মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩, ০৯:১৩:০০

এই মুহুর্তে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুনের কী প্রভাব চট্টগ্রামে? জানুন

এই মুহুর্তে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুনের কী প্রভাব চট্টগ্রামে? জানুন

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে চট্টগ্রামে সারাদিন গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। অবশ্য কোথাও কোথাও মাঝারি বৃষ্টিপাতও দেখা গেছে। তবে কী পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তা জানা যায়নি।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় বড় ঢেউ ছিল এবং বাতাসের গতিবেগ একটু বেশি ছিল।

এদিন সন্ধ্যার পর থেকে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায়। একইসঙ্গে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্রের সঙ্গে লাগোয়া আকমল আলী ঘাটের দোকানি বেলাল উদ্দিন রাত ৮টার দিকে বলেন, এই মুহূর্তে বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রচুর বাতাস এবং বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা এলাকায় বেড়িবাঁধে অবস্থান নিয়েছি। ফিশিং ট্রলারসহ বেশিরভাগ বোট উপকূলে নোঙর করেছে।

এদিকে টানা বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় নগরের বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন। 

জেলা প্রশাসনের ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ পর্যন্ত ১০০ পরিবারকে নিরাপদে স্থানান্তর করেছে বলে জানা যায়। একইসঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের সরাতে মাইকিং করা হয়। 

সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় হামুনের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। 

জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত করা হয়েছে ২৯০টি মেডিকেল টিম। এর মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০০টি, উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যায়ে ৭৫টি, জেনারেল হাসপাতালে ৫টি, আরবান ডিসপেনসারিতে ৯টি ও স্কুল হেলথ ক্লিনিকের একটি টিম রয়েছে। 

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পাহাড়ে যেন মানুষের আর প্রাণ না দিতে হয় সেজন্য কাজ করছি। মাইকিং থেকে শুরু করে সবাইকে সচেতন করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের টিম কাজ করছে। 

আজকেও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো থেকে ১০০ পরিবারকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। তাদের জন্যে শুকনো থেকে শুরু করে প্রতিবেলার খাবারের ব্যবস্থা করেছি।

ঘূর্ণিঝড় হামুনের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেটি থেকে বড় জাহাজ বহির্নোঙরে এবং লাইটার জাহাজ পাঠানো হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর উপরিভাগ শাহ আমানত সেতু এলাকায়। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব নিয়মে এলার্ট-৩ জারি করেছে।

ঘূর্ণিঝড় হামুনের কারণে ফ্লাইট ওঠা-নামার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ।

রাত সোয়া ৮টার দিকে তিনি বলেন, সারাদিন সব কয়টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছে। কোনো সমস্যা হয়নি। একটু আগে বাতাস বেশি ছিল। এখন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। আজকে আর দুটি ফ্লাইট বাকি রয়েছে। আশা করছি এগুলোও যথাসময়ে অপারেট করতে পারব। 

চট্টগ্রাম নগরের দুর্যোগপূর্ণ এলাকার ১১৪টি স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করবে সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) নগরের দামপাড়া বিদ্যুৎ উপ-বিভাগের কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় এ ঘোষণা দেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

এতে তিনি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুনের বিপদ এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকা মানুষজনকে দ্রুত নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে বিষয়টি তদারকি করতে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নির্দেশ দেন তিনি।

এর আগে দুপুর থেকে রেড ক্রিসেন্টের সহযোগিতায় চসিকের কর্মীরা উপকূলীয় ওয়ার্ডগুলোতে মাইকিং শুরু করে। এছাড়া দুর্গত ব্যক্তিদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে ত্রাণের। একইসঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিমের নেতৃত্বে কাজ করছে রেসকিউ টিম। দুর্যোগ না কাটা পর্যন্ত চসিকের কন্ট্রোলরুম (০২৩৩৩৩৫৩৬৪৯) ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’। কুতুবদিয়ার ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে।

অপরদিকে রাতে আবহাওয়ার ১৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’র মূল অংশ বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে পরবর্তী ৮-১০ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ পর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। 

এটি আজ সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২২৫ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৫ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। 

ঘূর্ণিঝড়টির মূল অংশ উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে পরবর্তী ৮-১০ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি. যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে