সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৪:১০:৪৭

দলের কাঠামোয় পরিবর্তন আনছে আওয়ামী লীগ

দলের কাঠামোয় পরিবর্তন আনছে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি : দলের কাঠামোতে পরিবর্তন আনছে আওয়ামী লীগ। আগামী ২৮ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে এ পরিবর্তন আসবে। এ নিয়ে ভিতরে ভিতরে কাজ শুরু করেছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। পরিবর্তনের মধ্যে দলের গঠনতন্ত্রে বড় ধরনের সংশোধনী আনা হতে পারে।

এ সংশোধনীতে থাকছে নতুন পদ সৃষ্টি, সাংগঠনিক ইউনিট বাড়ানো, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ১৯তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলের মেয়াদ গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। পরবর্তী কাউন্সিল হবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। দলীয় সূত্রমতে, ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সংখ্যা বাড়িয়ে ৭৭ করা হতে পারে। দলে বর্তমানে সাত বিভাগে সাতজন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ রয়েছে। ইতিমধ্যে ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণা করা হয়েছে।

ফরিদপুর ও কুমিল্লা নতুন তিনটি বিভাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। ফলে সাত সাংগঠনিক সম্পাদকের স্থলে তিনটি নতুন পদ বৃদ্ধি করে ১০ করা হতে পারে এবারের কাউন্সিলে। সাধারণ সম্পাদকের বাইরে সমমর্যাদায় দলের মুখপাত্রের পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। প্রতিনিয়তই দলের পক্ষ থেকে কোনো না কোনো ইস্যুতে বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকেই পদটির কথা চিন্তা করা হচ্ছে। এর বাইরে নতুন করে তথ্য ও প্রযুক্তি (আইসিটি), প্রশিক্ষণ, মানবাধিকারসহ কয়েকটি সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করা হতে পারে।

এ ছাড়া প্রচার ও প্রকাশনা, শিল্প ও বাণিজ্য, কৃষি ও সমবায়সহ কয়েকটি সম্পাদকীয় পদ ভেঙে এর সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। ধর্মীয় ও সংখ্যালঘুদের জন্য নতুন পদ অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তাভাবনা হচ্ছে। এ নিয়ে এখন কাজ শুরু করেছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। এ কাউন্সিলকে সফল করতে ১০টি উপ-কমিটি গঠনের কাজ এগিয়ে চলছে। দলের একজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এ কাজ করছেন। ইতিমধ্যে এ কাজ প্রায় শেষের দিকে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলের গঠনতন্ত্রে সংশোধনী, নতুন পদ সৃষ্টি ও কার্যনির্বাহী সংসদের কলেবর বৃদ্ধি নিয়ে নানা আলোচনা দলের মধ্যে হচ্ছে। তবে কোনো কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। দলের  কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কাউন্সিলের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে ১০টি উপকমিটি গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামীতে দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে বেশকিছু পরিবর্তন আসবে বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুনদের স্থান দেওয়া একটি নিয়মিত কর্মকাণ্ড। আমরা দলীয় সংবিধানে পরিবর্তন আনব যাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, আগামী কাউন্সিলটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই কমিটিই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করবে। বিগত সংসদ নির্বাচনের তুলনায় আগামী নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সেসব বিবেচনায় এবারের কাউন্সিলটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা।

কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিটি সম্মেলনে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঐতিহাসিক ৬ দফা, বাংলাদেশ স্বাধীন করার প্রত্যয় এর মধ্যে সেরা সিদ্ধান্ত। এবারের সম্মেলনেও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে আওয়ামী লীগ ইতিহাস সৃষ্টি করবে। আর আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত নেয়, তা বাস্তবায়ন না করে যে ঘরে ফিরে যায় না সেটা প্রমাণিত।

এরপর থেকেই দলের ভিতরে-বাইরে এবারের সম্মেলনে কী সিদ্ধান্ত আসছে তা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, বিগত কাউন্সিলে কিছু পদে পরিবর্তন জরুরি ছিল। কিন্তু করা হয়নি। এবার বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন দলীয় সভাপতি। প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সবসময়ই তার জেলা-উপজেলাসহ শাখা ইউনিট বৃদ্ধি করে আসছে।

নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর শহর সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার কারণে ইতিমধ্যে এই দুই মহানগরীকে জেলা শাখার মর্যাদা দিয়ে নতুন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ দুটি শাখা যুক্ত হওয়ায় দলটির সাংগঠনিক জেলা বেড়ে ৭৫টি হয়েছে। এখন কার্যকর না হলেও কার্যনির্বাহী সংসদ ঢাকা মহানগরীকেও দুই ভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। এদিকে ময়মনসিংহ বিভাগের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলে জেলার মর্যাদা দিয়ে বিভাগীয় শহরটিতে আরেকটি ইউনিট অনুমোদন দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ করা হলে সেখানেও একই ধরনের অর্থাত্ জেলার মর্যাদায় মহানগর কমিটি গঠনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। - বিডি প্রতিদিন
০১ ফেব্রুয়ারী,২০১৬/এমটিনিউজ/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে