের ঘটনা ঘটে বরগুনায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এমপি শম্ভু আর জাহাঙ্গীরকেই আবার সভাপতি-সম্পাদক ঘোষণা দিয়ে বরগুনা ছাড়েন সম্মেলন উপলক্ষে সেখানে যাওয়া দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে তো এরকমই দেখছি। সম্মেলনের নামে চলে পুরনো নেতৃত্বের নবায়ন। এক্ষেত্রে গঠনতন্ত্র কিংবা দলীয় রীতিনীতির কোনো বালাই থাকে না।

পিরোজপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য একেএমএ আউয়ালের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে চলে জেলা আওয়ামী লীগ। ১৯৯২ সালের পর পিরোজপুরে আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় গত বছরের ১০ ডিসেম্বর। এখানে আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন শুধাংশু শেখর হালদার। সাধারণ সম্পাদক একেএমএ আউয়াল। শুধাংশু শেখর মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় অ্যাডভোকেট আকরাম হোসেনকে। আর আকরাম হোসেনের মৃত্যুতে দায়িত্ব পান অ্যাডভোকেট হাকিম হাওলাদার।

১০ ডিসেম্বরের সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পদ থেকে নেমে সাধারণ সম্পাদক হন হাকিম হাওলাদার এবং সাধারণ সম্পাদক এমপি আউয়াল হন সভাপতি। দলের স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, অনেক যোগ্য নেতা থাকলেও আউয়ালের ইচ্ছার বাইরে কিছুই করার ক্ষমতা ছিল না সম্মেলনে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাদের।

প্রায় ২৫ বছর ধরে একই সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে চলছে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ। ১৭ বছর পর গত বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত সম্মেলনেও আবার জেলার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিঞা ও খান মোশাররফকে।

ভোলা জেলার আওয়ামী লীগে বর্তমানে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা ও আবদুল মোমিন টুলু। সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে প্রায় ৮ বছর আগে। মার্চে দলের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে জেলা সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। সেই সম্মেলনে কতটুকু পরিবর্তন ঘটবে তা বলতে পারছে না কেউ।

১৬ জানুয়ারি সম্মেলন হল ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের। প্রায় ৬ বছর পর হওয়া এই সম্মেলনে বর্তমান সভাপতি সরদার শাহ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির আবার পেয়েছেন জেলার দায়িত্ব। বিষয়টি অবশ্য ভালোভাবে নেননি স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

বরিশালে দেড় যুগের বিরতির পর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় ২০১২ সালে। সভাপতির দায়িত্বে আসেন জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। যিনি কয়েক যুগ ধরেই আছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। আর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস। প্রায় ৪ বছর আগে এই দুই নেতার পদ ঘোষণা হলেও আজ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়নি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের।

২০১২ সালে সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনকে সভাপতি এবং অ্যাডভোকেট আফজালুল করিমকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি। প্রায় দেড় বছর আগে হিরনের মৃত্যুর পর এক নেতার কমিটি হয়ে আছে সেটি। নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে নানা গ্রুপ-উপগ্রুপে এখানকার আওয়ামী লীগ।

বিভিন্ন জেলার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ৫-১০ বছর পরপর সম্মেলনের নামে হয় নানা আয়োজন। ঢাকা থেকে আসেন প্রভাবশালী নেতারা। ঢাকঢোল পিটিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে শেষ পর্যন্ত পুরনোদেরই পদে বসিয়ে ফিরে যান তারা। এভাবেই চলছে যুগ যুগ ধরে। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের কোনো ইতিহাস গত ৪০ বছরেও নেই। এভাবে চলতে থাকলে একসময় নেতৃত্বের সংকটে পড়বে দল। পাশাপাশি ঝরে যাবে সাংগঠনিক নেতৃত্বে আসার মতো বহু যোগ্য নেতা।

বিষয়টি সম্পর্কে আলাপকালে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘পরিবর্তন যে হচ্ছে না তা তো নয়। ২০১২ সালে আমি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। আরও নানা জেলায়ও কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। জোর করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে না কোথাও। নয়া নেতৃত্বও হারিয়ে যাচ্ছে না। ধাপে ধাপে উঠে আসছেন নবীনরা। আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি দলে নেতৃত্ব পাওয়া যেমন সহজ না তেমনি নেতা হওয়ার পর তা সহজে চলেও যায় না। এক্ষেত্রে সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা আর দক্ষতাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় দল।’ -যুগান্তর
২৩ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে