এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পুলিশ হত্যা মামলায় নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করেছেন আরাভ খান। তবে সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তা পেলে তিনি দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন। আদালত তাকে যে দণ্ড দেবেন তা মাথা পেতে নেবেন বলেও জানিয়েছেন আরাভ।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আরাভ খান নামের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে তিনি এসব কথা বলেন। আরাভ খান বলেন, ‘আমার নামে মামলা হয়েছে এ কথা সত্য। তবে আমি কোনো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নই। আমি যদি খুনি হতাম তাহলে তো আন্ডারগ্রাউন্ডে (আড়ালে) চলে যেতাম। পাঁচ বছর আগের একটা ঘটনা, এরপর তো আমি এক দিনের জন্যও অফলাইন হইনি। আমি বলিনি আমার নামে মামলা নেই, মামলা আছে।’
তার বনানী অফিসে হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন তিনি। এটিকে একটি দুর্ঘটনা দাবি করে আরাভ খান বলেন, ‘২০১৮ সালে আমি রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করতাম। বনানীতে আপন বিল্ডার্স নামে আমার অফিস ছিল। সে অফিসে একটা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কাথা-কাটাকাটি নিয়ে এসবির ইন্সপেক্টর মার্ডার হন। এটা সম্পূর্ণ অ্যাক্সিডেন্ট (দুর্ঘটনা) ছিল। আমি তখন বাসায় ছিলাম। আমার সহকারী আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনা জানান। আমার একটাই অপরাধ, আমি ওই অফিসের মালিক ছিলাম। এ ঘটনায় আমি জড়িত না, আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’
অস্ত্র মামলার কথা স্বীকার করে আরাভ বলেন, ‘পুলিশ আমাকে অস্ত্র মামলায় জেলে দিয়েছে, এ কথা সত্য। তবে আমি দোষী না। আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় জেলে গিয়েছি। আবার জামিনে বেরিয়ে এসেছি।’
আমেরিকায় তার গ্রিনকার্ড আছে দাবি করে আরাভ খান বলেন, ‘আমার আমেরিকান গ্রিনকার্ড আছে। কানাডিয়ান পাসপোর্ট আছে। কই আমি তো চলে যাইনি। অনেকে আমাকে চলে যেতে বলেন। আমি খুনের সঙ্গে জড়িত না। জড়িত থাকলে পালিয়ে যেতাম।’
৬৪ জেলায় মসজিদ বানানোর ঘোষণা দিয়ে আরাভ খান বলেন, ‘আমি একজন দিনমজুরের ছেলে। আমি ঢাকায় এসে অনেক কষ্ট করেছি। হোটেলে কাজ করেছি। অনেক কষ্ট করে আমি আজ এ অবস্থানে এসেছি। আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ রাখে তাহলে খুব শিগগিরই দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৪টি মসজিদ নির্মাণ করব।’
সাকিবসহ দোকান উদ্বোধনে উপস্থিত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও সাকিব আল হাসান ভাই আমার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেছেন। এ জন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ।’
এর আগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দুবাইয়ের হিন্দ প্লাজায় ‘আরাভ জুয়েলারি’ নামে এই স্বর্ণের দোকানটি উদ্বোধন করেন। দোকানটির মালিক কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ ইউনিয়নের আশুতিয়া গ্রামের আরাভ খান। তবে তার প্রকৃত নাম সোহাগ মোল্লা বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
সোহাগ মোল্লা আশুতিয়া গ্রামের দিনমজুর মতিয়ার রহমান মোল্লার ছেলে। মতিয়ার একসময় বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায় ফেরি করে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করতেন। সেখানেই ১৯৮৮ সালে সোহাগ মোল্লার জন্ম হয়। ২০০৫ সালে চিতলমারী সদরের একটি বিদ্যালয় থেকে সোহাগ মোল্লা এসএসসি পাস করেন। দারিদ্র্যের কারণে এরপর আর তার লেখাপড়া হয়নি।
চিতলমারী থেকে ২০০৮ সালে তিনি ঢাকায় চলে যান। সেখানে গিয়ে নাম পরিবর্তন করে হয়ে যান মোল্লা আপন। জড়িয়ে পড়েন অপরাধ জগতে। পুলিশ হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের কারণে ঢাকার বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা হয়।
২০১৮ সালের ৭ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি ফ্ল্যাটে খুন হন পরিদর্শক মামুন। তাকে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর আরাভ খান ওরফে সোহাগ মোল্লা ভারতে পালিয়ে যান। এই মামলায় ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল গোয়েন্দা পুলিশ সোহাগ মোল্লা ওরফে রবিউলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়। পুলিশ হত্যার মামলায় তার ভাড়া করা এক ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করে ৯ মাস জেল খেটে বের হন! ২০২০ সালে ভারতীয় পাসপোর্ট পান তিনি। যাতে তার নাম বদলে লেখা হয় ‘আরাভ খান’।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে আমরা অবগত করার পরেও সাকিবসহ অন্যান্য তারকারা দুবাই গিয়ে আরাভ খানের স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এটা তারা কেন করেছেন, আমরা জানি না। তবে আমরা আমাদের মতো করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আরাভ খানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
ডিবি প্রধান বলেন, ‘আরাভ খান বর্তমানে দুবাইয়ে রয়েছেন। তার ভারতের পাসপোর্ট রয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আদালতের ১২টি পরোয়ানা পেয়েছি আমরা।’ তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে সাকিব-হিরো আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানিয়েছেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।