মঙ্গলবার, ০২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ১২:৫১:১৪

গয়েশ্বরের বাড়ির সামনে এসব কি হচ্ছে?

গয়েশ্বরের বাড়ির সামনে এসব কি হচ্ছে?

নিউজ ডেস্ক : ২২৬/১, শেরেবাংলা রোড, রায়েরবাজার। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বাড়ি। গত তিনদিন ধরে ওই গয়েশ্বরের বাড়ির সামনে এসব কি হচ্ছে? বাড়ির গেটের সামনে টানানো হয়েছে ব্যানার। বাড়ির সামনে উচ্চস্বরে বাজানো হচ্ছে মাইক। রাস্তায় মহড়া দিচ্ছেন সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। মারধর করা হয়েছে বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষীকেও। মাঝে-মধ্যে বাড়িতে ঢিলও ছোড়া হচ্ছে।

ঘটনার সূত্রপাত মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কীত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। গত ২১শে ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে মুক্তিযোদ্ধা দলের এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই মন্তব্যের পর সরকার দলের নেতারা তীব্র প্রতিবাদ জানান।

এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। সর্বপ্রথম দলটির সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিএনপি চেয়ারপারসনের ওই মন্তব্যটি সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন। একইসঙ্গে তিনি ৩০ লাখ শহীদের তালিকা দেয়ার জন্য সরকারকে বলেন। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একই সুরে কথা বলেন বিএনপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।

গত শনিবার সকালে ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের’ ব্যানারে গয়েশ্বর রায়ের বায়েরবাজারস্থ শেরেবাংলা মোড়ের গদিঘর এলাকার বাড়িটি ঘেরাও করে সরকার দলের নেতাকর্মীরা। এতে যুবলীগ ও প্রজন্মলীগের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। সকাল ১০টা থেকে ওই বাড়ির সামনে অবস্থান নেয় তারা। ওই বাড়ির দিকে মাইক লাগানো হয়। এ সময় বাড়ি ঘেরাওয়ের কারণ জানতে চাইলে বাড়ির কেয়ারটেকার শাহজাহানকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। এরপর ওই বাড়ির দেয়ালে টানানো হয় ব্যানার।

দিনব্যাপী উচ্চস্বরে গান বাজানোর পাশাপাশি গয়েশ্বর রায়ের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেয়া হয়। অবিলম্বে শহীদদের নিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে পরিণতি ভাল হবে না বলেও ঘেরাও কর্মসূচি থেকে হুমকি দেয়া হয়। এ সময় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাসায় ছিলেন না। তবে তার অসুস্থ স্ত্রী ঝর্ণা রায় ও ছেলে অমিতাভ রায় বাসায় ছিলেন। তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। দুপুরের দিকে ঘেরাও কর্মসূচি পালন শেষে তারা চলে যান।

তবে বিকাল পর্যন্ত ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে আমাদের অঙ্গীকার’ শীর্ষক ব্যানারটি বাড়ির দেয়ালে টানানো ছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও নীরব ভূমিকা পালন করে। পরদিনও বাড়ির সামনে মহড়া দেন সরকার দলের নেতাকর্মীরা। বাড়ির সামনে উচ্চস্বরে গান বাজানো হয়। এদিকে রোববার রাতেও বাড়ির সামনে মহড়া দিয়েছে সরকার দলের নেতাকর্মীরা। এসময় বাড়িতে কয়েকটি ঢিল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ করেছে বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষী।

গয়েশ্বর রায়ের বাড়িতে হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর ভাসানী ভবনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন দলটির নেতাকর্মীরা। হামলার বিষয়ে গয়েশ্বর রায় বলেন, আমি তো মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে মন্তব্য করিনি। আমি বলেছি- মুক্তিযুদ্ধে শহীদের তালিকা দেয়ার জন্য। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তাদের যদি সরকার সম্মান জানাতে পারে তাহলে যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরও সম্মান জানানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রের রয়েছে। এই সত্য কথা বলার জন্য যদি সরকার বাড়ি নিয়ে যায় তাহলে নিয়ে যাবে।

প্রশাসনকে অবহিত করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরামের এই নেতা বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষের নিরাপত্তা যেখানে নেই, সেখানে আমার বাড়িতে হামলার বিষয়ে থানায় মামলা কিংবা জিডি করে কি হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। নিজের পরিশ্রমের টাকা দিয়ে তিন কাঠা জায়গার ওপর বাড়ি করেছি। লুটের টাকা দিয়ে বাড়ি করিনি। এই সরকার যা খুশি তাই করতে পারবে।

এ বিষয়ে গয়েশ্বর রায়ের জ্যেষ্ঠ কন্যা অপর্ণা রায় বলেন, বাড়িটি দখলের উদ্দেশে প্রজন্ম লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে। তারা জোর করে বাড়ির দেয়ালে ব্যানার টানিয়েছে। বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষী শাহজাহানকে মারধর করেছে। বাড়ির গেট ভাঙচুর করেছে। বাড়ির আশপাশে অবস্থান নিয়ে সরকার দলের ক্যাডাররা মহড়া দিচ্ছে। তারা বাড়ির সামনে এসে প্রায়ই বলছে- মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পুনর্বাসনের জন্য ওই বাড়িটা আমাদের চাই।

অপর্ণা রায় বলেন, আমার বাবাও তো মুক্তিযোদ্ধা। আমিও তো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তাহলে আমরা কার কাছে এর প্রতিকার চাইবো। সূত্র : মানবজমিন
২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/আল-আমিন/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে