রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৭:৫৯:২৮

৪ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ নৌকাসহ ৭০ জেলে

৪ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ নৌকাসহ ৭০ জেলে

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : কক্সবাজারে শুক্রবারের তুলনায় গতকাল শনিবার বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। এ কারণে শহরে জলাবদ্ধ এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও নিম্নাঞ্চল এখনো প্লাবিত রয়েছে। এমনকি জেলা সদরসহ ৬ উপজেলার অন্তত শতাধিক গ্রাম পানিবন্দি রয়েছে।

এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ৮টি মাছ ধরার নৌকাসহ অন্তত ৭০ জেলে নিখোঁজের তথ্য জানিয়েছেন মালিকরা। এর মধ্যে তিনজনের মরদেহ সাগর উপকূলে ভেসে এসেছে।  

তবে জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে টানা ভারি বর্ষণে কক্সবাজারের ৩টি পৌরসভাসহ ৫টি উপজেলা যথাক্রমে টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়া ও কক্সবাজার সদর উপজেলাসহ ৩৩টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি হিসাবে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৫০০ লোক পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ৪৫ মেট্রিক টন চাল এবং পাহাড়ধসসহ পানিতে ডুবে ৪ জন নিহতের জন্য ৪ লাখ টাকা প্রদান করেছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানিয়েছেন, শুক্রবার বেলা ১২টা থেকে শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২১০ মিলিমিটার। এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা কক্সবাজারের ইতিহাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এর আগে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ৪৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল।

বৃষ্টি কমে যাওয়ায় কক্সবাজার শহরের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পর্যটন জোন কলাতলীর হোটেল-মোটেল এলাকার সকল সড়ক, সৈকত সংলগ্ন এলাকার মার্কেট এলাকা থেকে নেমে গেছে পানি। এ কারণে হোটেল-গেস্ট হাউজে শুক্রবার অলস সময় কাটানো পর্যটকরা শনিবার ইচ্ছামতো সৈকত উপভোগ করতে দেখা গেছে। 

এদিকে শহরের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়াসহ ৮টি নিম্নাঞ্চল এখনো পানিবন্দি রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার নারী কাউন্সিলর শাহীনা আকতার পাখি জানান, সাগর পাড়ের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়া এলাকার নিম্নাঞ্চল এখনো পানিতে নিমজ্জিত। সমুদ্রকূলের এসব এলাকার এখনো পানিবন্দি আছে অন্তত ৭/৮ হাজার ঘরবাড়ি।

উখিয়া, টেকনাফ ও রামু  উপজেলার অন্তত ৪০টির বেশি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি থাকার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। উখিয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হলদিয়াপালং ও জালিয়া পালং ইউনিয়নে। এই দুই ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ গত দুই দিন ধরে পানির নিচে বসবাস করছে। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্না হচ্ছে না অধিকাংশ ঘরে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভির হোসেন জানিয়েছেন, বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের জন্য বিভিন্ন এনজিও মাধ্যমেও সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে।

রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ইয়াছমিন আক্তার জানান, তার ইউনিয়নের রেজু নদীর পাশের গ্রামগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টিতে চকরিয়া-পেকুয়ার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ৮টি মাছ ধরার নৌকা নিখোঁজ থাকার তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ থাকা এসব ট্রলার ডুবে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু জেলে সাঁতার কেটে উপকূলে ফিরেছে। উদ্ধার হয়েছে সৈকতের নাজিরারটেক, পেঁচারদ্বীপ ও কলাতলী উপকূলে তিনজনের মরদেহ। ফলে এসব ট্রলারের আরো অন্তত ৭০ জেলে নিখোঁজ রয়েছে। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে