বুধবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০২:২৮:০৬

অস্পষ্ট না হলে বিতর্ক কেন?

অস্পষ্ট না হলে বিতর্ক কেন?

ইকতেদার আহমেদ : যে কোনো ধরনের মামলায় শুনানি অন্তে কখন ও কীভাবে রায় ঘোষণা করতে হবে সে বিষয়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধি, সুপ্রিম কোর্ট আপিল ও হাইকোট বিভাগ রুল এবং দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদেশ ও নিয়মাবলীতে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।

উপরোক্ত আইন ও বিধিসমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এগুলোতে সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ রয়েছে যে, মামলার শুনানিঅন্তে তাৎক্ষণিক অথবা ভবিষ্যৎ কোনো দিন উভয়পক্ষের আইনজীবীদের নোটিশ প্রদানপূর্বক প্রকাশ্য আদালতে রায় ঘোষণা করতে হবে।

আমাদের দেশ বৃটিশ শাসনাধীন থাকাবস্থায় ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে ফৌজদারি কার্যবিধি এবং ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি কার্যবিধি প্রণীত হয়। সুপ্রীম কোর্ট আপিল বিভাগ রুল ও হাইকোর্ট বিভাগ রুল উভয় আদালত প্রতিষ্ঠা পরবর্তী কার্যকর আছে। দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদেশ ও নিয়মাবলী বৃটিশ শাসনামল থেকে আদালত প্রতিষ্ঠা পরবর্তী কার্যকর আছে।

উপরোক্ত আইন, বিধি, আদেশ ও নিয়মাবলীতে মামলার রায় ঘোষণা সংক্রান্ত বিধান স্পষ্ট হওয়ার কারণে এ বিষয়ে নতুন কোনো আইন অথবা বিধি অথবা নিয়ম ও আদেশাবলী প্রণয়নের আবশ্যকতা আছে মর্মে প্রতীয়মান হয় না।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান বিচারপতি পদে বহাল থাকাকালীন অবস্থায় উচ্চাদালতের কোনো বিচারককে অবসর পরবর্তী রায় লিখতে ও তাতে স্বাক্ষর দিতে দেবেন না এমন বক্তব্য প্রদানের পর এ বিষয়ে আইনাঙ্গনসহ দেশের সর্বত্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে। একটি বিষয়ে বিতর্ক তখনই হতে পারে যখন আইন অথবা বিধি অথবা আদেশ ও নিয়মাবলীতে বিষয়টি অস্পষ্ট। আইন অথবা বিধি স্পষ্ট হলে স্থান-কাল পাত্র ভেদে আইনের ব্যাখ্যা সমরূপ হয়ে থাকে এবং আইন সকলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হয়ে থাকে। আইন, বিধি এবং আদেশ ও নিয়মাবলী এ সবগুলোই আইনের অন্তর্ভুক্ত।

বাংলাদেশের সংবিধানের অনন্য বৈশিষ্ট্য মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত তৃতীয় ভাগের ২৭নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত- আইনের দৃষ্টিতে সমতা। এর অর্থ সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। এ বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে বর্ণনা করলে বলতে হয়- আইন অন্ধ, আইনের কোনো চোখ নেই। একজন ব্যক্তি অপরাধ বা অন্যায় করলে তার সামাজিক, রাজনৈতিক অথবা পদের অবস্থান দেখার কোনো সুযোগ নেই।

আমাদের দেশে আদালত বলতে উচ্চ ও অধস্তন উভয় ধরনের আদালতকে বোঝায়। উচ্চাদালতের বিচারকরা সাংবিধানিক পদধারী অপরদিকে অধস্তন আদালতের বিচারকরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। উচ্চাদালতের বিচারকরা শপথের অধীন এবং শপথ গ্রহণ ব্যতিরেকে তাঁরা পদে আসীন হন না। অর্থাৎ বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারেন না। অনুরূপ অবসরের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চাদালতের একজন বিচারক তাঁর শপথ হতে অবমুক্ত হয়ে যান।  উচ্চাদালতের একজন বিচারক যে ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকবেন সে বিষয়ে সংবিধানে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।

যে কোনো আদালতের বিচারক একমাত্র পদে বহাল থাকাকালীন অবস্থায়ই প্রকাশ্য আদালতে আসন গ্রহণ করতে পারেন। সুতরাং প্রকাশ্য আদালত ব্যতীত অন্য কোনোভাবে রায় ঘোষণার সুযোগ না থাকায় কোনো আদালতের বিচারক যদি এর ব্যত্যয়ে রায় ঘোষণা করেন সেটিকে অন্যায় ও অনিয়ম হিসেবে দেখতে হবে এবং সেটি সর্বাবস্থায়ই অন্যায় ও অনিয়ম। মানবজমিন
 
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক)

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে