বুধবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৩, ০৮:৪২:১০

মোট ১১ জনের মৃত্যু

মোট ১১ জনের মৃত্যু

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দাদির শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি যাচ্ছিলেন রীতা দাশ। সঙ্গে ছিল চার সন্তানসহ পরিবারের আরো ছয়জন। 

তবে বেপরোয়া বাস তাদের সেখানে পৌঁছতে দেয়নি। না-ফেরার দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। একই দিন ময়মনসিংহে বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় চারজন নিহত হন।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে একটি দুর্ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর চাড়িয়া ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন এলাকায়। অন্যটি ঘটে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শিকারীকান্দা বাইপাস এলাকায়।

চট্টগ্রামে নিহত অটোরিকশার যাত্রী রীতা দাশের (৩৫) বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর বাদামতল এলাকায়। তাঁর স্বামী নারায়ণ দাশ মধ্যপ্রাচ্যপ্রবাসী। 

বেপরোয়া বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘের্ষে রীতার সঙ্গে অটোরিকশায় ছিল তাঁর যমজ শিশু দ্বীপ দাশ (৪), দিগন্ত দাশ (৪), পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে বর্ষা দাশ (১০) ও এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে শ্রাবন্তী দাশ (১৭), নারায়ণের বড় ভাই সম্ভু দাশের ছেলে বিপ্লব দাশ (২২) ও নারায়ণের বড় বোন চিনু বালা দাশ (৫০)। এ ছাড়া চিনু দাশের ছেলে বাপ্পা (৩২) চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনার পরপরই পুলিশের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে খবর পান রিতা দাশের মা সবিতা রানী দাশ (৫০)। ঘটনাস্থলেই গিয়েই তিনি মূর্ছা যান। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে খাগড়াছড়ি থেকে আসা চট্টগ্রামমুখী পদক্ষেপ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস বেপরোয়া গতিতে আসছিল। 

চারিয়া ইজতেমা মাঠ এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা ফটিকছড়িগামী রীতাদের বহনকারী অটোরিকশা ও বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই রীতা দাশ এবং তাঁর যমজ শিশুপুত্র ও দুই মেয়েসহ পরিবারের সাতজন নিহত হয়। 

নিহত বিপ্লব দাশের ছোট ভাই পল্লব দাশ বলেন, ‘চন্দনাইশ উপজেলার জোয়ারা ইউনিয়নের বাদামতল থেকে আমার চাচি (রীতা) পরিবার নিয়ে ফটিকছড়ি উপজেলার মাইজভাণ্ডার দরবার শাহনগর গ্রামের বণিকপাড়ায় তাঁর বাবার বাড়িতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।

বেপরোয়া বাস তাঁদের না-ফেরার দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।’  ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মিষ্টি, মিষ্টির প্যাকেট, বাচ্চাদের পরনের কাপড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। রাস্তায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে পড়ে আছে। 

সাধন দাশ (৮২) নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আমি হঠাত্ একটি বিকট শব্দ শুনি। সামনে তাকিয়ে দেখি দোমড়ানো একটি সিএনজি, শিশু, নারীসহ কয়েকটি লাশ রাস্তার ওপর পড়ে আছে। আমি ও এলাকার নার্সারির মালিক মোবারক গিয়ে মৃতদেহগুলো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিই।’ 

জানতে চাইলে নাজিরহাট হাইওয়ে থানার ওসি মো. আদিল মাহমুদ বলেন, ‘লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। বাসের চালক ও হেলপার পলাতক।’

হাটহাজারী মডেল থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা হয়েছে। বিকেলে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। 

প্রায় ১২ বছর আগে উপজেলার মুন্সির মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ১৫ জন নিহত হয়েছিল। নিহতরা টেম্পোতে করে সীতাকুণ্ড থেকে ফটিকছড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিল। 

ময়মনসিংহে বেপরোয়া বাসের ধাক্কা, নিহত ৪ 
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শিকারীকান্দা বাইপাস এলাকায় বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে ৪০ জন। 

গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঢাকা থেকে শেরপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া একটি যাত্রীবাহী বাস পিকআপকে ধাক্কা দেয়। 

এরপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বিলবোর্ডে সজোরে ধাক্কা দেয়। বিলবোর্ডটি বাসটির সামনের অংশের ওপর পড়ে। এতে বাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। 

নিহত চারজনের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন বাসের হেলপার ত্রিশালের ধানীখোলা চর কুমারিয়া গ্রামের রকিব মিয়া (৩২) এবং বাসের চালক চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার আবুল হোসেন সাদ্দাম (৫৫)।

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুর্ঘটনাকবলিত বাসের একাধিক যাত্রী জানায়, ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে আসা ফাইয়াজ অ্যান্ড তাজ পরিবহনের বাসটি গাজীপুর পার হওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া গতিতে চলছিল। যাত্রীরা সতর্ক করলেও চালক শোনেননি। শেষমেশ যাত্রীদের আশঙ্কাই সত্যি হলো।

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আহত অবস্থায় ৪০ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। বেশির ভাগই প্রাথমিক চিকিত্সা নিয়ে ফিরে গেছে। গুরুতর আহত হওয়ায় কয়েকজনকে ভর্তি রাখা হয়। 

অন্য দুই জেলায় নিহত ২
মাদারীপুরের রাজৈরে বাসের চাপায় খোকন কুণ্ডু (৪২) নামের এক ইজি বাইক যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হন তিনজন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কামালদি নামক জায়গায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

যশোরের শার্শায় কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী রিমন হাসান রাকিব (৩২) নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন একজন। সোমবার রাত ১১টার নাভারন নিউ মার্কেটের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

ইস্কাটনে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ২
রাজধানীর ইস্কাটন ইস্টার্ন টাওয়ারের সামনে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হাতিরঝিল থানার ওসি শাহ মো. আওলাদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। 

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে