রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৮:৪৯:২১

যে কারণে হয় বিরল রোগ ‘ট্রি-ম্যান’

যে কারণে হয় বিরল রোগ ‘ট্রি-ম্যান’

নিউজ ডেস্ক : বিরল রোগ ‘ট্রি-ম্যান’।  রোগটি হলে হাত-পাসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ গাছের শেকড়ের মতো হয়ে যায়।  ভয়ানক আকার ধারণ করে।  আক্রান্ত লোকটিকে দেখলে যে কেউ আতকে উঠবে।  এ রোগ ট্রি-ম্যান নামে পরিচিত।  ভিন দেশে অন্য দুজনের এ রোগ দেখা দিলেও সর্বশেষ খুলনার পাইকগাছা উপজেলার আবুল হোসেনের এ রোগ ধরা পড়েছে।  এ রোগে বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩ জন।    

সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে ইন্দোনেশিয়াতে এক জেলের দেহে রোগটি ধরা পড়ে। একে ট্রি-ম্যান রোগ নামে ডাকা হলেও এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘এপিডারমোডিসপ্লাসিয়া ভেরুসিফরমিস’।  

রোগটিকে ‘লেওয়ানডোস্কি-লুজ ডিসপ্লাসিয়া’ নামেও আখ্যায়িত করা হয়। জার্মান চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ফেলিক্স লেওয়ানডোস্কি ও উইলহেলম লুজের কাছে প্রথম রোগটি ধরা পড়ে।  

‘হিউম্যান প্যাপিলোমা’ নামের এক ধরনের ভাইরাসের (এইচপিভি) আক্রমণে মানবদেহে রোগটি সৃষ্টি হয়।  এ রোগ হলে ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।  

এ রোগ হলে হাত এবং পায়ে প্রথমে এক ধরনের ফুস্কুরি তৈরি হয়। মানবদেহে এইচপিভি টাইপ-৫ ও টাইপ-৮ বেড়ে গেলে এ রোগ আক্রমণ করে।  সাধারণত ২০ বছর বয়সের মধ্যে মানবদেহে এটি আক্রমণ করে।

তবে কখনো কখনো মধ্য বয়সীরাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।  দেহের ক্রোমোজোমের মধ্যে ‘এভার-১’ অথবা ‘এভার-২’ জিনের কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়লে রোগটি সৃষ্টি হয়।  বংশগত কারণেই এ রোগে আক্রান্ত হয় বলে চিকিৎসকদের ধারণা।

ট্রি-ম্যান রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর মুখমণ্ডল, ঘাড়, দেহ এবং গোপন অঙ্গে আঁশযুক্ত লালচে বাদামি রঙের চেপ্টা এক ধরনের ফুস্কুরি দেখা দেয়।  ধীরে ধীরে দেহে এগুলো বাড়তে থাকে।  একসময় সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে।

হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাস এমন এক গ্রুপের ভাইরাস।  এতে ত্বক ও শরীরের আর্দ্র ঝিল্লিকে আক্রান্ত করে।  এমন শতাধিক রকমের ভাইরাস আছে। এর মধ্যে ৩০ রকম ভাইরাস মানুষের জননেন্দ্রীয়কে আক্রান্ত করতে পারে।

এ ভাইরাসের সব রকমের সংক্রমণেই ত্বকে আঁচিল সৃষ্টি করে।  খুব দ্রুত গতিতে ত্বকের বাইরের স্তরে ছড়িয়ে পড়ে।  বেশির ভাগ আঁচিল ফুলকপির মতো ছড়িয়ে পড়ে।  এমন আঁচিল সাধারণত দেখা যায় বাহুতে, মুখে ও কপালে।

এখন পর্যন্ত এ রোগের কার্যকর কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি বের হয়নি।  ‘ভিটামিন এ’ অ্যাসিট্রেটিন জাতীয় ওষুধ প্রতিদিন ০.৫ মিলিগ্রাম থেকে ১ মিলিগ্রাম সেবন করলে এ রোগ প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।  এর সাথে প্রোটিন সমৃদ্ধ ‘ইন্টারফেরনস’ জাতীয় ওষুধ সেবনও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।  

চিকিৎসকদের মতে, হিস্টামিন জাতীয় ‘সিমেটিডিন’ ওষুধও রোগটি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।  অবশ্য কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সিমেটিডিন এ ক্ষেত্রে কার্যকর নয়।  বরং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ ‘ক্যালসিপোট্রিয়ল’ জাতীয় ওষুধ সবেচেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে।

২০০৮ সালে রোমানিয়োতে ইয়ন টোডার এ রোগে আক্রান্ত হয়।  ২০১৩ সাল পর্যন্ত সে অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠে।  এরপর তার দেহে এ রোগ খুব সামান্য দেখা গেছে।  তবে এ রোগটি নিয়ে গবেষণা আর বেশি দূর এগোয়নি।

২০০৭ সালে ইন্দোনেশিয়াতে আক্রান্ত দেদে কোসওয়ারাকে সুস্থ করা সম্ভব হয়নি।  কারণ তার চিকিৎসার আগেই মারা মারা যায়।  ২০০৮ সালে তার দেহ থেকে ৬ কিলোগ্রাম আঁচিল অপারেশন করে আলাদা করা হয়েছিল।  তাকে নিয়ে তখন ডিসকভারি চ্যানেল একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছিল।

বিরল ট্রি-ম্যান রোগে আক্রান্ত আবুল হোসেন এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি।  হাতে ও পায়ে গাছের শেকড়ের মতো মাংসপেশী নিয়ে গতকাল শনিবার তিনি ঢামেকে ভর্তি হন।
৩১ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে