এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : দেশের টেলিকম খাতে প্রথমবারের মতো অপারেটরদের ভেতর পারস্পরিক নেটওয়ার্ক অবকাঠামো ভাগাভাগির মাধ্যমে ন্যাশনাল রোমিং সার্ভিস বা একটিভ শেয়ারিং চালু করতে যাচ্ছে বাংলালিংক ও টেলিটক।
এ অপারেটর দুটি যৌথভাবে একটিভ শেয়ারিং বা ন্যাশনাল রোমিং সার্ভিস বাস্তবায়নে একটি পাইলট প্রকল্প উদ্বোধন করেছে। এই একটিভ শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে টেলিটকের গ্রাহকরা নেটওয়ার্ক কাভারেজ বিহীন এলাকায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। দেশের টেলিকম খাতের ইতিহাসে এটিই প্রথম ঘটনা যেখানে দুইটি ভিন্ন টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নেটওয়ার্ক অবকাঠামো ভাগ করে ব্যবহার করতে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) আইসিটি টাওয়ারের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যুগান্তকারী এই সেবা চালুর ঘোষণা দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি’র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই উদ্যোগের ফলে টেলিকম খাতে সামগ্রিক সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি টেলিকম অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবে এবং এতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। এটি ভবিষ্যতে গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে নেওয়া অনন্য পদক্ষেপ হিসেবে সকল অপারেটরদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।
পরীক্ষামূলক ফিল্ড ট্রায়ালের সফলভাবে শেষ করার পর প্রতিষ্ঠান দুটি পাইলট প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছে।
দুই মাস মেয়াদি এই একটিভ শেয়ারিং বা জাতীয় রোমিং-এর পাইলট প্রকল্পে নির্বাচিত দুই হাজার টেলিটক পোস্ট-পেইড ও প্রি-পেইড গ্রাহকরা বাংলালিংকয়ের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভয়েস কল, এসএমএস ফোর-জি ইন্টারনেট সেবা ভোগ করতে পারবেন। এই পাইলট প্রকল্পের সাফলতার ওপর ভিত্তি করে বাংলালিংক ও টেলিটক দেশব্যাপী বাণিজ্যিক ভিত্তিতে একটিভ শেয়ারিং চালু করবে।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইসিটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় আমরা বাংলাদেশের টেলিকম খাতে যুগান্তকারী একটিভ শেয়ারিং বা ন্যাশনাল রোমিং চালু করতে যাচ্ছি।
এর ফলে টেলিটকের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনক হতে পারবে। বাংলালিংক ও টেলিটকের এই যুগান্তকারী উদ্যোগকে অনুসরণ করে ভবিষ্যতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পারস্পারিক আরো বেশি সহযোগিতার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের পথকে ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করছি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের উদ্ভাবনী, সৃষ্টিশীল ও সমস্যা সমাধানে দক্ষ হতে হবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিটিআরসি সব সময় আন্তঃশিল্প অবকাঠামো ভাগাভাগিকে অগ্রাধিকার দেয় ও এই সংক্রান্ত অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে কম্পানিগুলোকে উৎসাহ প্রদান করে। দেশের অন্যতম উদ্ভাবনী ডিজিটাল অপারেটর বাংলালিংক ও টেলিটকের মধ্যকার সক্রিয় শেয়ারিং (রোমিং) সেবার উদ্বোধন এই ধরনের অংশীদারিত্বের পথকে আরো সুগম করবে।
আমরা বাংলালিংক ও টেলিটকের জন্য এই প্রক্রিয়াটি যেন সহজ হয় সেই লক্ষে সব ধরনের সহযোগিতা করব। একইসঙ্গে সফল বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত এই ফিল্ড ট্রায়াল থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
বাংলালিংকের সিইও এরিক অস বলেন, টেলিটকের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের প্রথমবারের মতো একটিভ শেয়ারিং বাস্তবায়ন করা বাংলালিংকের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এই চুক্তির ফলে টেলিটকের গ্রাহকরা দেশব্যাপী বাংলালিংকের ১৬ হাজারেরও বেশি টাওয়ার সমৃদ্ধ সবচেয়ে দ্রুতগতির মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন। সম্প্রতি সারা দেশে আমরা আমাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক কভারেজ দ্বিগুণ করেছি যার সুফলও গ্রাহকরা উপভোগ করতে পারবেন।
টেলিটকের এমডি এ কে এম হাবিবুর রহমান বলেন, একটিভ শেয়ারিং (রোমিং)-এর পাইলট প্রকল্প চালু হওয়া বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের জন্য একটি অন্যতম অর্জন। গ্রাহকদের মানসম্মত সেবা দানে টেলিটক সবসময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলালিংকের সঙ্গে এই চুক্তি গ্রাহকদের সেবার মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে যা গ্রাহকদের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন।