মঙ্গলবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৩, ১১:৫৭:৩১

এবার জেলেদের জালে মিলছে পাঙ্গাস

এবার জেলেদের জালে মিলছে পাঙ্গাস

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দেশের উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে নিষেধাজ্ঞা শেষে বিষখালী নদীতে ইলিশের দেখা মেলেনি। তবে জালে ধরা পড়েছে ছোট-বড় আকারে বেশ কিছু পাঙ্গাস। ইলিশের মৌসুম ও অবরোধ শেষে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়ায় হতাশায় বাড়ি ফিরছে জেলেরা।

বিষখালী নদীরকূল ঘেষে গড়ে ওঠা একটি পৌরসভাসহ সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত দক্ষিণা এ জনপদের তিন হাজারেরও বেশি জেলে ইলিশ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। 

এসব জেলেদের আশা ছিল মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পরবে। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার প্রথমদিনে নদ-নদীতে তেমন ইলিশ ধরা পড়েনি।

সরেজমিনে শনিবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দেখা যায় বেতাগী পৌর শহরের মাছ বাজার ও উপজেলার কালিবাড়ী ঘাট দু’টি একদম নিরব। কোনো হাঁকডাক ও কোলাহল নেই সেখানে। 

কিছু মাছ বিক্রেতা আট থেকে ১০টি ইলিশ ও ১০০ থেকে ১৬০টি জাটকা নিয়ে বিক্রির আশায় মাছ নিয়ে বসে আছেন। আড়তদারও বেকার। তবে মাছ বিক্রেতাদের কাছে বড় সাইজের ১৫ থেকে ২০টি নদীর পাঙ্গাশ মাছের দেখা মিলেছে।

উপজেলার ঝোপখালী গ্রামের জেলে মো: জলিল হাওলাদার বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ শিকারের জন্য বড় আশা নিয়ে নদীতে নেমেছিলাম। ইলিশ না মিললেও আমার জালে ১০ কেজি ওজনের একটি পাঙ্গাস মাছ মিলেছে। ইলিশ না পেলেও পাঙ্গাস পেয়ে খুশি হয়েছি।’

এভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরো অনেক জেলেরই জালে নদীর পাঙ্গাশ ধরা পড়েছে। বেতাগী পৌর শহরের মাছ বাজারের মাছ বিক্রেতা সুনীল হাওলাদার বলেন, ‘ইলিশ না মিললেও এখানেও বাজারে অনেকগুলো পাঙ্গাস মাছ উঠেছে। তিনি ১০ কেজি ৫০০ গ্রাম ওজনের একটি নদীর পাঙ্গাস কিনেছেন ইলিশ ধরা জেলের কাছ থেকে। ৮০০ টাকা দরে প্রতি কেজি পাঙ্গাস বিক্রি করেন।

বিষখালী নদী থেকে নৌকা ও ট্রলার ঘাটে ফিরছে জেলেরা মলিন মুখ নিয়ে। মাছ বাজারে অলস সময় কাটাচ্ছেন আড়তদার ও মাছ ব্যবসায়ীরা। 

দীর্ঘ ২২ দিন অবরোধ থাকার পর নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে যেখানে জেলেদের মাঝে উৎসব ও আনন্দ থাকার কথা ছিল।কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা না মেলায় সেখানে শুধূ জেলেই নয়, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী ও আড়তদার সকলের মধ্যেই হতাশা বিরাজ করছে।

আড়তদাররা বলেন, অবরোধের পর এই বাজার এখন প্রায় ইলিশ শূণ্য। অথচ এই সময়ে ব্যাপক পরিমানে ইলিশ আসার কথা। চাহিদার তুলনায় ইলিশের আমদানি কম হওয়ায় দামও আকাশচুম্বী।

পৌর শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বেতাগী সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন বড়াল মাছ বাজারে তার সাথে দেখা। এ সময় কথা হয় তার সাথে। তিনি এসেছেন ইলিশ মাছ কিনার জন্য।

তিনি বলেন, ধারণা করেছিলাম এ সময়টায় বাজারে প্রচুর ইলিশ পাবো এবং কম দামে কিনতে পারবো। ইলিশ না দেখে হতাশ। ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় দামও বেশি। তিনি অন্য দেশীয় মাছ কিনে বাসায় ফিরছেন।

বেতাগী বন্দর মাছ বাজারের আড়তদার কমল দাস বলেন, ‘এই সময়ে এখানকার মাছ বাজারের ঘাটে অনেক নৌকা ও ট্রলার ভিড়ত ইলিশ নিয়ে। এবার অবরোধের পর পুরো মাছের বাজার নিরবতা। 

দীর্ঘ এক যুগ ধরে আমি আড়তদারির সাথে জড়িত। কিন্ত জীবনে ইলিশের এতটা আকাল দেখি নাই। মনে হয় যেন, নদী থেকে মাছ উধাও হয়ে গেছে। আশার কথা জেলেদের জালে অনেক নদীর পাঙ্গাস মিলেছে।’

ইলিশের এমন আকালের কারণ বিষয়ে জানতে চাইলে বেতাগী উপজেলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রব সিকদার বলেন, এর পেছনে নির্বিচার জাটকা নিধন অন্যতম কারণ। 

তবে বাচ্চা ইলিশগুলো যখন নদীর মিঠা পানিতে দল বেঁধে বিচরণ করে, তখন এসব পোনা ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে নির্বিচারে ধরে ফেলে এ জনপদের জেলেরা। 

আমরা বাজারগুলোতে এসব চাপলি মাছ বলে বিক্রি করতে দেখি। প্রকৃতপক্ষে এগুলোই যে ইলিশের পোনা। এ সম্পর্কে আমাদের ধারণা ও সচেতনতা কম। অথচ নদীতে এখন ইলিশ না মেলায় এ নিয়ে নানা কথা বলছি।

ইলিশের জেলে লিটন হাওলাদার বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই আমরা স্বপ্ন দেখছিলাম এ বছর নদীতে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে। তা না পাওয়ায় আমরা হতাশায় ভূগছি। কিভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসারের ব্যায় মেটাবো। এখন টাকার দেনার মধ্যে পড়তে হয়েছে।’

স্থানীয় মৎস্য বিভাগ বলেন, এই সময়ে নদীতে সাময়িক মাছ না মিললেও নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। কেননা মা ইলিশ নিরাপদে মিঠাপানিতে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতেই এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

বেতাগী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমাপ্তি সাহা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে আমাদের মৌসুমের এখন হেরফের হচ্ছে। ইলিশের প্রজনন, উৎপাদনেও তাই হেরফের হচ্ছে। বৃষ্টি, নদীতে স্রোত, পানির চাপ এর সাথে ইলিশের প্রজনন-উৎপাদন সম্পর্কিত। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ইলিশ ধরা পড়বে।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে