রবিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৩:৫৯:১৭

নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লড়বেন বিএনপি প্রার্থীরা

নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লড়বেন বিএনপি প্রার্থীরা

মাহমুদ আজহার : আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (ইউপি) খুলনার পাইকগাছার ২ নম্বর কপিলমুনি ইউনিয়নে বিএনপির সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাদাত হোসেন ডাবলুর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন, ডাকাতিসহ বেশ কয়েকটি মামলার খড়গ ঝুলছে। দল বলছে, মামলাগুলো রাজনৈতিক।

অবশ্য সবগুলো মামলায় জামিন নিয়ে ফের প্রচারণায় বর্তমান এই চেয়ারম্যান। দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের ৩ নম্বর তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে কৃষক দলের সভাপতি বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী শাহাদাত হোসেন রঞ্জুর বিরুদ্ধেও সম্প্রতি একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুধু এই দুজনই নয়—সারা দেশে বিএনপির সম্ভাব্য অসংখ্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা হচ্ছে। গ্রেফতার-হয়রানির খড়গ ঝুলছে। আগের মামলাগুলোও চাঙ্গা হচ্ছে।

নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ইউপি নির্বাচনে লড়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশেই বিএনপির তৃণমূল নেতৃত্ব চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্সাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। হামলা-মামলা ও ভোট ডাকাতির শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও বিএনপি পৌর নির্বাচনে অংশ নেয়।

একই কৌশলে তৃণমূল নেতৃত্বকে আরও গতিশীল করতে ইউপি নির্বাচনে লড়বে বিএনপি। কোনো শঙ্কাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে না দলের হাইকমান্ড। এরই মধ্যে দলীয় মনোনয়ন পেতে উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। শেষমেশ দলীয় মনোনয়ন না পেলে কেউ কেউ স্বতন্ত্রভাবে লড়ারও চিন্তা করছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই বিএনপি অংশ নেবে। অতীতেও নিয়েছে। আমরা জানি, এ সরকারের আমলে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তারপরও দেশের স্বার্থে গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনে অংশ নেব।’

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, আগামী মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ধাপে ধাপে সারা দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউপিতে ভোট করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমধাপে প্রায় ৭০০ নির্বাচন হবে উপকূলীয় এলাকায়। এরপর পর্যায়ক্রমে বাকি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে প্রথম ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া মার্চে ২০টির মতো পৌরসভা নির্বাচনও হবে। পৌরসভার মতোই প্রথমবার ইউপির চেয়ারম্যান পদে দলীয়ভাবে ভোট নেওয়া হবে। এতে ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে পারবেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশি নাগরিকের এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজারের বারোয়াখালী ইউনিয়নেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সেখানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট গিয়াসউদ্দিন, এবাদুল হক ও শফিকুর রহমান। কক্সবাজারের রামু থানার চাকমারপুল ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ভোট যুদ্ধে লড়তে মাঠে রয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম ভুট্টো ও নুরুদ্দীন।

বিএনপি ছাড়াও জোটের শরিক দল জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও স্বতন্ত্রভাবে লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ভাঙনামারী ৯ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দুজন অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান ও আবদুল করিম প্রচারণা শুরু করেছেন। ওই ইউনিয়নে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় শাহাদাত হোসেন রঞ্জু ছাড়াও বিএনপি নেতা সাইদুর রহমান বাবলু ও উপজেলা যুবদল সভাপতি আবু নোমান এনাম চেয়ারম্যান পদে লড়াইয়ের ঘোষণা নিয়েছেন।

এ ছাড়া বিএনপি জোটের শরিক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি—জাগপার ফারুক আজমও ইউপি চেয়ারম্যান পদে লড়ার ঘোষণা নিয়েছেন। কেন্দ্রে যোগাযোগও করছেন তিনি। পঞ্চগড়ের ভজনপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে লড়তে মাঠে বিএনপির চার প্রার্থী।

তারা হলেন, মোকসেদ আলী, মোস্তফা কামাল স্বপন, আবদুল জলিল ও মুসলিম হোসেন। বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী কামরুজ্জামান কামু ও মোস্তফা জামান রাজুর বিপরীতে বিএনপির সম্ভাব্য দুই প্রার্থী লুত্ফুর রহমান ও কলিমউদ্দিনও গণসংযোগ শুরু করেছেন। বিএনপি প্রার্থীদের প্রায় সবার বিরুদ্ধেই মামলার খগড় ঝুলছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, ইউপি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। মাঠপর্যায় থেকে বাছাই করা প্রার্থীকেই মনোয়ন দেবে বিএনপি। এতে সই করতে পারেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এ প্রসঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, জেল-জুলুমসহ নানা হয়রানি সত্ত্বেও ইউপি নির্বাচনে লড়তে তৃণমূলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। ধানের শীষ প্রতীক পেতে কেন্দ্রে যোগাযোগ রাখছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এলাকায় গণসংযোগও শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। খুব শিগগিরই প্রার্থী বাছাই করা হবে। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা কমিটির মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

বিএনপির তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত নিয়ে ইউপি প্রার্থীদের অনেকেই মাঠপর্যায়ে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। শুভেচ্ছা জানিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনও দিচ্ছেন কোনো কোনো প্রার্থী। সামাজিক কর্মকাণ্ডেও যোগ দিচ্ছেন অনেকে। মামলার আসামিরা জামিন নিতে আদালত পাড়ায় ধরনা দিচ্ছেন।

এ ছাড়া দলীয় টিকিট পেতে স্থানীয় বিএনপি নেতৃত্বের মন জয় করার চেষ্টাও করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। পৌর সভার মতোই প্রতিটি ইউপিতেই বিএনপির একাধিক প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছেন। পৌরসভার মতো কেউ দলের মনোনয়ন না পেলে বিশাল একটি অংশ বিদ্রোহী হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

দফতরের দায়িত্বে থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, তৃণমূলে সাংগঠনিকভাবে দলকে চাঙ্গা করতেই পৌরসভার মতো ইউপিতে লড়বে বিএনপি। তৃণমূলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক—এটাই লক্ষ্য। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি ইউপি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। -বিডি প্রতিদিন
২৪ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে