সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ০৯:৪০:৫১

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কত টাকা বেতন বা সম্মানী পান, আরও কী কী সুবিধা পান?

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কত টাকা বেতন বা সম্মানী পান, আরও কী কী সুবিধা পান?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের আইনবিভাগ, শাসনবিভাগ ও বিচারবিভাগের সকল শাখার আনুষ্ঠানিক প্রধান এবং বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক (কমান্ডার ইন চিফ)। দণ্ডিত ব্যক্তির দণ্ডাদেশ স্থগিত, হ্রাস বা দণ্ডিতকে ক্ষমা করার অধিকার রয়েছে রাষ্ট্রপতির। 

বর্তমানে রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে থাকেন। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার পূর্বে রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতেন। রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর। অনেকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণটি দেন রাষ্ট্রপতি। বছরের প্রথম সংসদীয় অধিবেশনের প্রথম উদ্বোধনী ভাষণটিও তিনিই দেন। 

তার এই ভাষণটি আসলে নতুন সরকারি নীতির রূপরেখা মাত্র। জাতীয় সংসদে পাস হওয়া প্রতিটি বিল রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমেই আইনে পরিণত হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কত টাকা বেতন বা সম্মানী পান একইসঙ্গে আরও কী কী সুবিধা পান সে বিষয়টি অনেকেরই অজানা।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বেতন বা সম্মানী এক লাখ ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়া রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্যদের খাবার, আবাসন, চিকিৎসা, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সব ধরনের ব্যয় রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকেই করা হয়। রাষ্ট্রপতির সরকারি আবাস্থলের টেলিফোন, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সব ধরনের সেবা খাতের ব্যয় সরকার বহন করবে। এসব বিল ট্যাক্সেরও আওতায় আসবে না।

এছাড়া রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবার এবং কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অতিথিদের পানীয় ও তামাকজাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ট্যাক্স-ফ্রি কিনতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি অবসরে গেলেও আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগত স্টাফসহ অবসর সুবিধা পাবেন।

১৯৭৫ সালে প্রণীত আইন অনুযায়ী, ‘রাষ্ট্রপতির বেতন ভাতা ও সুবিধাদি আইন’ প্রণয়ন করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে ১৯৭৫ সালের ১২ জুলাই জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের দ্য প্রেসিডেন্টস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) ১৯৭৫ পাস হয়। এরপর আইনটি সংশোধন করা হয় ১০ বার ।

১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতির বেতন নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫০০ টাকা। এরপর ১৯৮৭ সালে সেটি বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা, ১৯৯২ সালে ১৫ হাজার টাকা, ১৯৯৮ সালে ২৩ হাজার টাকা, ২০০৫ সালে ৩৩ হাজার ৪০০ টাকা, ২০০৯ সালে ৬১ হাজার ২০০ টাকা এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে এক লাখ ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি যে বেতন পান, সেটি সম্পূর্ণ আয়করমুক্ত। মাসে আড়াই হাজার টাকা ছুটি ভাতা পাবেন রাষ্ট্রপতি। এই টাকাও হবে আয়করমুক্ত। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনে তার প্রয়োজনীয় সব ধরনের অর্থও সরকার বহন করবে।
রাষ্ট্রপতির জন্য সরকারি আবাসন ব্যবস্থা থাকবে। এর আসবাবপত্রসহ সুসজ্জিতকরণ ও মেরামতের পুরোটাই সরকার বহন করবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিজের বাড়ি বা ভিন্ন কোনও বাড়িতে অবস্থান করতে চাইলেও সেটিকে সুসজ্জিতসহ উপযুক্তকরণের দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাবে। রাষ্ট্রপতির বাসভবন সংশ্লিষ্ট রাস্তাঘাট মেরামত ও সংস্কারের ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে।

আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আপ্যায়নের সুবিধাদি প্রাপ্য হন। বঙ্গভবনে দেশি-বিদেশি অতিথি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার, ইফতার পার্টি, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, বুদ্ধপূর্ণিমা, দুর্গাপূজা, যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন, পহেলা বৈশাখ, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে আমন্ত্রিতদের আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় সরকারের নির্ধারিত খাত থেকে বহন করা হয়। রাষ্ট্রপতি কোনও দেশি-বিদেশি অতিথিদের আপ্যায়ন করলে বা তাদের কোনও ধরনের উপহার দিলে তার ব্যয়ও সরকার বহন করবে।

রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্যদের খাবার খরচ সরকারি খাত থেকে ব্যয় হবে। বাবুর্চি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সব ব্যয় বহন করবে সরকার।আইনে পরিবারের সদস্য বলতে স্ত্রী-স্বামী, সন্তান, পিতা-মাতা ও অবিবাহিত ভাইবোনকে বোঝানো হয়েছে, যারা তার ওপর নির্ভরশীল।

রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্যদের উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় যানবাহন সরকারকে নিশ্চিত করবে। রাষ্ট্রপতির সব ধরনের সফর ও সফরকালীন অবস্থানের ব্যয়ও সরকার প্রদান করবে। পরিবহনের জ্বালানি সরকার বহন করবে এবং জ্বালানি হবে ট্যাক্সের আওতামুক্ত। রাষ্ট্রপতি ভ্রমণের ক্ষেত্রে রেলওয়ে, বিমান ও নৌযানে সর্বোচ্চ সুবিধা সংবলিত আসন পাবেন। বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে তার বার্ষিক ২৭ লাখ টাকা বিমা কাভারেজ প্রদান করবে সরকার।

রাষ্ট্রপতি বা তার পরিবারের সদস্য এবং সরকারি বেসরকারি অতিথিদের জন্য ব্যবহৃত তামাকজাত পণ্যের ওপর কোনও ট্যাক্স আরোপ করা যাবে না। এসব ব্যক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে উৎপাদিত পানীয়ও ট্যাক্সের আওতামুক্ত থাকবে।

সরকারি কাজে বিদেশ সফরে গেলে তার সব ধরনের খরচ সরকার বহন করবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই খাতের ব্যয় সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বহন করা হয় বলে জানা গেছে।

রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবারের সদস্যদের আবাসস্থলেও সাধারণ চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া দেশের হাসপাতালগুলোতে সরকারি খরচে এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবেন।

রাষ্ট্রপতি বছরে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয়ের জন্য স্বেচ্ছাধীন তহবিল পাবেন। রাষ্ট্রপতি এ টাকা সরকারের নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে ব্যয় করতে পারবেন। তহবিলের অর্থ থেকে দরিদ্র, অসচ্ছল, অসহায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। রাষ্ট্রপতির এ খাতের ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনও সরকারি অডিট হবে না।

এছাড়া ছয় মাস বা তার অধিক সময়কাল দায়িত্ব পালন শেষে রাষ্ট্রপতি অবসরে গেলেও বেতনের ৭৫ শতাংশ হারে মাসিক অবসর ভাতা পাবেন। এর বাইরেও অবসরকালে একজন ব্যক্তিগত সহকারী, একজন অ্যাটেনডেন্টসহ সরকার নির্ধারিত দাপ্তরিক খরচ পাবেন রাষ্ট্রপতি। এছাড়া মন্ত্রীর সমপরিমাণ চিকিৎসা খরচও পাবেন তিনি।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে