সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০১:২৩:৫৫

পদ পেতে মরিয়া বিএনপির নিষ্ক্রিয়রা

পদ পেতে মরিয়া বিএনপির নিষ্ক্রিয়রা

মাহমুদ আজহার : সামনে কাউন্সিল। এ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ বাড়ছে বিএনপিতে। রাজধানীর নয়াপল্টন কার্যালয়ে গেলে চোখে পড়ে নতুন মুখের আনাগোনা। একই অবস্থা বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়েও। আত্মগোপনে থাকা রাজপথের নিষ্ক্রিয় নেতাদের ঘোরাফেরা সর্বত্রই। তাদের বেশভূষাও ফিটফাট আর নামি-দামি।

দশম জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আন্দোলনে এরাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তাদের বড় একটি অংশই এখন প্রকাশ্যে। দুই কার্যালয়ের পাশাপাশি প্রভাবশালী নেতাদের বাসভবনেও দেখা মেলে তাদের। একটি অংশ যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের চেষ্টায়। আগামী ১৯ মার্চ কাউন্সিল করার কথা ভাবছে বিএনপি।

সে লক্ষ্য নিয়েই প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরুও করেছে। হল বরাদ্দের জন্য বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চেয়ে আবেদন করেছে দলটি। এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি। বিএনপি আশা করছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাউন্সিল করতে পারবে তারা। এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমরা বড় পরিসরে কাউন্সিলের চিন্তাভাবনা করছি। কাউন্সিলের আগেই চেয়ারপারসন নির্বাচিত হবেন। কাউন্সিলে মহাসচিব নির্বাচন করা হবে।’ সর্বশেষ ২০০৯ সালে পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল করে বিএনপি। এরপর কয়েক দফা উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৩ সালে উদ্যোগ নিয়ে প্রায় তিন হাজার কাউন্সিলরও নির্ধারণ করে।

এর মধ্যে উপজেলা-পৌর, থানা, জেলা ও মহানগর পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, নির্বাহী কমিটি ও চেয়ারপারসনের সংরক্ষিত ১০ ভাগ প্রতিনিধিকে কাউন্সিলর ঘোষণা করা হয়। এবারও ওই প্রক্রিয়াই অনুসরণ করা হবে। এর মধ্যে যেসব স্থানে পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই, সেখানে কাউন্সিলর হিসেবে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব বা এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়করা কাউন্সির হিসেবে অংশ নেবেন।

নিয়ম অনুযায়ী কাউন্সিলের পরপরই নতুন নির্বাহী কমিটি, স্থায়ী কমিটি ও মহাসচিব নির্বাচন করবেন দলের চেয়ারপারসন। বিএনপি নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, যাদের ত্যাগ নেই, অথচ পদ পেতে তারাই সর্বত্র দৌড়ঝাঁপ করছেন। নির্বাহী কমিটির একটি সদস্য পদ পেতে ঘাম ঝরাচ্ছেন কেউ কেউ। আবার পদোন্নতি পেতেও মরিয়া অনেকে। অথচ আন্দোলনের সময় এ নেতাদের অনেকেরই মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়েছেন খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন। তারাই আজ পদের জন্য লবিং-তদবিরে নেমেছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একাধিকবার তার বক্তব্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘যারা সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন, দলের প্রতি নিবেদিত, বেইমানি করেননি, কাউন্সিলে তারাই গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবেন। নিষ্ক্রিয় ও ব্যর্থ নেতাদের নিজে থেকেই সরে যাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।’

গেল বছরের ৯ আগস্ট বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান স্বাক্ষরিত জেলা পর্যায়ে পাঠানো একটি চিঠিতেও নিষ্ক্রিয়দের ব্যাপারে ওই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাউন্সিলের মাধ্যমে ‘এক নেতার এক পদ’ রাখার ব্যাপারেও চেয়ারপারসনের চিন্তা রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এমপি-মন্ত্রীদের জেলা নেতৃত্বে না রাখার পক্ষে বিএনপি নেতাদের বড় একটি অংশ। ২০০৯ সালের কাউন্সিল উপলক্ষে ১২টি বিভাগ করেছিল বিএনপি।

বড় পরিসরে কাউন্সিলের সুযোগ পেলে ওই কমিটিই এবার বলবত্ থাকতে পারে। সেই সময় অভ্যর্থনা বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন মরহুম মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। এবার তার স্থলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

এর আগে গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির প্রধান স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা কমিটিতে মির্জা আব্বাস, নিরাপত্তায় আ স ম হান্নান শাহ, প্রচারে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, কূটনৈতিকে ড. আবদুল মঈন খান, খসড়ায় নজরুল ইসলাম খান, আপ্যায়নে সাদেক হোসেন খোকা, প্রকাশনায় আবদুল্লাহ আল নোমান, স্বাস্থ্য ও চিকিত্সায় অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, দফতরে অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী দায়িত্ব পালন করেন।

এদের মধ্যে মির্জা আব্বাস জেলে রয়েছেন। বিএনপি আশা করছে, কাউন্সিলের আগেই তিনি মুক্তি পাবেন। অন্যদিকে সাদেক হোসেন খোকা নিউইয়র্কে চিকিত্সাধীন। কাউন্সিল উপলক্ষে তার দেশে ফেরা না ফেরা নিয়ে নিশ্চিত জানা যাচ্ছে না। তিনি না এলে সেখানে বিএনপির অন্য কেউ দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এ ছাড়া কাউন্সিলের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বিচারপতি টি এইচ খান দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

এ ছাড়া রিটার্নিং অফিসার হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে। তবে শারীরিক কারণে টি এইচ খান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করতে না পারলে সেখানে অন্য কেউ দায়িত্ব পালন করবেন।

জানা যায়, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল চিকিত্সার জন্য দেশের বাইরে। আজ তার ফেরার কথা। তিনি ফিরলেই কাউন্সিলের জন্য উপ-কমিটির গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে। দল পুনর্গঠনের সঙ্গে যুক্ত বিএনপির একাধিক নেতা জানান, কাউন্সিলের আগে ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া পুরোপুরিভাবে শেষ নাও হতে পারে। তাই কাউন্সিলের পরও অবশিষ্ট জেলাগুলোর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলবে। এর মধ্যে ১০টি জেলার নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কাউন্সিল উপযোগী আরও অন্তত ২০টি জেলায় কমিটি গঠন করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ছয় বছর আগে সর্বশেষ কাউন্সিলে দলটির গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। এবারও গঠনতন্ত্রে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। এর আগে নির্বাহী কমিটির সদস্য ২৫১ থেকে বাড়িয়ে ৩৮৬ করা হয়। এবার নির্বাহী কমিটির আকার ছোট করা যায় কিনা তা নিয়েও ভাবছেন নীতিনির্ধারকরা। -বিডি প্রতিদিন

০১ ফেব্রুয়ারী,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে