নিউজ ডেস্ক : ৬ তলা থেকে ফেলে দেয়া শিশু ‘বেবি অফ আদ-দ্বীন’ কেমন আছে হয়তো জানার আগ্রহ অনেকেরই আছে। নিজের অপবাদ গোছাতে জানালার গ্রিলের ছোট্ট ফোকর দিয়ে ফেলা দেয়া নবজাতকটি উদ্ধারের পর রাজধানীর মগবাজার আদ্ দ্বীন হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।
নিজের সন্তানকে ফেলে দেয় কুমারী মাকে সনাক্ত করার পর ঢাকা মেডিকল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে শিশুটির রক্তচাপ বেশ কমে যাওয়ায় চিন্তায় পড়ে যান চিকিৎসকরা। অবশ্য রক্তচাপ বাড়ানোর ওষুধ দেয়ার পর তা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তার অবস্থা এখন স্বাভাবিক বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন চিকিৎসক অধ্যাপক এসএম জাবরুল হক।
তিনি জানান, শিশুটির ডান পায়ের হাড় ভেঙে গেলেও খুব তাড়াতাড়ি জোড়া লেগে যাবে। নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার মাথার হাড়েও ফ্র্যাকচার পাওয়া গেছে। মাথার বাইরের অংশে রক্তক্ষরণও হচ্ছে। আমরা পরীক্ষা করে দেখছি। আশা করি, ঠিক হয়ে যাবে। যদিও ব্রেন টিস্যুতে ক্ষতি হলে ভবিষ্যতে তার সমস্যা হতে পারে।
জাবরুল হক বলেন, এতোকিছুর পরও শিশুটির কর্মকাণ্ড এখন অন্য নবজাতকের মতোই স্বাভাবিক। বোঝার কোনো উপায় নেই যে, এতো বড় একটি দুর্ঘটনায় পড়ে তারপরও স্বাভাবিক। সে আর তেমন কান্নাকাটিও করছে না। যদি এরকম থাকে তবে আগামী সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, শিশুটির পায়ের হাড় পুরোপুরি জোড়া লাগতে দু-তিন মাস সময় লাগতে পারে। এক বছর পর বোঝাই যাবে না যে, তার পায়ে কিছু হয়েছিল।
তিনদিন বয়সী নবজাতকটিকে এখন ‘বেবি অফ আদ-দ্বীন’ নামে ডাকা হচ্ছে। হাসপাতালের সবার কাছে খুবই প্রিয় হয়ে উঠছে শিশুটি। একটু সুযোগ পেলেই খোঁজ নিচ্ছে সবাই। ডিউটি শেষে বাসায় ফেরার আগে একবার শিশুটিকে দেখে যান তারা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার জন্ম নেয়ার পরই ৬ তলা ভবন থেকে নিচে ফেলে দেয় বিউটি আক্তার (১৬) নামে এক কুমারী মা। পরে দুপুরে স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিউটি আক্তার জানিয়েছিল, তার বাবার নাম আবু বকর প্রামাণিক। তাদের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার নওকর গ্রামে। ঢাকায় বেইলী রোডের ২৬ নম্বর প্রোপার্টিজ মেনশনের ৬ তলায় আজমল হক ও ফিরোজা হকের বাসায় ৯ বছর ধরে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
৯ থেকে ১০ মাস আগে কুমিল্লায় বড় বোন লিপি আক্তারের বাসায় বেড়াতে যান বিউটি। সেখানে তার বোনের স্বামী নীরব ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাকে অনৈতিক কাজ করে। পরে তিনি সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন। কিন্তু এ কথা কাউকে জানতে দেননি তিনি।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বেইলী রোডের বাসায় ছেলে সন্তান প্রসব করেন তিনি। প্রসবের পর জানাজানির ভয়ে ৬ তলা থেকে নবজাতকটিকে নিচে ফেলে দেন তিনি। তবে অলৌকিকভাবে দ্বিতীয় তলার কার্নিশে আটকে যায় ছেলে সন্তানটি। শিশুটিকে সবাই ‘বেবি অফ আদ-দ্বীন’ নামে ডাকছেন।
৩ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম