রবিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৫:৩৪:১৯

আড়াই লাখ এতিমের দিন কাটছে আধপেট খেয়ে

আড়াই লাখ এতিমের দিন কাটছে আধপেট খেয়ে

গাজী শাহনেওয়াজ : সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনস্ত দেশের সাড়ে তিন হাজার বেসরকারি এতিমখানায় দীর্ঘদিন সরকারি বরাদ্দ বন্ধ। ফলে সেখানে আশ্রিত আড়াই লাখ এতিম আধপেট খেয়ে দিন পার করছে।

জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু সেখান থেকে এখনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি। সহসাই তা মিলবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।

জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) গাজী মোহাম্মদ নুরুল কবির বলেন, বেসরকারি এতিমখানায় বরাদ্দ এখনো (ক্যাপিটেশন গ্রান্ড) দেয়া সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠানওয়ারী বরাদ্দ সমন্বয় করতে হয়। এজন্য মন্ত্রণালয়ের বিলম্ব হচ্ছে। শিগগিরই অনুমোদন পাওয়া যাবে। তখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে বরাদ্দ দেয়া শুরু করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ধনাঢ্য ও দানশীল ব্যক্তিদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা সাড়ে ৩ হাজার বেসরকারি এতিমখানা সমাজসেবা অধিদপ্তরে নিবন্ধিত। যেখানে আশ্রিত এতিমের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। এসব বেসরকারি এতিমখানার অর্ধেক অনুদান দেয় সরকার। বাকি অর্ধেক জোগান দেয়া হয় এতিমখানার নিজস্ব তহবিল থেকে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, প্রতি বছর দুধাপে (জানুয়ারি থেকে জুন এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বর) নিবন্ধিত বেসরকারি এতিমখানাগুলোতে সরকারি বরাদ্দ ছাড় করা হয়। তবে চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬) প্রথম ধাপের কোনো অর্থ ছাড় হয়নি। অথচ দ্বিতীয় ধাপের বরাদ্দ দেয়ার সময় এসে গেছে।

জানা গেছে, এতিমদের মাথাপিছু মাসিক সরকারি বরাদ্দ এক হাজার টাকা। এ হিসাব অনুসারে প্রায় ২৫ কোটি টাকা লাগবে। কিন্তু অধিদপ্তরের কাছে রয়েছে মাত্র সোয়া ৯ কোটি টাকা।

এদিকে সরকারি বরাদ্দ বন্ধ থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ধার-দেনা করে কোনো রকমে এতিম শিশুদের মুখে অন্ন জোগাচ্ছেন। এ নিয়ে এতিমখানাগুলোর পাশাপাশি সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও উদ্বিগ্ন।
উল্লেখ্য, সরকারি-বেসরকারি এতিমখানায় ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা আশ্রয় পায়। নিদিষ্ট সময়ের পর তাদের ভবিষ্যৎ নিজেদের গড়ে নিতে হয়।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সমাজকল্যাণমন্ত্রী মো. মহসীন আলী প্রয়াত হলে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে মন্ত্রণালয়টি। এর ওপর মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে ঘন ঘন বদলি এবং সর্বশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবের দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থানের কারণে মন্ত্রণালয়ের কাজে-কর্মে নানা সংকট দেখা দিয়েছে। আর এ কারণেই বেসরকারি এতিম শিশুদের বরাদ্দের নথি সচিবের দপ্তরে পড়ে আছে বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।

অথচ এতিম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুকম্পা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী-তনয়া সায়মা হোসেন পুতুল প্রতিবন্ধী শিশুদের স্বাবলম্বী করতে কাজ করছেন যার স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ এখন মডেল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮০ সাল থেকে বেসরকারি এতিমখানাগুলো ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে শুরু করে। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় এ সংখ্যা এখন পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও এসব এতিম শিশুর ধর্মীয় শিক্ষার বাইরে সাধারণ পাঠদান নিষিদ্ধ ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার ধর্মীয় শিক্ষাকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি এতিমখানার ওপর নজরদারি শুরু হয়। জেলা পর্যায়ে ডিসির নেতৃত্বে একটি কমিটির পাশাপাশি সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তার নেতৃত্বে পৃথক কমিটি করা হয়। তারা আলাদা আলাদাভাবে এগুলোকে পরিদর্শন করেন।

তাদের পর্যবেক্ষণে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্পর্কে সরকার অবহিত হন। এরপর বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি অনুদান দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্তারোপ করা হয়। এর মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা যেমন পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়। বলা হয়, এ শর্তপূরণ ছাড়া তাদের সরকারি অনুদান বন্ধ রাখা হবে।

সরকারের এই সিদ্ধান্ত অনেক প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছায় মেনে নেয়। তবে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এর বিপক্ষে। তাদের ভাষ্য, তারা ধর্মীয় শিক্ষার বাইরে এসব শিশুর অন্য কোনো পাঠদানে অভ্যস্ত করবেন না। প্রয়োজনে তারা সরকারি অনুদানও নেবেন না।

প্রসঙ্গত, দেশে এতিমখানা রয়েছে দু'ধরনের। সরকারি ও বেসরকারি। যা শিশু সদন নামে অধিক পরিচিত। দেশে সরকারি এতিমখানা ৮৫টি। একেকটিতে এতিম রয়েছে ১০০ বা তার কিছু বেশি। সর্বসাকুল্যে সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ। তাদের ভরণ-পোষণ দেয় সরকার। -যায়যায়দিন
২৪ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে