শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২, ০৭:২৫:০৩

এবার আঞ্চলিক ভাষায় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে যা বললেন মির্জা ফখরুল

এবার আঞ্চলিক ভাষায় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে যা বললেন মির্জা ফখরুল

এমটি নিউজ২৪ ডেস্ক : বিএনপির সংসদ সদস্যরা (এমপি) যেকোনো সময় সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, আমাদের সোজা কথা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এই দেশে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এটা আমাদের সাফ কথা। আমাদের দলের সংসদ সদস্যরাও যেকোনো সময় সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন। এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নতুন একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন হবে। দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে রংপুরের ঐতিহাসিক কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্যের শুরুতেই আঞ্চলিক ভাষায় দলের উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কেমন আছেন বাহে? ভালো আছেন তো? আমরা রংপুর ডিভিশনের ছাওয়া। আমরা ভালো থাকিমো। শত অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়নকে জয় করে আমরা বাহের দেশের মানুষ ভালো থাকবো ইনশাআল্লাহ।  

তিনি বলেন, আজকের এই সমাবেশের দিকে সমগ্র বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, এই সমাবেশের দিকে সারা বিশ্বের অনেকগুলো আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজর রয়েছে। এখানে আলজাজিরা, বিবিসির সাংবাদিকরা উপস্থিত রয়েছেন। আপনারা (দলের নেতাকর্মীরা) তিন দিন ধরে অমানবিক পরিশ্রম করে, অমানবিক অবস্থায় থেকেছেন। গুদাম ঘরে, রাস্তাঘাট-ফুটপাতে থেকেছেন। কেউ নৌকায় করে এসেছেন, বাইসাইকেল চালিয়ে এসেছেন। আমি আপনাদের কষ্ট দেখেছি।

তিনি বলেন, সরকার নাকি বিরোধী দলকে ভয় পায় না। সরকার নাকি জনগনকে ভয় পায় না। ভয় না পায় তাহলে দুই দিন আগে গাড়ি বন্ধ করে দিলো কেন? খুলনাতে গাড়ি বন্ধ করে, ট্রলার উল্টে দিয়ে মানুষকে চাপাতি-রামদা দিয়ে মারছে কেন? কেন আমাদের নেতাদের গুলি করে মারো?

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সমাবেশ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সমাবেশ। একটা মানুষ একটা দল গত ১৫ বছর ধরে আমাদেরকে দমন নিপীড়ন নির্যাতন করছে। সমস্ত দেশটাকে তারা কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছে। এখন বাংলাদেশকে খাওয়ার পাঁয়তারা করছে।

তিনি বলেন, এই সমাবেশের লক্ষ্য একটাই, হাসিনা কবে যাবে? এই সরকার কবে যাবে? লুটপাট দাবি এক এই সরকারের পদত্যাগ। গত ১৫ বছরে এই আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের যত অর্জন ছিল, যত স্বপ্ন ছিল সমস্ত কিছুকে ধ্বংস করে দিয়ে নষ্ট করে দিয়েছে। যে দিকে তাকাবেন খালি চুরি চুরি আর চুরি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ সব ভাতাতে ভাগ নেয় আওয়ামী লীগ। রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট তৈরি করতেও তারা এখন টাকা চুরি করে। এমনকি গরিবের আশ্রয়ণ প্রকল্পেও চুরি করছে। তারা সর্বলুট করছে। সব খেয়ে ফেলছে। আর কিছু বাকি রাখে নাই। সরকার এখন মুনতাসির ফ্যান্টাসি নাটকের মতো সব খেয়ে ফেলছে।

তিনি আরও বলেন, এই সরকার আমাদের নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে তাকে নির্যাতন করে। তিনি অসুস্থ হওয়ার কারণে বিদেশে চিকিৎসার জন্য চলে গেছেন। এখন তাকে আর দেশে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা করা হয়েছে। আমাদের ৬০০ নেতা-কর্মীকে গুম করেছে এই সরকার। সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। আলেম-ওলামাদেরও মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। এদের কি আর ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া যায়?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যারা দেশকে ধ্বংস করছে। মানুষকে ধ্বংস করছে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধ্বংস করছে। যারা এই বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দেয় তাদেরকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া যাবে না। আজকে দেশ একটা কঠিন দুঃসময় পার করছে। আমরা কোথায় যাব? এখন জোর করে ক্ষমতায় থাকা অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলছেন- দেশে নাকি দুর্ভিক্ষ হবে। দুর্ভিক্ষ হলে মানুষ কোথায় যাবে। যদি দেশে দুর্ভিক্ষ হয় তার জন্য সমস্ত দায় দায়িত্ব নিতে হবে শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলেও দেশে একটা দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। রংপুর স্টেশনে মানুষেরা না খেতে পেরে পড়ে থাকত। খাবার না পেয়ে মারা যেত। কুড়িগ্রামের চিলমারীর বাসন্তী তার লজ্জা নিবরণের জন্য এক টুকরো কাপড় পায়নি। আবার সেই অবস্থা ফিরে এসেছে। আওয়ামী লীগ এতদিন ধরে কী করল? বাংলাদেশ নাকি মধ্য আয়ের দেশ হয়ে গেছে। বড়লোক হয়ে গেছে। সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া কানাডা হয়ে গেছে বাংলাদেশ। তাহলে দেশের ৪২ ভাগ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে কেন?

তিনি বলেন, ১০ টাকা কেজির চাল খাওয়াতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। এখন ৯০ টাকার চাল খাওয়াচ্ছে। ডাল, ডিম, চিনিসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। শাকসবজি কিনতে গিয়েও মানুষ বাজার থেকে ফিরে আসছেন। আগে যে মানুষ একটু ভালো মন্দ খেতো, এখন সেটাও শেষ। মানুষ কি খেয়ে থাকবে?

সরকারপ্রধানের ধৈর্য ধরার আহ্বান প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের জনগণকে ধৈর্য ধরতে বলছেন প্রধানমন্ত্রী। অল্প খেতে, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হতে বলছেন। দিনে বিদ্যুৎ থাকবে না, রাতে ফ্যান চালাবেন না। এসব আমাদের বলছে সরকার আর তারা খাচ্ছেন চিতল মাছ। আমরা দেখছি আপনারা ঘন ঘন বিদেশ যাচ্ছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে বিদ্যুৎ চালিয়ে আরাম আয়েশ করছেন। আর দেশের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। যারা কৃষি কাজ করছেন তারা সেচের পানি পাচ্ছেন না। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব (দুলু), সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষক দলের মহাসচিব শহিদুল ইসলাম (বাবুল), ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ জুয়েল, রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন নবী ডন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু প্রমুখ। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে