এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : পেঁয়াজের পর বাজারে আলুর দামও বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম হঠাৎ বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। খুচরায় প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ টাকার আশপাশে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, হিমাগার ফটকে আলুর দাম বাড়ছে, যার প্রভাব পড়েছে ভোক্তা পর্যায়ে। আর হিমাগার মালিকরা বলছেন, অনেক মজুতদার মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে কম দামে আলু কিনে হিমাগারে রেখেছেন। তারাই এখন হিমাগার গেটে বেশি দামে আলু বিক্রি করছেন।
কয়েক দিন ধরে পেঁয়াজের বাজার চড়া। খুচরায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের পর চড়ছে আলুর বাজার। মাসখানেক আগে ঢাকার খুচরা বাজারে আলুর কেজি ছিল ৫০ টাকার আশপাশে। কিন্তু গতকাল রোববার রাজধানীর শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা ও মালিবাগ বাজারে প্রতি কেজি আলু ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। ছোট বাজার ও মহল্লায় ৭০ টাকার কমে এক কেজি আলু মিলছে না। তবে কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ীর মতো বড় পাইকারি বাজারে গতকাল (প্রতি পাল্লা ৫ কেজি) আলু ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হয়।
গত বছরের অক্টোবরে প্রতি কেজি আলুর দাম ৭০ টাকা ছোঁয়। তখন ভারত থেকে আলু আমদানি করা হয়। এবারও কিছু আলু আমদানি হয়েছে। তবে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীদের আলু আমদানিতে আগ্রহ কম।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, আলুর দর এক মাসে প্রায় ৯ ও এক বছরে ৬০ শতাংশ বেড়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের এ সময় খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম ছিল প্রতি কেজি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী (তকদির ভান্ডার) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘হিমাগারেই আলুর দর চড়া। দু-এক দিন পর পরই দর বাড়ছে এক-দুই টাকা করে। সে কারণে খুচরায়ও দাম বেশি।’ তিনি বলেন, ‘মৌসুমে বেশি লাভের আশায় কৃষকরা তাড়াতাড়ি আলু তুলেছেন। এ জন্য ফলন কিছুটা কম। আর ডলারের দাম বাড়ার কারণে ভারত থেকে আলু আসছে না, দেশি আলু দিয়েই বাজার চলছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ টনের বেশি। তবে এই হিসাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন হিমাগার মালিকরা। তাদের হিসাবে আলু উৎপাদন হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন। দেশে বছরে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টনের কিছু বেশি। সেই হিসাবে এবার পণ্যটির ঘাটতি ১০ থেকে ১৫ লাখ টন।
হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, সরকার আলু উৎপাদনের যে তথ্য দিয়েছে, প্রকৃতপক্ষে উৎপাদন হয়েছে এর চেয়ে কম। বর্তমানে হিমাগারে মজুতদার ও কৃষকের ২৩ লাখ টনের কিছু বেশি আলু রয়েছে। এই আলু দিয়ে কমবেশি পাঁচ মাস চলা যাবে; যারা হিমাগারে আলু রেখেছেন তারা ‘ধীরে চলো’ নীতিতে খালাস করলে আলুর দর বেড়ে যাবে।
এফবিসিসিআইর সাবেক এ সিনিয়র সহসভাপতি বলেন, ‘অনেক মজুতদার ২৪-২৫ টাকা কেজি দরে আলু কিনে হিমাগারে রেখেছেন; কিন্তু এখন তারা হিমাগার গেটে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করছেন ৪৬ থেকে ৪৯ টাকা দরে। অথচ ৩৫ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করলেও তাদের মুনাফা থাকার কথা।’