শনিবার, ০৮ এপ্রিল, ২০২৩, ১১:১১:২১

চোখেমুখে কষ্টের ছাপ নিয়ে ফুটপাতে দোকান বসিয়েছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা

চোখেমুখে কষ্টের ছাপ নিয়ে ফুটপাতে দোকান বসিয়েছেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : চৈত্রের দুপুরে প্রখর সূর্য এড়িয়ে বন্ধ চায়ের দোকানে দুই যুবক মগ্ন হয়ে কিছু একটা হিসাব কষছিলেন। কাছে গিয়ে কান পাততেই শোনা গেল একে অপরকে বলছেন, ‘একটা চৌকি ম্যানেজ কর, মালের ব্যবস্থা হইয়া যাইব। দোকান খুলতে পারলেই একটু উইঠা দাঁড়াইতে পারমু। আল্লাহ চাইলে আবার শূন্য থেকে শুরু করমু।’

রাজধানীর বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে সব হারিয়ে নতুন করে শুরুর আশায় কথাগুলো বলছিলেন সালাম ও মাহফুজ নামের দুই ব্যবসায়ী। অগ্নিকাণ্ডের পোড়া ধ্বংসস্তূপ থেকে কিছুটা দূরে কথা হয় তাদের সঙ্গে।

সালাম ও মাহফুজের দোকানের সঙ্গেই পুড়েছে গোডাউনে রাখা মালামাল, ক্যাশ বাক্সের টাকাসহ হিসাবের খাতাও। ফলে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষতে গেলেই যোগ-বিয়োগের ফলাফল দাঁড়াচ্ছে শূন্য। অগ্নিকাণ্ডের ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার শেষে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আবার দোকান বসাতে দেওয়ার আশ্বাসের খবরে নতুন করে ব্যবসা শুরুর আশায় পরিকল্পনা করছিলেন তারা।

তাদের মতো শূন্য থেকে শুরু করার আশায় শনিবার (৮ এপ্রিল) সকাল থেকে পোড়া বঙ্গবাজারের অনেক ব্যবসায়ী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স হেডকোয়ার্টারের সামনের রাস্তায় নিজেদের দোকান শুরু করেছেন। নিউ সেক্রেটারি রোড নামের ওই সড়কটির ফুটপাত এবং গুলিস্তান ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক বিভাজকে চৌকি পেতে বসেছে সারি সারি দোকান। দোকানগুলোকে ঘিরে জনসমাগম হলেও এখনো বিক্রি জমে ওঠেনি। সব ব্যবসায়ীর চোখেমুখে কষ্টের ছাপ।

ব্যবসায়ীরা জানান, জীবন-জীবিকার তাগিদে কিভাবে দ্রুত ব্যবসা শুরু করা যায়, সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। তারা দ্রুত পুনর্বাসন চান। ব্যবসায়ী নেতারাও তাদের এই দাবির সঙ্গে একমত। আর অনেক ছোট ব্যবসায়ী ঈদকে সামনে রেখে নিজেদের ক্ষতচিহ্নের দাগ নিয়েই ফুটপাতে কাপড়ের দোকান বসিয়েছেন।

পুড়ে যাওয়া গুলিস্তান মার্কেটের ধ্বংসস্তূপের পাশেই চৌকি পেতে আবারও ব্যবসা শুরু করেছেন দুই ভাই আনোয়ার ও সোহাগ। তাদের প্রতিষ্ঠান মায়ের দোয়া লেদার হাউসের অবস্থান ছিল মার্কেটটির নিচতলায়।

সোহাগ বলেন, ‘দোকানের মালামাল সব পুড়ে গেছে। বড় ভাইয়ের বাসায় দুই বস্তা ব্যাগ আছিল, এগুলা নিয়াই বইসা পড়ছি। মার্কেটের মুরব্বিরা (মালিক সমিতি) কইল আল্লার নামে চৌকির ওপরই দোকান শুরু কইরা দাও।’

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘ধ্বংসস্তূপ সরানোর পর ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের চিন্তা-ভাবনা করা হবে। আপাতত অনেকে ফুটপাতে বসেছেন। খোলা জায়গায় সব ব্যবসায়ীকে তো বসার সুযোগ করে দেওয়া সম্ভব নয়। এর পরও আমরা একটি দোকানে দুজন করে বসার সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করব।’

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও মালিকদের তালিকার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও মালিকদের তালিকা করার কাজ চলছে। রবিবার আমাদের ব্যবসায়ীদের বৈঠক আছে। সেখানে আমরা চূড়ান্ত তালিকাটি উপস্থাপন করব।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে