মাহবুব হাসান : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনে দলের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তনের পাশাপাশি কমিটির আকারেও পরিবর্তন হবে। বাড়বে যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সম্পাদকমণ্ডলীর পদ।
প্রেসিডিয়াম এবং নির্বাহী সদস্যের পদ বাড়ানো-কমানো নিয়ে আলোচনা থাকলেও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সংখ্যা কোনোক্রমেই ৮১ জনের বেশি হবে না। যদিও একটি মহল চায় এ সংখ্যা হোক ১০১ সদস্যবিশিষ্ট। আগামী ২৮ মার্চ শাসক দল আওয়ামী লীগের সম্মেলন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিভাগ বাড়ার কারণে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বাড়তে পারে। আর নতুন করে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক (আইসিটি) বাড়তে পারে। কেননা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে হয়, এ পদ যুগের দাবি। তবে এসব বিষয় এখনও আলোচনার মধ্যেই রয়েছে।
ইতিমধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগ হয়েছে। কুমিল্লা এবং ফরিদপুর বিভাগ প্রক্রিয়াধীন। সে অনুযায়ী সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বাড়তে পারে তিনটি, যা বর্তমানের সাতটির সঙ্গে মিলিয়ে হবে ১০টি। রীতি অনুযায়ী প্রতি দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদের বিপরীতে যুগ্ম সম্পাদকের পদ বাড়ে একটি। সে বিবেচনায় যুগ্ম সম্পাদকের পদ তিনটি থেকে বাড়িয়ে পাঁচটি করা হবে। তবে কয়টি যুগ্ম সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাড়ছে তা নির্ভর করবে কুমিল্লা ও ফরিদপুর বিভাগ হওয়া না হওয়ার ওপর।
এদিকে দলের গঠনতন্ত্রে দুটি পরিবর্তন আসবে। একটি হল কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ বাড়ানো এবং অপরটি হল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেয়ার বিধান সংযোজন করা। অবশ্য ঘোষণাপত্র পরিবর্তন হচ্ছে না বলেই সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দাবি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়ে সরকারে আসা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। যোগ হতে পারে মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদকের পদও। এর পাশাপাশি অন্যান্য সম্পাদকীয় পদগুলো ঢেলে সাজানো হতে পারে। যেসব সম্পাদকীয় পদে দুটি দায়িত্ব দেয়া আছে সেগুলোর ক্ষেত্রে কোনোটা ভাগ করা হবে, আবার কোনোটার সঙ্গে নতুন দায়িত্বও জুড়ে দেয়া হতে পারে।
আওয়ামী লীগের ৩২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে অর্থ ও পরিকল্পনা, কৃষি ও সমবায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও গবেষণা, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ, প্রচার ও প্রকাশনা, শিক্ষা ও মানবসম্পদ- এসব সম্পাদকীয় পদগুলোর কোনোটাকে ভেঙে স্বতন্ত্র, কোনোটাকে ভেঙে দুটি আর কোনোটাকে ভেঙে অন্য একটির সঙ্গে যোগ করা হতে পারে। তাছাড়া প্রয়োজন বিবেচনায় প্রেসিডিয়াম এবং নির্বাহী সদস্যের পদ বাড়ানো-কমানোর বিষয়টিও আলোচনায় আছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক পদটি সময়ের দাবি। সরকারের উদ্দেশ্যের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই এ পদটি অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়ে সবাই একমত। সাংগঠনিক সম্পাদকের সংখ্যা অনুযায়ী যুগ্ম সম্পাদকের পদ বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি। তবে সর্বোপরি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে কমিটি আকার চূড়ান্ত করবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে দলের নেতাকর্মীরা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আনাগোনা বাড়িয়ে দিয়েছেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য থেকে শুরু করে নির্বাহী সদস্য এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আগের তুলনায় ঘন ঘন যাচ্ছেন সভাপতির কার্যালয়ে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় নেতারা বসছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছেন।
আগামীকাল বেলা এগারোটায় দলের সাধারণ সম্পাদক যুগ্ম সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ বৈঠক থেকেই যেসব জেলায় সম্মেলন হয়নি সেসব জেলায় সম্মেলনের তারিখ এবং প্রস্তুতি উপকমিটির ঘোষণা দেয়া হতে পারে। আর যেসব জেলায় সম্মেলন নানা জটিলতায় করা যাচ্ছে না, এ বৈঠকে সেসব জটিলতা নিরসনের কৌশল নিয়েও আলোচনা হবে।
প্রসঙ্গত, শাসক দল আওয়ামী লীগের সম্মেলন আগামী মার্চ মাসের ২৮ তারিখ। চলতি মাসের ৯ জানুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক থেকে এ তারিখ ঘোষণা করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করা হয়। পাশাপাশি সম্মেলন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে উপকমিটিগুলো করার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক এবং জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, উপকমিটিগুলো চূড়ান্তের পথে। চলতি সপ্তাহেই সেগুলো ঘোষণা করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ সম্মেলন সম্পন্ন হয়। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ তিন বছর। -যুগান্তর
২৩ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি