মঙ্গলবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৩, ০৯:০৮:৩৪

এবার ডিম-আলুর দামে পতন আমদানির এক চালানেই!

এবার ডিম-আলুর দামে পতন আমদানির এক চালানেই!

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ভারত থেকে একটি ট্রাকে করে ৬২ হাজার ডিম দেশে আসার পরেই ঢাকার বাজারে পাইকারিতে প্রতিটির দাম ৮০ পয়সা করে কমে গেছে। আমদানির পর কমেছে আলুর দামও। খুচরায় কেজিতে ১০ টাকার বেশি দাম কমার তথ্য দিয়েছেন বিক্রেতারা।

রোববার সন্ধ্যায় যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে ট্রাক ঢোকার পর রাতে কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানগুলোতে ১০ টাকা ২০ পয়সা হারে ডিম বিক্রি হয়েছে। আগের দিন দাম ছিল ১১ টাকা করে।

এলাকার মুদি দোকানে খুচরা পর্যায়ে কোথাও ৫০ টাকা হালি, কোথাও ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সুপার শপগুলোতেও দাম কমে আসছে।

তবে যাদের হাতে বেশি পরিমাণে ডিম আছে, তারা এখন লোকসানের আশঙ্কায়। মহাখালীতে ডিমের আড়ৎদার রাজু আহমেদ বলেন, “আমার কাছে যে ডিম আছে এগুলো প্রতিটি ১১ টাকা ৮০ পয়সা করে কেনা। বিক্রি করছি ১২ টাকা ২০ পয়সায়। কিন্তু বাজার আরও অনেক পড়ে গেছে।

“আমার কাছে এখন কয়েক হাজার ডিম আছে। আজ সারাদিনে যত দ্রুত সম্ভব আমি ডিম বিক্রি করার চেষ্টা করেছি। কারণ, কালকে আর কেনা দামেও ডিম বিক্রি করা যাবে না।”

বাজার নিয়ন্ত্রণহারা হয়ে যাওয়ার পর সরকার গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫টি কোম্পানিকে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদনপত্র দেওয়া শুরু করে। তবে নানা জটিলতায় প্রথম চালান আসতে সময় লাগে ৪৯ দিন।

গত ২১ সেপ্টেম্বর এক কোটি ডিম আনার অনুমোদন পাওয়া বিডিএস করপোরেশন নিয়ে আসে এক ট্রাক ডিম। বন্দর পর্যন্ত তাদের প্রতিটি ডিমের আমদানি খরচ পড়েছে ৫ টাকা ২৯ পয়সা। প্রতিটি ডিমের জন্য শুল্ক গুনতে হয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। ফলে বন্দর পার হওয়ার পর ডিমের দাম দাঁড়াচ্ছে প্রতিটি ৭ টাকা ০৯ পয়সা।

এই চালানে বেশ মুনাফা হয়েছে বিডিএস করপোরেশনের। প্রতিষ্ঠানটির মালিক দিপংকর সরকার বলেন, “আমার ৬২টি হাজার ডিম অল্প সময়ের মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। প্রতিটি ১০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে হালি পড়েছে ৪০ টাকা।”

আগামী ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে আরও ১০ লাখ ডিম বাজারে আসছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ট্রাকে করে খোলাবাজারে ডিম বিক্রি করা বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, “সোমবার পাইকারি বাজারে ডিমের দাম প্রতিটি ১০ টাকায় এসে গেছে।

“আজকে আমরা ৮০ হাজার ডিম বিক্রি করেছি। লাল ডিম প্রতি ডজন ১৩৮ টাকায় আর সাদা ডিম ১৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।”

মতিঝিল, হাতিরপুল, বাংলামোটর, নিউ মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউন হল, নতুন বাজার, ভাটারা, কারওয়ান বাজার টিসিবি ভবন ও কারওয়ান বাজার বটতলায় বিক্রি করেছে পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন।

তবে সন্ধ্যায় মহাখালীর বিভিন্ন মুদি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি হালি ডিম এখনও ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিটি ডিমের দাম পড়ছে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। বিক্রেতার দাবি, নতুন দামের ডিম তিনি এখনও কেনেননি।

ডিমের দাম লাগামহীন হয়ে যাওয়ার পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার প্রতিটির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১২ টাকা বেঁধে দেয়। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে দাম ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা যায়।

এরপর সরকার আমদানির অনুমোদন দিতে শুরু করলে দাম কমে আসতে থাকে। তবে নানা জটিলতায় আমদানিতে বিলম্ব হতে থাকলে দাম আবার চড়তে থাকে।

আলুর দাম কমল আরও বেশি
আলুর বাজারদর নিয়ন্ত্রণেও সরকার আমদানিতেই ভর করেছে। গত ৩০ অক্টোবর কৃষি মন্ত্রণালয় অনুমোদনপত্র দিতে শুরু করে। মোট এক লাখ ৬২ হাজার টন আলু আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সোমবার পর্যন্ত দেশে এসেছে ২ হাজার ৭০০ টন। আমদানির আগে কোথাও ৬০ টাকা, কোথাও ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে থাকা রান্নার উপকরণটি এখন খুচরা পর্যায়ে নেমে এসেছে ৫০ এর ঘরে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম কমেছে ১০ টাকা।

মহাখালী আমতলীর মুদি দোকানি সালাহ উদ্দিন বলেন, “পাইকারি বাজারে আলুর দাম কমে গিয়ে প্রতি কেজি ৪৫ টাকায় নেমেছে। ফলে ‍দুই দিন আমরা ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পারছি।”

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ডিমের পাশাপাশি আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যও ৩৬ টাকা বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু কোল্ড স্টোরেজে পাইকারিতেই এই দরে আলু বিক্রি করতে বাধ্য করতে পারেনি সরকার।

আলু আমদানির অনুমতি দেওয়ার দিন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা যে দাম স্থির করে দিয়েছিলাম, তাতেও তাদের লাভ হওয়ার কথা। কিন্তু সেই দামের ধারে কাছেও তারা থাকছে না। কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা একটি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে।”

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের হিসাবে আলুর বাজারদর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯০ শতাংশ বেশি। সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে