মঙ্গলবার, ০২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৩:১৪:৪১

দ্বৈত নাগরিক হওয়ার পরিসর বাড়ছে

দ্বৈত নাগরিক হওয়ার পরিসর বাড়ছে

ঢাকা : রাজনীতি করতে না পারাসহ পাঁচ শর্তে প্রবাসীদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আইন-২০১৬’-এর খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

পাঁচ শর্তের মধ্যে আছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি রাজনৈতিক সংগঠন করতে পারবেন না, স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকসহ প্রজাতন্ত্রের কোনো কাজে নিয়োগ পাবেন না, রাষ্ট্রপতি এবং সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য নির্বাচন করতে পারবেন না।

খসড়া আইনে বাংলাদেশিদের জন্য দ্বৈত নাগরিক হওয়ার ক্ষেত্র বিস্তৃত করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বহাল রেখে সার্কভুক্ত আটটি দেশ, মিয়ানমার ও সরকারের নিষেধাজ্ঞা আছে এমন দেশ ছাড়া বাকি সব দেশের নাগরিকত্ব নিতে পারবেন। এর আগে কেবল দুটি দেশের ক্ষেত্রে এ সুযোগ ছিল।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের সার্বিক বিষয়ে অবহিত করেন। তিনি বলেন, ‘আগে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য—এ দুটি দেশের দ্বৈত নাগরিক হওয়ার সুযোগ ছিল। এখন সেটাকেই অনেক সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নতুন আইনে সার্কভুক্ত দেশ, মিয়ানমার এবং সরকার কর্তৃক গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা নাগরিকত্ব গ্রহণের জন্য নিষিদ্ধ রাষ্ট্র ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে এমন যেকোনো রাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করা যাবে।

শফিউল আলম বলেন, ‘তবে কোনো ব্যক্তি বিচারক, জাতীয় সংসদ সদস্য বা সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত বা শৃঙ্খলা বাহিনী বা প্রজাতন্ত্রের অসামরিক কর্মে নিয়োজিত থাকাকালে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন না। দ্বৈত নাগরিকরা জাতীয় সংসদের সদস্য পদে, রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন, বিচারকসহ প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মে নিয়োগ লাভ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন বা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন করতে পারবেন না।’

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব জানান, এ আইনের আওতায় বিদেশি নাগরিককে সামাজিক, বিজ্ঞান, সাহিত্য, বিশ্বশান্তি, মানব উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতা কিংবা বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করা যাবে। তবে তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা প্রজাতন্ত্রের কোনো চাকরিতে নিয়োগ পাবেন না।

বৈবাহিক সূত্রে বিদেশি নাগরিককে নাগরিকত্ব পেতে হলে কমপক্ষে পাঁচ বছর বাংলাদেশে বসবাস করতে হবে। আগে এ সময়কাল ছিল চার বছর।

শফিউল আলম বলেন, নতুন আইনে কোনো ব্যক্তি দ্বৈত নাগরিকত্ব ছাড়া যদি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আনুগত্য প্রকাশ করেন, বিদেশি রাষ্ট্রের কোনো বাহিনীতে যোগদান করেন বা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা ওই বাহিনীকে সহায়তা করেন এবং এমন কোনো রাষ্ট্রের নাগরিক যে রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল বা আছে এবং বাংলাদেশে বেআইনি অভিবাসী হিসেবে বসবাস করেন বা করে আসছেন এ জাতীয় ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না।

শফিউল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী ব্যক্তিরা বিধি নির্ধারিত নিয়মে নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে পরিত্যাগকারীর নাবালক সন্তানদের নাগরিকত্বও বাতিল হবে। নাগরিকত্ব পরিত্যাগকারীদের কেউ আবার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সরকার আবেদনের যৌক্তিকতা বিবেচনা করে নাগরিকত্ব পুনর্বহাল করতে পারবে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করে এ আইনের অধীনে নাগরিকত্ব-সংক্রান্ত অপরাধের জন্য অপরাধী অনধিক এক লাখ টাকা জরিমানা বা অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

তবে অর্থদণ্ডের বিষয়টি সংশোধন হতে পারে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, পাঁচ বছরের সাজার তুলনায় এক লাখ টাকা জরিমানা খুবই কম হয়। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বে আরেকটা বৈঠক হবে। সেখানে ছোটখাটো বিষয়গুলো সংশোধন করা হবে। সে ক্ষেত্রে অর্থদণ্ড আরো বাড়তে পারে। মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, ‘দি সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট-১৯৫১’ এবং ‘দি বাংলাদেশ সিটিজেনশিপ টেমপোরারি প্রভিশন্স অর্ডার-১৯৭২’ এক করে নতুন এ আইন করা হচ্ছে। নতুন আইনে ছয়টি অধ্যায় ও ২৮টি ধারা থাকছে।

শফিউল আলম বলেন, ‘ওই দুই আইনে অনেক অসম্পূর্ণতা আছে, অনেক ব্যাকডেটেড ইস্যুজ আছে। বহিরাগমন, নাগরিকত্ব অর্জন, সংরক্ষণ, পরিত্যাগ, অবসান ইত্যাদি বিষয়ের সমাধান দেওয়া ওই দুটি আইনে সম্ভব হচ্ছে না। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিষয়গুলো পুনর্বিন্যস্ত করে নতুন এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।’

মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রতিবছর ১০ মার্চ জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। প্রতিবছর মার্চ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস পালিত হতো। এটি পালন করতে গিয়ে দেখা গেছে শেষের বৃহস্পতিবারটি বেশির ভাগ সময় ২৬ মার্চ হয়ে যাচ্ছে। সে জন্য দিবসটি সংশোধন করে ১০ মার্চ করা হয়েছে। -কালেরকণ্ঠ

২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/আল-আমিন/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে