শনিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৪, ১১:৩৯:৩১

শেখ হাসিনা ইস্যুতে এবার যে ইঙ্গিত দিলেন ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা

শেখ হাসিনা ইস্যুতে এবার যে ইঙ্গিত দিলেন ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর থেকে ভারতেই রয়েছেন শেখ হাসিনা। এরইমধ্যে বাতিল হয়েছে তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট, দায়ের করেছে একশয়ের কাছাকাছি মামলা। 

এদিকে কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় ভারতে এখন শেখ হাসিনার অবস্থানের বৈধ ভিত্তিটা কী, সে প্রশ্নও উঠছে। 

সার্বিক পরিস্থিতিতে ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি ইঙ্গিত পেয়েছে, এই মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সামনে কার্যত তিনটি রাস্তা খোলা আছে। 

প্রথমটা হলো— বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, যেখানে তিনি নিরাপদে ও সুরক্ষিত পরিবেশে থাকার নিশ্চয়তা পাবেন।

দ্বিতীয়টা হলো— শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে ভারতেই রেখে দেওয়া।

তৃতীয়টা হলো— ভারতে কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষকদের একটা অংশ বিশ্বাস করেন কিছুদিন পরে উপযুক্ত পরিস্থিতি এলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ‘রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনে’র জন্যও ভারত চেষ্টা করতে পারে। কারণ দল বা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ এখনও ফুরিয়ে যায়নি এবং দলের সর্বোচ্চ নেত্রী হিসেবে তিনি দেশে ফিরে সংগঠনের হাল ধরতেই পারেন। 

শেখ হাসিনা ভারতেই রয়ে গেলে সেটা আগামী দিনে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। ফলে শেখ হাসিনার জন্য তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করাটাকেই যুক্তিযুক্ত মনে করছেন তারা। 

বিবিসি বলছে— ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ঢাকার কাছ থেকে যদি কোনো অনুরোধ আসে, সেটা যে কোনো না কোনো যুক্তিতে দিল্লি খারিজ করে দেবে তাও একরকম নিশ্চিত। 

বিবিসি জানতে পেরেছে, শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রস্তাব প্রথমেই বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার পর ইউএই (সংযুক্ত আরব আমিরাত), সৌদি আরব ও ইউরোপের দু-একটি ছোটখাটো দেশের সঙ্গে ভারত এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিল। 

যদিও এই সব আলোচনায় তেমন একটা অগ্রগতি হয়েছে বলে খবর নেই। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের আর একটি প্রভাবশালী দেশ কাতারের সঙ্গেও ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে কথাবার্তা শুরু করেছে বলে জানা যাচ্ছে।

পাশাপাশি এটাও ঠিক, শেখ হাসিনা নিজে এখনও কোনো দেশে ‘লিখিত আবেদন’ করেননি। তার হয়ে এবং তার মৌখিক সম্মতির ভিত্তিতে যাবতীয় কথাবার্তা ভারত সরকারই চালাচ্ছে। 

একান্ত প্রয়োজন হলে শেখ হাসিনাকে ভারতেই রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে রেখে দিতে যে ভারত যে দ্বিধা করবে না, সেই ইঙ্গিতও কিন্তু দিল্লিতে এখন পাওয়া যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে আসছে— তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামা, নেপালের রাজা ত্রিভুবন বীর বিক্রম শাহ বা আফগান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহের নাম। তারা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছিলেন।  

তেমনটা হলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে এর প্রভাব কী পড়বে সেটাও ভাবতে হবে ভারতকে। ১৯৫৯ সালে দালাই লামাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে ভারত-চীন সম্পর্কে যে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছিল, ৬৫ বছর পরও তার রেশ রয়ে গেছে। 

দিল্লিতে আইডিএসএ-র সিনিয়র ফেলো স্ম্রুতি পট্টনায়ক বলছেন, যে আন্দোলনের জেরে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে, তাতে একটা স্পষ্ট ভারত-বিরোধী চেহারাও ছিল। সেটা যেমন হাসিনা-বিরোধী আন্দোলন ছিল, তেমনি ছিল ভারত-বিরোধীও! এখন যদি সেই ভারতই তাকে আশ্রয় দেয় তাহলে বাংলাদেশে তা একটা ভুল বার্তা দেবে এবং সে দেশে ভারত-বিরোধী সেন্টিমেন্টকে অবশ্যই আরও উসকে দেবে।  সূত্র : বিবিসি বাংলা। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে